ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে বিপাকে শত শত মানুষ
- প্রকাশের সময় : ০৭:৩৯:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২০
- / ১৩৫৪ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন॥ সরকারি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণহারে আঙ্গুলের ছাপ, আইরিশ ও স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি নিয়েছিলেন নাজমা বেগম নামে এক তরুণী। সম্প্রতি ওই সব তথ্য দানকারী বেশ কয়েকজনের নামে বিকাশ লিমিটেডের এক্সটারনাল এন্ড কর্পোরেট অ্যফেয়ার্স ডিভিশন থেকে এসেছে নোটিশ। হতদরিদ্র, সহজ সরল প্রকৃতির জোহরা বেগমের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে ঢাকার দক্ষিণখান থানায় জিডিও হয়েছে প্রতারণার অভিযোগে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর ও দাদশী ইউনিয়নের লক্ষীকোল গ্রামে। এই দুটি গ্রামের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক। তারা মনে করছেন, নাজমা বেগম তাদের কাছ থেকে তথ্য নেয়ায় অন্য কেউ সেসব ব্যবহার করে প্রতারণা করছে। আর নোটিশ আসছে তাদের নামে। অভিযুক্ত নাজমা বেগম একই গ্রামের বাসিন্দা। হয়রানী থেকে মুক্তি পেতে সোনাকান্দর ও লক্ষীকোল গ্রামের বাসিন্দারা গত ২৪ আগস্ট তারিখে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি জিডি করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর ও দাদশী ইউনিয়নের লক্ষীকোল গ্রাম দুটি পাশাপাশি। করোনা সংক্রমণের মধ্যে রোজার ঈদের শুরুর দিকে প্রতিবেশি নাজমা ট্যাব হাতে এই দুটি গ্রামের প্রতিটি বাড়ি গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ, আইরিশ ও স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি নিয়েছিলেন। সোনাকান্দর গ্রামের লিটন সরদারের স্ত্রী ফরিদা আকতার জানান, রোজার ঈদের শুরুর দিকে নাজমা একদিন এসে বলে; সরকারি সাহায্য দেয়া হবে। এজন্য আঙ্গুলের ছাপ, চোখের ছাপ ও স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি নিতে হবে। আমি ও আমার স্বামী সরল বিশ্বাসে দিয়ে দেই। গত ২০ আগস্ট তারিখে আমার স্বামীর নামে বিকাশ থেকে নোটিশ পাঠিয়েছে। কিন্তু এসম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। আমাদের তো বিকাশ একাউন্টই নেই। আমরা এখন খুবই ভয়ে আছি। জানা গেছে, এধরণের নোটিশ এসেছে সিরাজ মন্ডল, রমজান সরদারসহ আরও কয়েকজনের নামে।
১৩ আগস্ট ২০২০ তারিখে ইস্যুকৃত বিকাশ লিমিটেডের এক্সটারনাল এন্ড কর্পোরেট অ্যফেয়ার্স ডিভিশনের ম্যানেজার এক্সটার্নাল অ্যফেয়ার্স মো. মাসুকুর রহমান স্বাক্ষরিত এসব চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র (নং) দ্বারা নিবন্ধনকৃত বিকাশ একাউন্ট (মোবাইল নম্বর)তে গত ১ জুন ২০২০ তারিখে কিছু টাকা পাঠানো হয়। যা আপনার প্রাপ্য নয় বলে বিকাশ লিমিটেডের কাছে অভিযোটগ এসেছে। সাত দিনের মধ্যে আপনাকে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে বলা হল।’ যেসব নাম্বার উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তার কয়েকটিতে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
সবগুলো নোটিশের বক্তব্য একই রকম। গত ২০ আগস্ট তারিখে রেজিস্ট্রিকৃত ডাকযোগে তারা নোটিশ পেয়েছেন বলে জানান।
সাংবাদিক দেখে ছুটে আসা শত শত মানুষ জানায়, তারা সকলেই খুব ভয়ে আছে। এর প্রতিকার চান তারা। কেউ যেন হয়রানীর শিকার না হয় এমন দাবি তাদের।
এদিকে এধরণের প্রতারণার অভিযোগে সোনাকান্দর গ্রামের জোহরা বেগমের বিরুদ্ধে ঢাকার দক্ষিণ খান থানায় জিডি হয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েক দিন আগে রাজবাড়ী সদর থানার পুলিশ তার বাড়িতে আটক করতে গিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। জোহরা বেগম পদ্মা নদী তীরবর্র্তী শহর রক্ষা বেরি বাঁধের পাশে একটি খুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। তার স্বামী নদীতে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করেন। অক্ষরজ্ঞানহীন, সহজ সরল একজন নারী জোহরা বেগম। সবার মত তারও আঙুলের ছাপ, আইরিশ এবং স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি নিয়েছিলেন নাজমা। জোহরা বেগম জানান, তার নিজের কোনো মোবাইল ফোন নেই। হঠাৎ করে পুলিশ তার বাড়িতে আসায় তিনি ভয় পেয়ে যান। এলাকার মানুষের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। বিকাশে লেনদেন নিয়েও কোনো ধারণা নেই তার। পুলিশ আটক করতে আসার পর এক স্বজনের সাথে ফরিদপুর বিকাশ অফিস গিয়ে জানতে পারেন তার নামে তিনটি সীম তোলা হয়েছে। এসব কীভাবে হলো? প্রশ্ন করেন তিনি।
এসব ব্যাপারে অভিযুক্ত নাজমা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আগে নগদের মাঠ কর্মী ছিলাম। নগদ হিসাব খোলার জন্য এসব নিয়েছি। তবে কাউকে সরকারি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেইনি। আর কেন তারা নোটিশ পাচ্ছেন সে বিষয়েও কিছু জানিনা।
মিজানপুর ইউপি চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান রহমান জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এলাকার মানুষ যাতে হয়রানী না হয় সেজন্য যেটা করণীয় সেটাই করবেন।
রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার জানান, জোহরা বেগমের বিরুদ্ধে ঢাকার দক্ষিণ খান থানায় জিডি হয়েছে। কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিট সেটির তদন্ত করার জন্য জোহরা বেগমকে নোটিশ পাঠিয়েছিল। রাজবাড়ী সদর থানার পুলিশ ওই নোটিশই দিতে গিয়েছিল জোহরা বেগমকে।
রাজবাড়ীর সোনাকান্দর ও লক্ষীকোল গ্রামের মানুষের পক্ষে জিডি বিষয়ে জানান, পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, সরকারি আড়াই হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতিতেই আঙুলের ছাপসহ অন্যান্য তথ্য নেয়া হয়েছিল।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান জানান, অফিসিয়ালি এধরণের অভিযোগ কেউ করেনি। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।