Dhaka ০৯:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিতর্ক এবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি নিয়ে

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশের সময় : ০২:৪৭:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 64

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে পাশ কাটিয়ে ও না জানিয়েই ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়ে পুরস্কার কমিটির জুরি বোর্ড গঠন করাতে লেখক, পাঠক এবং সুধীজনদের বিতর্কের সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে পড়েছে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ কমিটি। ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিতদের নাম পুরস্কারের তালিকায় ঘোষণা হওয়ার পর লেখক, পাঠক ও নেটিজেনদের সমালোচনা এবং বিতর্কের মুখে পড়ে ২৩ জানুয়ারি ঘোষিত পুরস্কার তালিকাটি স্থগিত করতে বাধ্য হয় বাংলা একাডেমি। পুরস্কারের জন্য নির্বাচিতদের নিয়ে বিতর্ক শেষ না হতেই এবার খোদ পুরস্কার কমিটি নিয়েই বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় বইছে সাহিত্যাঙ্গনে। বিতর্কিত কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ পাঠক, লেখকসহ সাহিত্যাঙ্গনের সুধীমহল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও ফ্যাসিবাদের দোসররা ঠিকই স্থান পেয়েছে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর কমিটিতে। যার কারণে এবারের পুরস্কারে স্থান পাওয়া বেশির ভাগই ছিল ফ্যাসিবাদের দোসর লেখকরা। বিক্ষুব্ধ লেখক সমাজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে ঘোষিত পুরস্কার তালিকা স্থগিত করলেও বাদ পড়েনি কমিটিতে থাকা জুরিরা। একটি বিশেষ দৈনিক পত্রিকার প্রভাব এবারের পুরস্কারকে বিতর্কিত করেছে বলে মনে করেন সুধীজন ও লেখক সমাজের অনেকে। ওই পত্রিকাটির সিনিয়র সাংবাদিক, পুরস্কার কমিটি ও বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য থাকায় তার অনুগতদের দিয়ে তিনি পুরস্কার কমিটি সাজিয়েছেন বলে অভিযোগ বেশ কয়েকজন বিদগ্ধ লেখকসহ একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রের।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অন্তর্র্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ফ্যাসিবাদের দোসর একটি বিশেষ পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক সাজ্জাদ শরীফ, সাহিত্যাঙ্গনে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত মোরশেদ শফিউল হাসান, ফ্যাসিবাদের সঙ্গী খলিকুজ্জামান ইলিয়াস, শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রকাশক ইউপিএলর মাহরুখ মহিউদ্দিনের স্বামী ও সূত্রাপুর আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ আহমেদকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর কমিটিতে রেখে বাংলা একাডেমি পরোক্ষভাবে ফ্যাসিস্টদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলে জানিয়েছেন লেখক মোস্তফা মজিদ।

পুরস্কারের বিতর্কিত এ কমিটিতে বয়সে তরুণ ও সাহিত্যে অনভিজ্ঞ জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগমকে রাখাতে পুরস্কারের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেও মনে করেন মোস্তফা মজিদ।

তিনি আরও বলেন, বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক সজ্জন ব্যক্তি হওয়াতে তাকে পাশ কাটিয়েই বিতর্কিত এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর লেখক সমাজ প্রতিবাদে সোচ্চার। এমনকি বিতর্ক তৈরি হয়েছে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝেও।

শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর পোশাক’, ‘শেখ হাসিনার শাসনামল (প্রথম খন্ড) (১৯৯৬-২০০১)’, ‘শতাব্দীর বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী-একটি তুলনামূলক আলোচনা’, ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’ বইগুলো রচনা করার কারণে ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর ড. মোহাম্মদ হান্নানকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়েছিল বলেও মনে করেন মোস্তফা মজিদ।

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে পাশ কাটিয়ে ও না জানিয়ে গঠিত এ পুরস্কার কমিটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও বাংলা একাডেমিতে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। বাংলা একাডেমি থেকে ফ্যাসিবাদের ঘাঁটি নির্মূল করতে না পারলে স্বৈরাচারের দোসররা দিনে দিনে আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তাই আগে বাংলা একাডেমিকে সংস্কার করতে হবে। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে গঠিত বিতর্কিত কমিটি ও ২৩ জানুয়ারি ঘোষিত পুরস্কারের তালিকাই প্রমাণ করল বাংলা একাডেমিতে ফ্যাসিবাদের দোসররা শক্তভাবে ঘাপটি মেরে বসে আছে। সুযোগ পেলেই তারা ছোবল মারবে। তাই সাবধান হতে হবে এখনই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা একাডেমির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা পালিয়ে গেলেও ফ্যাসিবাদের দালালরা এখনো বাংলা একাডেমিতে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা না থাকলে পুরস্কার কমিটি ও পুরস্কার নিয়ে এত বিতর্ক তৈরি হতো না।

পুরস্কার কমিটির বিতর্ক নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, পুরস্কার কমিটি কবে, কীভাবে গঠন হলো আর কমিটিতে কারা কারা ছিল এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে কেউ আমার কাছ থেকে পরামর্শও জানতে চায়নি।

মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের কাছে কমিটি নিয়ে তৈরি সমালোচনা ও বিতর্কের বিষয় জানতে চাইলে একাধিকবার কল দেওয়ার পরেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

বিতর্ক এবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি নিয়ে

প্রকাশের সময় : ০২:৪৭:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে পাশ কাটিয়ে ও না জানিয়েই ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়ে পুরস্কার কমিটির জুরি বোর্ড গঠন করাতে লেখক, পাঠক এবং সুধীজনদের বিতর্কের সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে পড়েছে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ কমিটি। ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিতদের নাম পুরস্কারের তালিকায় ঘোষণা হওয়ার পর লেখক, পাঠক ও নেটিজেনদের সমালোচনা এবং বিতর্কের মুখে পড়ে ২৩ জানুয়ারি ঘোষিত পুরস্কার তালিকাটি স্থগিত করতে বাধ্য হয় বাংলা একাডেমি। পুরস্কারের জন্য নির্বাচিতদের নিয়ে বিতর্ক শেষ না হতেই এবার খোদ পুরস্কার কমিটি নিয়েই বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় বইছে সাহিত্যাঙ্গনে। বিতর্কিত কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ পাঠক, লেখকসহ সাহিত্যাঙ্গনের সুধীমহল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও ফ্যাসিবাদের দোসররা ঠিকই স্থান পেয়েছে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর কমিটিতে। যার কারণে এবারের পুরস্কারে স্থান পাওয়া বেশির ভাগই ছিল ফ্যাসিবাদের দোসর লেখকরা। বিক্ষুব্ধ লেখক সমাজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে ঘোষিত পুরস্কার তালিকা স্থগিত করলেও বাদ পড়েনি কমিটিতে থাকা জুরিরা। একটি বিশেষ দৈনিক পত্রিকার প্রভাব এবারের পুরস্কারকে বিতর্কিত করেছে বলে মনে করেন সুধীজন ও লেখক সমাজের অনেকে। ওই পত্রিকাটির সিনিয়র সাংবাদিক, পুরস্কার কমিটি ও বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য থাকায় তার অনুগতদের দিয়ে তিনি পুরস্কার কমিটি সাজিয়েছেন বলে অভিযোগ বেশ কয়েকজন বিদগ্ধ লেখকসহ একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রের।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অন্তর্র্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ফ্যাসিবাদের দোসর একটি বিশেষ পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক সাজ্জাদ শরীফ, সাহিত্যাঙ্গনে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত মোরশেদ শফিউল হাসান, ফ্যাসিবাদের সঙ্গী খলিকুজ্জামান ইলিয়াস, শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রকাশক ইউপিএলর মাহরুখ মহিউদ্দিনের স্বামী ও সূত্রাপুর আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ আহমেদকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর কমিটিতে রেখে বাংলা একাডেমি পরোক্ষভাবে ফ্যাসিস্টদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলে জানিয়েছেন লেখক মোস্তফা মজিদ।

পুরস্কারের বিতর্কিত এ কমিটিতে বয়সে তরুণ ও সাহিত্যে অনভিজ্ঞ জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগমকে রাখাতে পুরস্কারের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেও মনে করেন মোস্তফা মজিদ।

তিনি আরও বলেন, বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক সজ্জন ব্যক্তি হওয়াতে তাকে পাশ কাটিয়েই বিতর্কিত এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর লেখক সমাজ প্রতিবাদে সোচ্চার। এমনকি বিতর্ক তৈরি হয়েছে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝেও।

শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর পোশাক’, ‘শেখ হাসিনার শাসনামল (প্রথম খন্ড) (১৯৯৬-২০০১)’, ‘শতাব্দীর বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী-একটি তুলনামূলক আলোচনা’, ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’ বইগুলো রচনা করার কারণে ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর ড. মোহাম্মদ হান্নানকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়েছিল বলেও মনে করেন মোস্তফা মজিদ।

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে পাশ কাটিয়ে ও না জানিয়ে গঠিত এ পুরস্কার কমিটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও বাংলা একাডেমিতে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। বাংলা একাডেমি থেকে ফ্যাসিবাদের ঘাঁটি নির্মূল করতে না পারলে স্বৈরাচারের দোসররা দিনে দিনে আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তাই আগে বাংলা একাডেমিকে সংস্কার করতে হবে। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে গঠিত বিতর্কিত কমিটি ও ২৩ জানুয়ারি ঘোষিত পুরস্কারের তালিকাই প্রমাণ করল বাংলা একাডেমিতে ফ্যাসিবাদের দোসররা শক্তভাবে ঘাপটি মেরে বসে আছে। সুযোগ পেলেই তারা ছোবল মারবে। তাই সাবধান হতে হবে এখনই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা একাডেমির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা পালিয়ে গেলেও ফ্যাসিবাদের দালালরা এখনো বাংলা একাডেমিতে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা না থাকলে পুরস্কার কমিটি ও পুরস্কার নিয়ে এত বিতর্ক তৈরি হতো না।

পুরস্কার কমিটির বিতর্ক নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, পুরস্কার কমিটি কবে, কীভাবে গঠন হলো আর কমিটিতে কারা কারা ছিল এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে কেউ আমার কাছ থেকে পরামর্শও জানতে চায়নি।

মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের কাছে কমিটি নিয়ে তৈরি সমালোচনা ও বিতর্কের বিষয় জানতে চাইলে একাধিকবার কল দেওয়ার পরেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন