মামলার তদন্তে পুলিশ নয়, আলাদা সংস্থার প্রস্তাব কমিশনের
- প্রকাশের সময় : ১২:১২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
- / 7
ফৌজদারি মামলা তদন্তে থানা পুলিশ নয়, আলাদা সংস্থার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। রাজনীতিমুক্ত রাখতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয় নিয়েও কমিশনের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তাঁরা একমত হতে পারেননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশের পরিবর্তে আলাদা সংস্থাকে দায়িত্বের প্রস্তাববর্তমান ব্যবস্থায় চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, প্রতারণা, জালিয়াতি ও মিথ্যা সাক্ষ্যদানের মতো ফৌজদারি মামলার তদন্ত করে থানা পুলিশ।
এই তদন্তকে কেন্দ্র করে ঘুষ-দুর্নীতি, প্রভাব বিস্তার, হয়রানির মতো অভিযোগ বহু পুরনো। সেসব অভিযোগ থেকে পুলিশকে মুক্ত রাখতেই এমন প্রস্তাব বলে জানা গেছে। পুলিশকে ‘মানবিক পুলিশ’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যও থাকছে বেশ কটি সুপারিশ।
গত ৩ অক্টোবর পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠনের পর থেকেই এর প্রধান ও সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এরই মধ্যে একটি প্রতিবেদনের খসড়া দাঁড় করিয়েছেন।
সেটি এ সপ্তাহেই চূড়ান্ত করে আগামী ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার হাতে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে কমিশন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আরো পড়ুন
পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠনের পর গত ৩১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং ওই কমিশনের সদস্যসচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত ‘কেমন পুলিশ চাই’ শিরোনামে জনমত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
১৫ নভেম্বরের মধ্যে ২৪ হাজার ৪৪২ জন মতামত দেন। এতে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চান ৮৯.৫ শতাংশ উত্তরদাতা।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ চান ৭৭.৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে চরম মানবিকতার লঙ্ঘন বিবেচনায় অপরাধী পুলিশকে জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনার পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৪.৯ শতাংশ উত্তরদাতা। ভুয়া বা গায়েবি মামলার অপসংস্কৃতির সংস্কার চান ৯৫ শতাংশ উত্তরদাতা। ভুয়া বা গায়েবি মামলার ভয়ভীতির মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা চান ৮১.৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
এ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি, অনিবাসী বা নিরপরাধ ব্যক্তির নামে অভিযোগ দায়েরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চান ৭৪.৫ শতাংশ।
তবে সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা সংস্কার করে থানার ওসির কাছে প্রাক-যাচাইয়ের আইনগত ক্ষমতা প্রদান সমর্থন করেছেন ৬৯.২ শতাংশ উত্তরদাতা।
কমিশনের এক সদস্য কালের কণ্ঠকে জানান, মতামতগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনার মধ্যে থাকছে ফৌজদারি মামলার তদন্ত থানা পুলিশকে দিয়ে না করিয়ে একটি আলাদা সংস্থা দিয়ে করানোর ব্যবস্থার বিষয়ে। থানা পুলিশ শুধুই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।
আর তদন্তের জন্য গঠিত সংস্থার কাজ হবে শুধুই তদন্ত। এতে তদন্ত কর্মকর্তাকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে হবে না। ফলে তদন্তের গুণগত মানও বাড়বে। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে তদন্ত করায় বিচারপ্রার্থী পাবেন সুবিচার। এ ছাড়া পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন নিয়েও কমিশনে আলোচনা চলছে। তবে সেটি চূড়ান্ত হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সংস্কার কমিশনের এক সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রধান টার্গেটই হচ্ছে কিভাবে মানবিক পুলিশ তৈরি করা যায়। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, “আমরা চাই এমন একটি পুলিশ বাহিনী হোক, যেখানে পুলিশপ্রধান থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক অনৈতিক আদেশ পালনে তাঁরা যেন ‘না’ বলতে পারেন।”
উদাহরণ হিসেবে এই সদস্য বলেন, ‘কিছুদিন আগে ব্রিটিশ সরকার লন্ডনের পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছিল সেখানে থাকা ফিলিস্তিনের হামাসের প্রতি সমর্থন প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। কিন্তু লন্ডনের পুলিশ কমিশনার সরকারকে সাফ জানিয়ে দেন, মানুষের মত প্রকাশ রোধে তাঁরা কোনো কাজ করতে পারবেন না। ব্রিটিশ সরকার পুলিশকে বাধ্য করতে পারেনি। আমরাও চাই বাংলাদেশেও এমন মানবিক পুলিশ হবে। জুলাই আন্দোলনের মতো ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে।’
অন্যদিকে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশমালা এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের সুপারিশেও ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত পুলিশের কাছ থেকে সরিয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী তানিম হোসেন শাওন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মামলার তদন্তে নানা বাধ্যবাধকতার কারণে পুলিশ প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছে না বলেই একটি বিশেষায়িত পেশাদার তদন্ত সংস্থার প্রয়োজনীয়তা তাঁরা উপলব্ধি করেছেন।
বাংলাদেশে এখন ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করে পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা পিবিআই ও সিআইডিও তদস্ত সংস্থা হিসেবে পরিচিত। পুলিশের লোকজন দিয়েই এসব সংস্থা চলার কারণে তারা পেশাদারির সঙ্গে কাজ করতে পারছে না।
সূত্র : কালের কণ্ঠ