উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি হবে না পরীক্ষা ছাড়া
- প্রকাশের সময় : ১১:৪৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১০২৪ জন সংবাদটি পড়েছেন
প্রশাসনের উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেতে পদ প্রত্যাশী কর্মকর্তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই শুধু পদোন্নতি পাবেন—এমন সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সরকার এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে পরীক্ষা ছাড়া এই দুই পদে আর কেউ পদোন্নতি পাবেন না।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় জনপ্রশাসনের সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
এ সময় কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দা শাহিনা সোবহান, ড. মোহাম্মদ তারেক, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, ড. মো. হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন।
আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পরীক্ষা ছাড়া সিভিল সার্ভিসের উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ে কেউ পদোন্নতি পাবেন না। পদোন্নতির জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা নেবে। ৭০ নম্বর না পেলে পদোন্নতি পাবেন না।
প্রতিটি স্তরে (উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত) এটি হবে না। উপসচিব ও যুগ্ম সচিব এই দুই পর্যায়ে হবে। এর পরের পর্যায়ে সরকার পদোন্নতি দিতে পারবে। পরীক্ষায় একজন কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা সবচেয়ে বেশি নম্বর পেলে তিনি উপসচিবের তালিকায় এক নম্বরে আসবেন।
এর মাধ্যমে আন্ত ক্যাডার বৈষম্য দূর হবে। যে কোনো ক্যাডারের যে কেউ ৭০ পেলে প্রশাসন ক্যাডারে আসতে পারবেন। এ ছাড়া উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ সুপারিশ করা হচ্ছে। বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়।
চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে জানিয়ে কমিশনের প্রধান বলেন, সরকারি চাকরি ও পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের সুপারিশ করা হবে।
প্রত্যেক নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার আছে। আইনি বাধা না থাকলে, বিশ্বের যেকোনো জায়গায় ভ্রমণ করার অধিকার সবার আছে। আমরা তথ্য অধিকার আইনকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রতিটি জেলা ও বিভাগে এ বিষয়টি দেখভাল করতে একজন করে কর্মকর্তা দেওয়া হবে। তবে এখনো তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ সেভাবে হচ্ছে না।
কমিশনের সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘কমিশনের মেজর সুপারিশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করা হোক। ওই এলাকার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুটি বিভাগ করার পরামর্শ দিচ্ছি। এই দুটি বিভাগ করতে গেলে দু-একটা জেলা এই বিভাগ থেকে ওই বিভাগে দিতে হবে। সেটা আমরা ম্যাপ করে দিয়েছি।
একটি ম্যাপ দেখলেই বুঝা যাবে সামনে ১০টি বিভাগ, কোন জেলাকে কোন জায়গায় দেওয়া হয়েছে। সব বিভাগকে টাচ করা হয়নি। এখানে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামকে টাচ করা হয়েছে, যাতে কুমিল্লা, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ সে রকম হয়। আমরা দিয়েছি, সরকার যদি মনে করে ১০টা বিভাগ করবে, ফাইন। জনগণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আরো অনেক সুপারিশ করেছি। আমরা গুগলে ক্লাস্টার করেছি, একই বিষয় কত হাজার মানুষ সাপোর্ট করেছে, কত হাজার লোক চাহিদা দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই দুই জেলাকে দুই বিভাগ করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। গত নভেম্বরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নতুন বিভাগ সৃষ্টির প্রস্তাব আবার উত্থাপিত হলেও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ড. মোখলেস উর রহমান আরো জানান, সংস্কার কমিশন মনে করে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের বর্তমান কাঠামো বজায় রাখার প্রয়োজন নেই। বরং এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর পরিচালনার জন্য পৃথক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করবে কমিশন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনসাধারণের জন্য দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। কমিশন এই খাতে কর্মরত পেশাদারদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর নির্ভর করবে।
ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাসের মাথায় অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্রের ছয় খাত সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর নভেম্বরে আরো পাঁচ খাত সংস্কারের জন্য পাঁচটি কমিশন করা হয়। প্রতিটি কমিশনকে সুপারিশ জমা দিতে ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠিত হয় ৩ অক্টোবর। সে হিসাবে ২ জানুয়ারি শেষ হতে যাচ্ছে ৯০ দিন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে হট্টগোল
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি এবং কমিশনের প্রধানের বক্তব্য ঘিরে হট্টগোল তৈরি হয়। মতবিনিময়ের এক পর্যায়ে ছাত্র প্রতিনিধি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, এই কমিশনের সদস্য হিসেবে আমি এক-দেড় মাস ধরে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের কথা শুনেছি, জনগণের কথা শুনেছি।
এতে আমার একটি উপলব্ধি এসেছে যে, জীবনে আর যাই করি বিসিএস দেব না। আমি খুব আশাহত হয়েছি যে, আপনারা (সাংবাদিক) জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনে কথা বলতে এসেছেন, এ সম্পর্কে পড়াশোনা করে আসা দরকার ছিল। সেই জায়গায় একটু ঘাটতি দেখা গেছে।
এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, ‘কী ঘাটতি মনে হয়েছে আপনার?’ তখন তিনি বলেন, ‘আপনাদের সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটা করা দরকার ছিল, ২৩টি সংস্কার কমিশন হয়েছে, কমিশনগুলো কেন ইফিসিয়েন্টলি কাজ করতে পারেনি?’ তখন সাংবাদিকরা বলেন, ‘এগুলোর বিষয়ে একাধিকবার বলা হয়েছে।’ এরপর হট্টগোলের মধ্যে তিনি আর কথা বলতে পারেননি।
এরপর কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এমন একজন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করছেন, যিনি এখনো ছাত্র। তার সার্বিক পরিস্থিতি জানা সম্ভব নয়। কিন্তু সে জেল খেটেছে, জেল থেকে বের হয়ে এসেছে এবং এই আন্দোলন করেছে। আন্দোলন তো আপনারা এখানে যাঁরা, আমরা তো করিনি।’
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকরা একযোগে প্রতিবাদ করে বলেন, ‘স্যার, এ কথা আপনি বলতে পারেন না। আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের সহকর্মীরা আহত-নিহত হয়েছেন। আমরা কেউ কেউ বাসায় ঘুমাতে পারিনি। অনেকে জেল খেটেছেন।’
পরে কমিশনের প্রধান বলেন, ‘আপনারা আন্দোলন কাভার করতে গিয়েছিলেন এবং সে জন্য আপনারা পুলিশের গুলির সামনে ছিলেন। আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন।’ পরে আবার মেহেদী হাসান কথা বলতে গেলে সাংবাদিকরা বলেন, ‘আপনি ক্ষমা চান, তারপর কথা বলবেন।’ তখন মেহেদী হাসান বলেন, আমার শব্দচয়নে আপনারা যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি দুঃখিত।’