অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ঠেকাতে বই উৎসব বাদ
ঘটা করে হচ্ছে না বই উৎসব
- প্রকাশের সময় : ০৮:৫৮:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১০৩১ জন সংবাদটি পড়েছেন
নতুন বছরের শুরুতে সব বই পাবে না মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে জানুয়ারির শুরুতেই নতুন বই পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি রেখেছে সরকার। এ ছাড়া আগের মতো এবার ঘটা করে বই উৎসব করা হবে না। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ঠেকাতেই এই উৎসব বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উৎসব না হলেও স্কুলে স্কুলে বই পাবে ছাত্র-ছাত্রীরা।
জানা যায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আগামী ১ জানুয়ারি মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত- এই তিনটি বই পৌঁছে দিতে পারবে। বাকি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে পেরিয়ে যেতে পারে জানুয়ারিও। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই এনসিটিবির ওয়েবসাইটে সব বইয়ের পিডিএফ আপলোড করা হবে। কেউ চাইলে সেখান থেকেও সহযোগিতা নিতে পারবেন। তাই শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মাধ্যমিকের বই সরবরাহের বিলম্বের কারণ হিসেবে জানা যায়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা সমালোচনা সত্ত্বেও আওয়ামী সরকার চালু করেছিল নতুন কারিকুলাম। অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই কারিকুলাম বাতিল করে। একই সঙ্গে বাতিল করা হয় আগের কারিকুলাম অনুযায়ী বই ছাপানোর টেন্ডারও। পরিবর্তে মাধ্যমিক স্তরে চালু করা হয় ২০১২ সালের কারিকুলাম। তাই আগের কারিকুলাম অনুযায়ী বই প্রস্তুত ও নতুন টেন্ডার করে বই ছাপানোর প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেকটা সময় লেগে যায় এনসিটিবির।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির মোট ৬৫৫টি বই পরিমার্জন করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়েই বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে যুক্ত করা হয়েছে জুলাই বিপ্লবের কাহিনি ও গ্রাফিতি। এ ছাড়া গত কয়েক বছর ৩২ থেকে ৩৪ কোটি বই ছাপা হলেও আগামী বছরের জন্য প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপতে হবে। এতেও কিছুটা সময় লেগে যাবে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ শাসনামলে পাঠ্যবইগুলোতে শেখ মুজিবুর রহমানের অতিরিক্ত বন্দনা করা হয়েছিল। এবারের নতুন বইয়ে এসব বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক অতিকথন ও অতিবন্দনা। বাদ দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ বিতর্কিত বিভিন্ন লেখকের লেখাও। আগে বইয়ের ব্যাক কভারে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের বিভিন্ন উক্তি ছাপা হতো। এবার সেগুলো বাদ দিয়ে ব্যাক কভারে স্থান দেওয়া হয়েছে জুলাই আন্দোলনের দেয়াললিখন ও গ্রাফিতিগুলো। সূত্র জানায়, প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ছাপার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপার কাজ চলছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ১ জানুয়ারি প্রাথমিকের ছাত্র-ছাত্রীরা সব বই পাবে। তবে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে বছরের শুরুতে তিনটি বই বিতরণ করা হবে। ১০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি ৫টি বই দেওয়া হবে। আর ২০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের সব বই বিতরণ করার চিন্তা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি।’
বইয়ের মান বজায় রাখতে তৎপর এনসিটিবি : এনসিটিবি সূত্র জানায়, অতীতে প্রায় প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের হাতে মানহীন বই দেওয়ার অভিযোগ ছিল। তবে এবার এই মান বজায় রাখতে এনসিটিবি অঙ্গীকারবদ্ধ। ফলে এর মধ্যে বইয়ের মান বজায় না রাখার অভিযোগে সম্প্রতি অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস ও কর্ণফুলি প্রিন্টার্সের প্রায় ৫০ হাজার বই জব্দ করা হয়েছে। আনন্দ প্রিন্টিং প্রেসের ১০ হাজার বই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
লেটার অ্যান্ড কালারের ৫ হাজার বই ও কচুয়া প্রিন্টার্সের প্রায় ৫ হাজার বই জব্দ করা হয়েছে। এনসিটিবির মনিটরিং টিম ইন্সপেকশন এজেন্টের উপস্থিতিতে এসব অভিযান সম্পন্ন হয়। বইয়ের মান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, বই উৎসবকে কেন্দ্র করে অনেক মুদ্রন প্রতিষ্ঠান বছরের শেষ দিকে এসে নিম্নমানের বই সরবরাহের চেষ্টা করত। অতীতে সরকারও বই উৎসবের স্বার্থে মানের ব্যাপারে ছাড় দিয়েছিল। অতীতের মতো এবারও অসাধু প্রতিষ্ঠানগুলো নিম্নমানের বই দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। বইয়ের মানের ব্যাপারে এনসিটিবি কোনো আপস করবে না বলে জানান তিনি।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন