Dhaka ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজার পানি বন্ধ করে ইসরায়েল ‘গণহত্যা’ করছে : এইচআরডাব্লিউ

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশের সময় : ১২:৪০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১০২৯ জন সংবাদটি পড়েছেন

পানি সরবরাহব্যবস্থা বন্ধ করে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ তোলে মানবাধিকার সংস্থাটি। এ ছাড়া ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ১৮৪ পৃষ্ঠার প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্কভিত্তিক ওয়াচডগ বলেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যখন ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক আক্রমণ শুরু করেছিল, তখন থেকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্যের পরিচালক লামা ফাকিহ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি, ইসরায়েলি সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পানি বন্ধ করে দিয়ে তাদের হত্যা করছে।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভারপ্রাপ্ত ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের পরিচালক বিল ভ্যান এসভেল্ড আলজাজিরাকে বলেছেন, সংস্থাটি ১১৫ জনেরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং তদন্তের অংশ হিসেবে স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজ করেছি এবং আমরা চারটি বিষয় খুঁজে পেয়েছি, যা থেকে আমরা বুঝতে পারছি, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় পানির সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে।’

প্রথমত, ইসরায়েল থেকে গাজায় পানীয় পানি সরবরাহকারী পাইপলাইনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এরপর ইসরায়েল বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, যা গাজায় পানির পাম্প এবং রিজার্ভ চালু রাখতে প্রয়োজন। ফলে পানিশোধন প্ল্যান্ট, পানির কূপ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে।
বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এই সুবিধাগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে সৌর প্যানেল ছিল। ভ্যান এসভেল্ড বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তখন গাজার ছয়টি বর্জ্য পানি শোধনাগারের মধ্যে চারটিতে প্রবেশ করে এবং তার প্রত্যেকটি বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়।

শেষ পর্যন্ত তারা যেকোনো ধরনের মেরামত প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করেছে, প্রযুক্তিগত কর্মীদের হত্যা এবং মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোকে পানি-সম্পর্কিত সরঞ্জাম আনতে বাধা দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘এর মানে হলো-আপনি এমন পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করছেন, যা আপনি জানেন যে একটি জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশকে হত্যা করবে।’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গাজার ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন মাত্র ২ থেকে ৯ লিটার পানির অ্যাক্সেস পাচ্ছে, যা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৫ লিটারের ন্যূনতম সীমার নিচে। এর ফলে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে এবং মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই নীতি ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনে উল্লিখিত গণহত্যার কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন জীবনযাত্রার শর্ত আরোপ করেছে, যা তাদের শারীরিক ধ্বংস সাধনে পরিকল্পিত।
ইসরায়েল বারবার গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া এইচআরডাব্লিউর প্রতিবেদনের ফলাফলকে ভয়াবহ মিথ্যা বলে অভিহিত করেছে ইসরায়েল।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে গাজায়। তবে শান্তিপ্রক্রিয়ার নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এ যুদ্ধ থামায়নি নেতানিয়াহুর সরকার। বেশির ভাগ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং গাজা অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

সূত্র : আলজাজিরা

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

গাজার পানি বন্ধ করে ইসরায়েল ‘গণহত্যা’ করছে : এইচআরডাব্লিউ

প্রকাশের সময় : ১২:৪০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

পানি সরবরাহব্যবস্থা বন্ধ করে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ তোলে মানবাধিকার সংস্থাটি। এ ছাড়া ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ১৮৪ পৃষ্ঠার প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্কভিত্তিক ওয়াচডগ বলেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যখন ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক আক্রমণ শুরু করেছিল, তখন থেকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্যের পরিচালক লামা ফাকিহ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি, ইসরায়েলি সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পানি বন্ধ করে দিয়ে তাদের হত্যা করছে।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভারপ্রাপ্ত ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের পরিচালক বিল ভ্যান এসভেল্ড আলজাজিরাকে বলেছেন, সংস্থাটি ১১৫ জনেরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং তদন্তের অংশ হিসেবে স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজ করেছি এবং আমরা চারটি বিষয় খুঁজে পেয়েছি, যা থেকে আমরা বুঝতে পারছি, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় পানির সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে।’

প্রথমত, ইসরায়েল থেকে গাজায় পানীয় পানি সরবরাহকারী পাইপলাইনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এরপর ইসরায়েল বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, যা গাজায় পানির পাম্প এবং রিজার্ভ চালু রাখতে প্রয়োজন। ফলে পানিশোধন প্ল্যান্ট, পানির কূপ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে।
বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এই সুবিধাগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে সৌর প্যানেল ছিল। ভ্যান এসভেল্ড বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তখন গাজার ছয়টি বর্জ্য পানি শোধনাগারের মধ্যে চারটিতে প্রবেশ করে এবং তার প্রত্যেকটি বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়।

শেষ পর্যন্ত তারা যেকোনো ধরনের মেরামত প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করেছে, প্রযুক্তিগত কর্মীদের হত্যা এবং মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোকে পানি-সম্পর্কিত সরঞ্জাম আনতে বাধা দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘এর মানে হলো-আপনি এমন পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করছেন, যা আপনি জানেন যে একটি জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশকে হত্যা করবে।’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গাজার ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন মাত্র ২ থেকে ৯ লিটার পানির অ্যাক্সেস পাচ্ছে, যা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৫ লিটারের ন্যূনতম সীমার নিচে। এর ফলে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে এবং মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই নীতি ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনে উল্লিখিত গণহত্যার কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন জীবনযাত্রার শর্ত আরোপ করেছে, যা তাদের শারীরিক ধ্বংস সাধনে পরিকল্পিত।
ইসরায়েল বারবার গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া এইচআরডাব্লিউর প্রতিবেদনের ফলাফলকে ভয়াবহ মিথ্যা বলে অভিহিত করেছে ইসরায়েল।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে গাজায়। তবে শান্তিপ্রক্রিয়ার নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এ যুদ্ধ থামায়নি নেতানিয়াহুর সরকার। বেশির ভাগ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং গাজা অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

সূত্র : আলজাজিরা