বুধবার চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা হবে
জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্তে বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক
- প্রকাশের সময় : ১০:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
- / 6
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সাথে একটি সর্বদলীয় বৈঠক করবে সরকার। এদিনই ঠিক করা হবে ঘোষণাপত্রটি কবে ঘোষণা করা হবে- এমনটাই জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘আশা করি, আগামী পরশু বৃহস্পতিবার এই বৈঠকের ভেতর দিয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি দলিল প্রণীত হবে। সেদিনই স্পষ্ট হবে কবে ঘোষণাপত্রটি জারি করব এবং সরকার কিভাবে ঘোষণাপত্র জারির করার বিষয়ে ভূমিকা রাখবে।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আপনারা জানেন, গত ৩১ ডিসেম্বর ছাত্রদের নেতৃত্বে জুলাই ঘোষণাপত্র দেয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে সরকার সবার সাথে কথা বলে ঘোষণাপত্র দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। গত ১২-১৩ দিন ছাত্রদের ঘোষণাপত্র অবলম্বনে আমরা খসড়া একটি ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি। বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন নারী, শিক্ষক সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আমরা কথা বলেছি। তাদের সাথে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি যে ঘোষণাপত্রের বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন। ঘোষণাপত্রটি কবে এবং এর ভেতরে কী কী কনটেন্ট থাকবে, এ বিষয়ে এখনো আমরা ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার আশা করি সবাই মিলে সর্বদলীয় একটি বৈঠক হবে। বৈঠকের স্থান এখনো নির্ধারণ হয়নি, তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের বক্তব্য পেয়েছি যে এভাবে (সর্বদলীয় বৈঠক) করা সম্ভব। আশা করছি, বৃহস্পতিবার এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে একটি দলিল প্রণীত হবে। কবে ঘোষণাপত্রটি জারি হবে, সরকার এ বিষয়ে কিভাবে ভূমিকা রাখবে, সেদিনই এ বিষয়ে স্পষ্ট হবে। আশা করছি, বাংলাদেশের জনগণ এবং যাদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সেই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও প্রত্যাশা প্রতিফলিত হবে। সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মতামত নিয়ে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এই ঘোষণাপত্রটি প্রচারিত হবে।’
অন্যদিকে, প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন এবং দুদক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ জমা পড়বে বুধবার।
চারটি সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, প্রতিবেদনগুলো হস্তান্তরের পর তা নিয়ে আলাপ হবে। মূল জিনিসটা ওনারা বলবেন, কী কী ফাইন্ডিংস আছে, কী কী বিষয় আছে সে বর্ণনা থাকবে। সভাটি শেষ হলে কয়েকজন উপদেষ্টা ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার ৩টায় ব্রিফ করে পুরো জিনিসটা জানাবেন।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রতিবেদন নিয়ে সংলাপ হবে। তবে কী পয়েন্টগুলো আপনাদের (সাংবাদিক) অবশ্যই জানানো হবে।’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। অভিমত নেয়ার চেষ্টা করেছি। সবার সাথে কথা বলা হয়ে উঠেনি।’
ঘোষণাপত্রের খসড়া কোন কোন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে এমন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, ‘এটি অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেকগুলো গ্রুপের সাথে কথা বলেছি। বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার, গণসংহতির মাধ্যমে গণতন্ত্র মঞ্চের কাছে পাঠিয়েছি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি পক্ষের কাছে পৌঁছিয়েছি। এটা গত তিন-চার দিন আগে পৌঁছানো হয়েছে। তাদের মন্তব্যও পেয়েছি। সেখানে ঘোষণাপত্রের বেশিভাগ ক্লজে ওনারা একমত। কয়েকটা বিষয়ে দ্বিমত আছে। সেটা পার্টি, ফোরাম ও বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হতে চাচ্ছেন। এবং ওনারা নিজেরাও প্রস্তাব দিতে চাচ্ছেন। তাই আমরা মনে করি, সর্বদলীয় বৈঠক হলে শিক্ষার্থীরা সম্মতি দিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এটা করা হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা যাবে ও ফলপ্রসু হবে।’
দ্বিমতের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলছেন জানিয়ে মাহফুজ আলমে বলেন, ‘তাদের দ্বিমতের জায়গাগুলো নিয়ে আমরা এখনো পরিষ্কার না। সেটা আলোচনা সাপেক্ষে জানতে পারব।’
ঘোষণাপত্র নিয়ে জাতীয় পার্টির কোনো পরামর্শ নেয়া হবে না জানিয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, ‘তাদের পরামর্শ যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় বলে মনে করছি না।’
গণঅভ্যুত্থানের সাথে জড়িত বামপন্থী দলগুলোর সাথে ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘গণঅভ্যূত্থানের পক্ষের শক্তি এবং স্পষ্ট অবস্থান ছিল তাদের সবার সাথে কথা বলার চেষ্টা করব। তাদের প্রতিনিধি যাতে থাকে সেই চেষ্টা করব।’
জুলাই ঘোষণাপত্র কোন ব্যানারে আসবে এমন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, ‘৩ ও ৫ আগস্ট যেভাবে কোনো ব্যানার ছাড়া জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিল। সেই অবস্থাটা আমরা রিক্রেয়েট করতে চাচ্ছি। আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টাসহ সব রাজনৈতিক দল উপস্থিত থাকবেন। ৫ আগস্ট কিংবা এর দু’দিন পরে ঘোষণাপত্র দিতাম, যে মোমেন্ট হতো, সেটা ক্রিয়েট করতে চাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সব রাজনৈতিক দল থাকবে।’
বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আজকে (মঙ্গলবার) এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দিয়েছেন। সেটা দেখে মনে হয় উনি ইতিবাচক আছেন। তবে ওনারা সময় নিতে পারেন। কিন্তু দুই পৃষ্ঠা বা তিন পৃষ্ঠার বিষয়ে পর্যালোচনা নিয়ে এমন সময় নিতে না হয় যাতে অন্যদের ভেতরে উত্তেজনা বা সংশয় তৈরি হয়। সবাইকে সংযমে যেতে হবে। শিক্ষার্থীরা একটা ডেটলাইন দিয়েছে। এতে তো সরকার চাপ অনুভব করছে। আমরা মনে করি, ওনারা সব পর্যালোচনা করে আগামী পরশু (বৃহস্পতিবার) আমাদের সাথে বসেন। কথা বললে স্পষ্ট হয়ে যাবে আমরা কোথায় দাঁড়াতে চাচ্ছি। কতটুকু কাটছাট বা যোগ-বিয়োগ হবে। আমরা মনে করি, এটা হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার আমরা জানতে পারব এটার ভেতরে কী আছে, কী হবে।’
ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত হবে কিনা এমন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, ‘ঘোষণপত্র অবলম্বনে একটি আইনি ডুকেমেন্ট তৈরি করার বিষয়টি সরকারের পর্যালোচনা আছে। এ ঘোষণাপত্রকে ধরে একটি আইনি ডুকেমেন্ট তৈরি করব সরকারের ন্যায্যতা ও সবকিছু মিলিয়ে। এটা অনেক আগে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জনগণ থেকে আসার আগে করতে পারছি না। সবাই মিলে যেটা ঘোষণাপত্র আসবে সেটার সূত্র ধরে করব।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানে যুক্ত করার বিষয়টি গণপরিষদ বা সংবিধান সংশোধনী হতে শুরু করে সবকিছুর ওপর নির্ভর করবে। জনগণ যদি আমাদের এ দায়িত্ব দেয় তাহলে আমরা করব। আর পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে এটা দায়বদ্ধতা থাকবে বলে আমরা মনে করি। আগামী নির্বাচনে যারাই নির্বাচিত হবেন তারা গণঅভ্যূত্থানের শক্তি হবে এবং ঘোষণাপত্রকে ধারণ করে জনগণের কাছে যাবেন।’