পাংশা বিএডিসি অফিস
সেচ লাইসেন্স দিতে প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ, ভিডিও ভাইরাল
- প্রকাশের সময় : ০২:৪৫:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১০৭৩ জন সংবাদটি পড়েছেন
নিয়ম লঙ্ঘন করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নির্দিষ্ট সীমারেখা না মেনে সেচ লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সম্প্রতি পাংশা বিএডিসি কার্যালয়ে টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও দেখা গেছে। ভিডিওতে টাকা আদায়কারী ব্যক্তির নাম রাজু। তিনি নিজেকে ওই কার্যালয়ের গাড়ী চালক বলে দাবি করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে টাকা নিয়েছেন বলে জানান। তবে সহকারী প্রকৌশলী বলছেন, রাজু অফিসের কেউ না।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিএডিসি অফিসে রাজু এক গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। টাকা নেওয়ার আগে ওই গ্রাহককে বলছেন ব্যাংকে তিন হাজার টাকা আর লাইসেন্সের জন্য চার হাজার মোট সাত হাজার টাকা লাগবে। আগে লাইসেন্সের চার হাজার টাকা দেন। এরপর ওই গ্রাহক তাকে চার হাজার টাকা দেন। টাকা নেওয়ার পর লাইসেন্সের কাগজ ওই গ্রাহকের হাতে দিয়ে দেন।
ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে রাজু বলেন, তিনি বিএডিসিতে চালক পদে চাকরি করেন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে টাকা নিচ্ছেন সেটা কি আপনি? প্রশ্নে বলেন হ্যাঁ। কীসের টাকা নিচ্ছিলেন? লাইসেন্সের জন্য তিন হাজার টাকা জমা দেওয়ার জন্য নিয়েছিলাম। আপনি চালক হয়ে কেন টাকা নিচ্ছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা আমার স্যারকে জিজ্ঞাসা করেন। আমাকে না নিতে বললে তো আমি নিইনি। সাত হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তিন হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, একটি মটর থেকে আরেকটি মটর বসানোর দূরত্ব হবে কমপক্ষে ৮৫০ ফুট। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ব্যাংকে দুইশ টাকা জমার রশিদ দিয়ে সেচ অফিসে আবেদন করতে হয়। সেচ কর্মকর্তারা তদন্ত করে যোগ্য মনে করলে আবেদন গ্রহণ করবেন। এরপর গ্রাহক ব্যাংকে তিন হাজার টাকা জমা দিয়ে লাইসেন্স পাবেন।
অথচ নিয়মের তোয়াক্কা না করে ৮৫০ ফুট এলাকার মধ্যেই আকেজনকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। পাংশা উপজেলার কসবামাঝাইল ইউনিয়নের শান্তিখোলা গ্রামের বাসিন্দা শাহিন বিশ^াস জানান, তিনি ২০২৩ সালে বিএডিসি থেকে সেচ লাইসেন্সের অনুমতি পান। বর্তমানে সেচ যন্ত্রটি চালু আছে। অথচ পাংশা বিএডিসি থেকে ৮৫০ ফুটের মধ্যে অন্য একজনের সেচ লাইসেন্সের অনুমোদন দিয়েছে। যদিও বিএডিসির আইনে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে অন্য সেচ লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। বিষয়টি নিয়ে তিনি উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
একই অভিযোগ করেন ওই এলাকার লতিফ বিশ্বাস ও নাসির উদ্দিন। তারাও উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লতিফ বিশ্বাস বলেন, তার মোটর বসাতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিছুদিন আগে জানতে পারেন তিনশ ফুটের মধ্যে আরেকজন মোটর বসানোর আবেদন করেছেন। ৮৫০ ফুটের মধ্যে মটর বসলে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে ৩শ থেকে ৫শ ফুটের মধ্যে মটর বসানের অনুমতি দিচ্ছে বলে শুনেছেন। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একটা মটর বসাতে দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। তার পাশে আরেকটি মোটর বসালে তিনি খরচ তুলতে পারবেন না।
কালুখালী উপজেলার সাওরাইল গ্রামের কৃষক আবু বক্কর বলেন, বিএডিসি অফিস থেকে চার হাজার টাকা চেয়ে নিয়েছিল। বলেছিল চার হাজার টাকা দিয়ে দিবেন লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। ব্যাংকে কোন টাকা দিয়েছেন কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, শুধু বিএডিসি অফিসেই চার হাজার টাকা দিয়েছেন।
এবিষয়ে পাংশা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হাসান বলেন, লাইসেন্স দেওয়ার নিয়ম হলো একটি মোটর থেকে ৮৫০ ফুটের মধ্যে অন্য কোন লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। তবে সেচ কমিটি বিশেষ বিবেচনায় ৮শ ফুটের মধ্যেও লাইসেন্স অনুমোদন দিতে পারে। লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে হাতে টাকা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রথমে গ্রাহক আবেদনের সময় দুশ টাকা ব্যাংকে জমা দেবে। এরপর ওই ব্যাংকের রিসিভ ভাউচার আবেদনের সাথে দেবে। সেচ কমিটির তদন্তে যদি আবেদনকারী লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য হয় তাহলে তাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়ে থাকে। লাইসেন্স পাওয়ার আগে গ্রাহককে তিন হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, পাংশায় এধরনের দুটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে সরেজমিনে গিয়েছেন। তদন্ত করে ইউএনও সাহেবকে রিপোর্ট দেওয়া হবে। যে দূরত্ব দেখিয়েছে সেখানেই বসিয়েছে নাকি কাছাকাছি করেছে। তিনি আরও একবার সেখানে যাবেন। যদি কোনো সমস্যা থাকে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জমিতে বিভিন্ন জায়গায় পল্লী বিদ্যুতের পোল থাকে। পোল বাঁচানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে সরে গিয়ে কেউ কেউ মোটর বসায়। অনেক সময় গ্রাহক দেখায় এক জায়গায় কিন্তু প্রতারণা করে আরেক জায়গায় বসায়। এগুলোর কারণে মূলত মিসিং হয়। আমাদের গেজেটে বলা আছে কোনো গ্রাহক যদি সেচ কমিটির কাছে তথ্য গোপণ করে তাহলে তার লাইসেন্স সাময়িক বাতিল হবে।
রাজুর টাকা নেওয়ার ভিডিওটির প্রসঙ্গ তুলে এ প্রতিবেদক জানতে চান রাজু কী পদে চাকরি করতো? বলেন, রাজু আগে মাস্টার রোলে চাকরি করত। বর্তমানে নেই। অফিসে রাজুর টাকা নেওয়ার বিষয়ে বলেন, এ ধরনের কিছু আমার জানা নেই। গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার নির্দিষ্ট ফি আছে সেটাই নেবে। এর বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। রাজুকে সেখানে টাকা নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাকে কেন দায়িত্ব দেওয়া হবে। ভিডিও প্রসঙ্গে বলেন, যে ভিডিওটি আপনারা দেখেছেন সেটা ব্যাংকের তিন হাজার টাকা জমা দেওয়ার জন্য তার কাছে দিচ্ছিল। পরবর্তীতে সেই টাকা ফেরত নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিয়েছে। ওই একটা বিষয়ই ছিল। তাকে টাকা নেওয়ার কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
সেচ প্রকল্পের সভাপতি পাংশা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা এসএম আবু দারদা বলেন, সেচ লাইসেন্স প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছেন। এধরনের ছয়টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর তথ্য উপাত্তসহ অভিযোগকারীদের উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। সবকিছু দেখে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।