রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে সামনে রেখে ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রদল মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল এ ইশতেহার প্রকাশ করে।

ইশতেহার পাঠ করেন ভিপি (সহসভাপতি) পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন এবং এজিএস (সহকারী সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা।

ইশতেহারে বলা হয়, “ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম” ক্যাম্পাসকে একটি আধুনিক, নিরাপদ, প্রযুক্তিনির্ভর ও মুক্তচিন্তার শিক্ষার পরিবেশে পরিণত করতে কাজ করবে। তারা ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ ড. শামসুজ্জোহা স্যারের দিনটিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানায়।

প্যানেলটি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে একাডেমিক উৎকর্ষ নিশ্চিত করা, সেশনজট নিরসন, সময়মতো ফল প্রকাশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ১০ শতাংশ গবেষণাখাতে বরাদ্দ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। পাশাপাশি গবেষকদের জন্য ফেলোশিপ ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়।

ইশতেহারে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স ও নিয়মিত জব ফেয়ার আয়োজনের কথা উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সেবা উন্নয়ন, সেমিনার লাইব্রেরিতে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ এবং স্টারলিংক স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুতগতির ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক স্থাপনের পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাইবার বুলিং, যৌন হয়রানি ও লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিরোধে শক্তিশালী সেল গঠনের অঙ্গীকার করে প্যানেলটি। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসিটিভি স্থাপন, রাস্তাঘাট সংস্কার, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও বহিরাগত মোটরবাইক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগও ইশতেহারে রয়েছে।

চিকিৎসা সেবা উন্নয়নে ২৪ ঘণ্টা অন-ক্যাম্পাস ফার্মেসি, মেডিকেল সেন্টারে জরুরি চিকিৎসা ইউনিট, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য তহবিল গঠন এবং মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত কাউন্সেলিং সেবা চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

নারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক নামাজঘর, কমনরুম, ব্রেস্টফিডিং কর্নার, নারী জিমনেসিয়াম পুনরায় চালু, বিনা মুনাফায় ঋণ প্রদান ও লিফট–বিশেষ ওয়াশরুম স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়।

ধর্মীয় সহাবস্থান ও সাংস্কৃতিক বিকাশে প্রতিটি হলে প্রার্থনাকক্ষ, কেন্দ্রীয় প্যাগোডা নির্মাণ, নিয়মিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি কার্যকর করার উদ্যোগের কথাও ইশতেহারে বলা হয়।

খাবারের মান উন্নয়ন, বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা ও ক্যান্টিনে অভিন্ন মূল্যতালিকা প্রণয়ন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশন সচল করা, শিক্ষার্থীদের জন্য ডিসকাউন্ট টিকিট এবং ক্যাম্পাস বাসের রুট ও ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও এতে অন্তর্ভুক্ত।

ইশতেহার পাঠ শেষে ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, “প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা পাশে থাকলে এক বছরের মধ্যেই এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েই এই ইশতেহার তৈরি করেছি এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”