Dhaka ০৮:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তিন মাসে আটজন শনাক্ত

জিকা ভাইরাস এখন আতঙ্কের কারণ

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৪১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১০৪৪ জন সংবাদটি পড়েছেন

দেশে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে জিকা ভাইরাস। গত তিন মাসে আটজন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যেই নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে জিকা ভাইরাস নিয়ে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, জিকা ভাইরাস সংক্রমণ ১৯৪৭ সালে প্রথম উগান্ডার জিকা নামক বনাঞ্চলের বানরের মধ্যে শনাক্ত হয়। ১৯৫২ সালে উগান্ডা ও তানজানিয়ায় মানুষের মধ্যে প্রথম এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো এটি প্রধানত এডিস মশাবাহিত রোগ। পরে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে এ রোগটি আফ্রিকা ও এশিয়ার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাইক্রোনেশিয়ার ইয়াপ দ্বীপে ২০০৭ সালে প্রথম বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ব্রাজিলে ২০১৫ সাল থেকে চলে আসা জিকা প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা চলছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জিকার সঙ্গে শিশুর জন্মগত মাইক্রোসেফালি (ক্ষুদ্রতর মস্তিষ্ক) ও স্নায়ুর অবশজনিত রোগ (গিলেন-বারি সিনন্ড্রোম)-এর সম্পর্ক ধরা পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে ঘোষণা করেছে।

প্রাথমিকভাবে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবুপিক্টাস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ধরনের মশা সাধারণত দিনের বেলা (ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যার সময়) কামড়ায়। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের জন্যও এই মশাই দায়ী। আক্রান্ত পুরুষ রোগীর সঙ্গে অনিরাপদ যৌন সংসর্গ করলে (কনডম ব্যবহার না করলে) পুরুষ থেকে নারীদের মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে। গর্ভবতী নারী গর্ভের প্রথম তিন মাসের মধ্যে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, গর্ভের সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া জিকা ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ করলে এবং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার সময় অসাবধানতাবশত এ রোগ ছড়াতে পারে। এ রোগের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে স্বল্প মাত্রার জ্বর অথবা চামড়ায় লালচে দানার মতো ছোপ (র‌্যাশ) এবং এর সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখ লাল হওয়া (চোখের প্রদাহ), মাংসপেশিতে ব্যথা, গিটে গিটে ব্যথার মতো যেকোনো একটি উপসর্গ দেখা দিলে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। জানা যায়, এডিস মশাবাহিত জিকা রোগ বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) সংরক্ষিত রক্তের নমুনা পরীক্ষায় তা জানা যায়। জিকায় আক্রান্ত ওই রোগী ছিলেন চট্টগ্রামের। ২০১৭ সালে আইইডিসিআরের একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের মাধ্যমে বিষয়টি প্রথম জানা যায়। গত বছর পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল।

আইইডিসিআরের গবেষকরা ডেঙ্গু রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষার সময় জিকা ভাইরাস শনাক্ত করেছেন। অন্তত চারজনের নমুনা পরীক্ষায় জিকা শনাক্ত হয়েছে। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, গত দেড়-দুই মাসের নমুনা পরীক্ষায় জিকা শনাক্ত হয়েছে। জিকা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা রাজধানীর ধানমন্ডি, শ্যামলী ও বনানীর বাসিন্দা। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে পাওয়া মশার নমুনাতেও জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে। গত আড়াই মাসে আইসিডিডিআরবির সংক্রামক রোগ বিভাগের গবেষকরাও তাদের গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষায় জিকা রোগী শনাক্ত করেছেন। অন্তত চারজনের রক্তের নমুনা পরীক্ষায় জিকা শনাক্ত হয়েছে। আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির গবেষকরা গত তিন মাসে আটজনের জিকায় সংক্রমিত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে কী পরিস্থিতি তা জানা নেই। কারণ, ঢাকার বাইরের নমুনা আইসিডিডিআরবি বা আইইডিসিআর পরীক্ষা করেনি।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, জিকার কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, এর চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। জ্বর ও ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কাছের সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে বা রোগীকে ভর্তি করাতে হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

তিন মাসে আটজন শনাক্ত

জিকা ভাইরাস এখন আতঙ্কের কারণ

প্রকাশের সময় : ০৪:৪১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে জিকা ভাইরাস। গত তিন মাসে আটজন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যেই নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে জিকা ভাইরাস নিয়ে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, জিকা ভাইরাস সংক্রমণ ১৯৪৭ সালে প্রথম উগান্ডার জিকা নামক বনাঞ্চলের বানরের মধ্যে শনাক্ত হয়। ১৯৫২ সালে উগান্ডা ও তানজানিয়ায় মানুষের মধ্যে প্রথম এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো এটি প্রধানত এডিস মশাবাহিত রোগ। পরে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে এ রোগটি আফ্রিকা ও এশিয়ার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাইক্রোনেশিয়ার ইয়াপ দ্বীপে ২০০৭ সালে প্রথম বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ব্রাজিলে ২০১৫ সাল থেকে চলে আসা জিকা প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা চলছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জিকার সঙ্গে শিশুর জন্মগত মাইক্রোসেফালি (ক্ষুদ্রতর মস্তিষ্ক) ও স্নায়ুর অবশজনিত রোগ (গিলেন-বারি সিনন্ড্রোম)-এর সম্পর্ক ধরা পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে ঘোষণা করেছে।

প্রাথমিকভাবে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবুপিক্টাস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ধরনের মশা সাধারণত দিনের বেলা (ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যার সময়) কামড়ায়। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের জন্যও এই মশাই দায়ী। আক্রান্ত পুরুষ রোগীর সঙ্গে অনিরাপদ যৌন সংসর্গ করলে (কনডম ব্যবহার না করলে) পুরুষ থেকে নারীদের মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে। গর্ভবতী নারী গর্ভের প্রথম তিন মাসের মধ্যে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, গর্ভের সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া জিকা ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ করলে এবং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার সময় অসাবধানতাবশত এ রোগ ছড়াতে পারে। এ রোগের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে স্বল্প মাত্রার জ্বর অথবা চামড়ায় লালচে দানার মতো ছোপ (র‌্যাশ) এবং এর সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখ লাল হওয়া (চোখের প্রদাহ), মাংসপেশিতে ব্যথা, গিটে গিটে ব্যথার মতো যেকোনো একটি উপসর্গ দেখা দিলে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। জানা যায়, এডিস মশাবাহিত জিকা রোগ বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) সংরক্ষিত রক্তের নমুনা পরীক্ষায় তা জানা যায়। জিকায় আক্রান্ত ওই রোগী ছিলেন চট্টগ্রামের। ২০১৭ সালে আইইডিসিআরের একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের মাধ্যমে বিষয়টি প্রথম জানা যায়। গত বছর পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল।

আইইডিসিআরের গবেষকরা ডেঙ্গু রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষার সময় জিকা ভাইরাস শনাক্ত করেছেন। অন্তত চারজনের নমুনা পরীক্ষায় জিকা শনাক্ত হয়েছে। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, গত দেড়-দুই মাসের নমুনা পরীক্ষায় জিকা শনাক্ত হয়েছে। জিকা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা রাজধানীর ধানমন্ডি, শ্যামলী ও বনানীর বাসিন্দা। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে পাওয়া মশার নমুনাতেও জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে। গত আড়াই মাসে আইসিডিডিআরবির সংক্রামক রোগ বিভাগের গবেষকরাও তাদের গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষায় জিকা রোগী শনাক্ত করেছেন। অন্তত চারজনের রক্তের নমুনা পরীক্ষায় জিকা শনাক্ত হয়েছে। আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির গবেষকরা গত তিন মাসে আটজনের জিকায় সংক্রমিত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে কী পরিস্থিতি তা জানা নেই। কারণ, ঢাকার বাইরের নমুনা আইসিডিডিআরবি বা আইইডিসিআর পরীক্ষা করেনি।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, জিকার কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, এর চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। জ্বর ও ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কাছের সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে বা রোগীকে ভর্তি করাতে হবে।