Dhaka ১০:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বইমেলায় আওয়ামী লীগের ‘সুবিধাভোগী’ প্রকাশকরা পাচ্ছেন না প্যাভিলিয়ন

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশের সময় : ০৭:২০:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 8

অমর একুশে বইমেলায় অন্যান্য বছর প্যাভিলিয়ন পেলেও এবার প্যাভিলিয়ন দেওয়া হচ্ছে না বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থাকে। জানা গেছে, প্রকাশকদের একটি অংশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি। যাদের প্যাভিলিয়ন দেওয়া হচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

নির্দিষ্ট প্রকাশকদের প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, আগে প্যাভিলিয়ন দেওয়া হতো এমন কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে এবার প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেলার নিয়ম-নীতি মেনেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বইমেলার স্টল বরাদ্দের জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃক একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এতে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রকাশকদের প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা রয়েছেন।

কিছু প্রতিষ্ঠানকে প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার বিষয়টি বৃহস্পতিবার এই কমিটির সভায় সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান প্যাভিলিয়ন পাচ্ছে না বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে— তাম্রলিপি, কাকলী প্রকাশনী, পাঠক সমাবেশ, পুঁথিনিলয়, সময়, মিজান পাবলিশার্স, চারুলিপি, জিনিয়াস পাবলিকেশন, নালন্দা, পার্ল পাবলিকেশন, বিশ্বসাহিত্য ভবন, শব্দশৈলী। এছাড়াও অন্যপ্রকাশ, আগামী প্রকাশনী ও অনুপম প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন ছোট করার সিদ্ধান্তের কথাও জানা গেছে।

গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত কয়েকটি প্রকাশক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই প্রকাশনীগুলোকে ‘স্বৈরাচারের দোসর প্রকাশক’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বইমেলায় নিষিদ্ধের দাবি তোলা হয়।

একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ ও বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এই প্রকাশনীগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করারও দাবি জানায় এবং বইমেলায় প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশন করে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই গতকালের বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান দাবি করেছেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গতকালের সভায় বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিন, কবি ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান, প্রকাশক প্রতিনিধি সাঈদ বারী, মো. গফুর হোসেন, আবুল বাশার ফিরোজ, আরিফুর রহমান নাইম, মাহবুব রাহমান, মো. জহির দীপ্তি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান বলেন, ‘এটা আমাদের একার না, সাধারণ প্রকাশকদের বিজয়। এ জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। তবে আগামী, অন্যপ্রকাশ ও অনুপমকে ছাড় দেওয়া যাবে না। এরা বড় দালাল।’ তিনি বলেন, ‘প্রকাশকদের প্রাণের দাবি, স্টল ভাড়া অর্ধেক কমানোর ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সুতরাং আমাদের সবাইকে জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।’

প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো বাংলা একাডেমি জানায়নি বলে সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘প্যাভিলিয়ন না দিলে বাংলা একাডেমির ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত, কোন কারণে তারা প্যাভিলিয়ন পাচ্ছেন না। কাউকে আওয়ামী লীগের দোসর বললে প্রমাণ দিতে হবে, সরকারের কোনো লাভজনক কাজে সেই প্রকাশক ছিল।’

ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমার ব্যাপারে নিশ্চিত করতে পারি, আমার সময় প্রকাশন, আমি কখনো কোনো দিন সরকারের কোনো লাভজনক পদে ছিলাম না। এবারের বইমেলা আমার ছত্তিশতম বইমেলা হবে, এর আগে আমি পঁয়ত্রিশটি বইমেলা করেছি। এর মধ্যে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার সরকার বদল হয়েছে, কোনো সরকার কখনো এই রকম কথা বলেনি।’

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

বইমেলায় আওয়ামী লীগের ‘সুবিধাভোগী’ প্রকাশকরা পাচ্ছেন না প্যাভিলিয়ন

প্রকাশের সময় : ০৭:২০:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

অমর একুশে বইমেলায় অন্যান্য বছর প্যাভিলিয়ন পেলেও এবার প্যাভিলিয়ন দেওয়া হচ্ছে না বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থাকে। জানা গেছে, প্রকাশকদের একটি অংশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি। যাদের প্যাভিলিয়ন দেওয়া হচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

নির্দিষ্ট প্রকাশকদের প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, আগে প্যাভিলিয়ন দেওয়া হতো এমন কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে এবার প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেলার নিয়ম-নীতি মেনেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বইমেলার স্টল বরাদ্দের জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃক একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এতে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রকাশকদের প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা রয়েছেন।

কিছু প্রতিষ্ঠানকে প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার বিষয়টি বৃহস্পতিবার এই কমিটির সভায় সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান প্যাভিলিয়ন পাচ্ছে না বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে— তাম্রলিপি, কাকলী প্রকাশনী, পাঠক সমাবেশ, পুঁথিনিলয়, সময়, মিজান পাবলিশার্স, চারুলিপি, জিনিয়াস পাবলিকেশন, নালন্দা, পার্ল পাবলিকেশন, বিশ্বসাহিত্য ভবন, শব্দশৈলী। এছাড়াও অন্যপ্রকাশ, আগামী প্রকাশনী ও অনুপম প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন ছোট করার সিদ্ধান্তের কথাও জানা গেছে।

গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত কয়েকটি প্রকাশক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই প্রকাশনীগুলোকে ‘স্বৈরাচারের দোসর প্রকাশক’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বইমেলায় নিষিদ্ধের দাবি তোলা হয়।

একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ ও বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এই প্রকাশনীগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করারও দাবি জানায় এবং বইমেলায় প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশন করে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই গতকালের বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান দাবি করেছেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গতকালের সভায় বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিন, কবি ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান, প্রকাশক প্রতিনিধি সাঈদ বারী, মো. গফুর হোসেন, আবুল বাশার ফিরোজ, আরিফুর রহমান নাইম, মাহবুব রাহমান, মো. জহির দীপ্তি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান বলেন, ‘এটা আমাদের একার না, সাধারণ প্রকাশকদের বিজয়। এ জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। তবে আগামী, অন্যপ্রকাশ ও অনুপমকে ছাড় দেওয়া যাবে না। এরা বড় দালাল।’ তিনি বলেন, ‘প্রকাশকদের প্রাণের দাবি, স্টল ভাড়া অর্ধেক কমানোর ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সুতরাং আমাদের সবাইকে জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।’

প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো বাংলা একাডেমি জানায়নি বলে সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘প্যাভিলিয়ন না দিলে বাংলা একাডেমির ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত, কোন কারণে তারা প্যাভিলিয়ন পাচ্ছেন না। কাউকে আওয়ামী লীগের দোসর বললে প্রমাণ দিতে হবে, সরকারের কোনো লাভজনক কাজে সেই প্রকাশক ছিল।’

ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমার ব্যাপারে নিশ্চিত করতে পারি, আমার সময় প্রকাশন, আমি কখনো কোনো দিন সরকারের কোনো লাভজনক পদে ছিলাম না। এবারের বইমেলা আমার ছত্তিশতম বইমেলা হবে, এর আগে আমি পঁয়ত্রিশটি বইমেলা করেছি। এর মধ্যে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার সরকার বদল হয়েছে, কোনো সরকার কখনো এই রকম কথা বলেনি।’