১৩ বছর পর সন্তানদের বুকে জড়ালেন সৌদি ফেরত মালেকা
- প্রকাশের সময় : ০৯:১৩:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / 55
ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে ১৯ বছর আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের মালেকা খাতুন। কিন্তু নিয়োগকর্তার শোষণ-অবিচারে গত ১৩ বছর ধরে বারবার চেষ্টা করেও দেশে ফিরতে পারেননি। যে সন্তানদের জন্য তার যাওয়া সেই সন্তানদের আর দেখা হচ্ছিল না। অবশেষে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহায়তায় দেশে ফিরে সন্তানদের জড়িয়ে ধরলেন তিনি। মা সন্তানদের কান্নায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অন্যরকম আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
মালেকা খাতুন জানান, সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ আর পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচাতে ২০০৬ সালে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন সৌদি আরবের জেদ্দায়। দালাল বলেছিল অনেক বেতন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন মরুভূমিতে ছাগল চড়ানোর মতো পরিশ্রমের কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু বেতন অপ্রত্যাশিত কম। তারপরও নিজের এবং ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি অল্প বেতনেই কাজ করতে থাকেন। একবার দেশে আসতে পারলেও গত ১৩ বছর ধরে তাকে দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছিল না।
মাকে ফেরাতে তার দুই সন্তান সোনিয়া ও স্বপন গত ১৩ বছরে নানা জায়গায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। মালেকা খাতুন একেবারে চলে আসতে চাইলেও পাসপোর্ট-কাগজপত্র নিয়োগকর্তা আটকে রাখায় তিনি ফিরতে পারেননি। এসময় অভিবাসন নিয়ে কাজ করা এক সাংবাদিক সাইফুল রাজিবের মাধ্যমে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের আটকে পড়া বাংলাদেশিদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সেবা সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর মায়ের প্রত্যাবাসনের জন্য আসেন আশকোনায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্লাটফর্ম) শরিফুল হাসান জানান, ‘মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের কর্মীরা পরিবারের কাছ থেকে বিস্তারিত সব তথ্য জানার পর শুরু করেন মালেকা খাতুনকে দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ। এজন্য দূতাবাস, ইমিগ্রেশনসহ সৌদি আরবের নানা দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়। সবার চেষ্টায় এক মা ফিরে এসেছেন তার সন্তানদের কাছে।’
১৩ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর দুই সন্তানের সাথে মায়ের এই মিলনের মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এভসেক সিকিউরিটি ম্যানেজার স্কোয়াড্রন লিডার রাসেল তালুকদার। তিনি বিদেশ ফেরতদের বিমানবন্দরে সহায়তা ও আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারে ব্র্যাকের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্র্যাকসহ সবাই মিলে কাজ করছি যাতে বিমানবন্দরে প্রবাসীরা সর্বোচ্চ সেবাটা পান। আমরা সবাই মিলে সেটি নিশ্চিত করবো।’
মাকে ১৩ বছর পরে ফিরে পেয়ে আপ্লুত সোনিয়া খাতুন বলেন, “আমরাতো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আমিতো ভাবিনি যে মাকে আর আমরা দেখতে পারবো। আজ ব্র্যাক আর সাইফুল ভাইয়ের কারণে আমরা মাকে ফিরে পেয়েছি। আমরা আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ।”
বিমানবন্দরের বিদেশ ফেরতদের জরুরি সহায়তায় দিতে গত আট বছর ধরে কাজ করছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার। সিভিলে এভিয়েশন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, এপিবিএনসহ সবার সহযোগিতায় গত আট বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে নানা ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই ৪০ জন প্রবাসীকে বিশ্বের নানা দেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার ও মানবপাচার বিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রেখে যুক্তরাষ্ট্রের টিআইপি হিরো-২০২৪ পুরস্কারে ভূষিত আল-আমিন নয়ন ও মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা রায়হান কবিরসহ একটি টিম এই কাজে যুক্ত আছেন।
আল-আমিন নয়ন বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কারণে বাংলাদেশিরা আটকে পড়েন। আমরা বিপদে থাকা এই মানুষদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে থেকেই তাঁদের উদ্ধার করার কাজটা করছি। ২০২৪ সালেই আমরা ৪০ জন প্রবাসীকে বিশ্বের নানা দেশ থেকে উদ্ধার করেছি। এ কাজে আমরা সরকারের প্রতিটি দপ্তর, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবী নানা সংগঠনের কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছি। প্রবাসে সংকটে আছেন এমন যে কেউ ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো।’