Dhaka ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রেমের ফাঁদে ফেলে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে বø্যাকমেইল \ তরুণীসহ গ্রেপ্তার ৫

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৩২:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪
  • / ১০৩৯ জন সংবাদটি পড়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার
সুন্দরী তরুণীকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। অবশেষে রাজবাড়ীর ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে চক্রের পাঁচ সদস্য। যাদের মধ্যে রয়েছেন ভুয়া আইনজীবী, বিয়ের কাজী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও সুন্দরী তরুণী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি এন্ড্রয়েড ফোন, বিয়ে সংক্রান্ত হলফনামা, ভুয়া নিকাহনামা, নিকাহ রেজিস্ট্রার, নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের মেজরের সীল, মেজর স্বাক্ষরিত ভুয়া প্রত্যয়ন পত্র, পাঁচটি মেমোরি কার্ড, সেনাবাহিনীর একটি আইডি কার্ড।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মাসুদুর রহমান, শহরের ভবানীপুরের বাসিন্দা ফজলুল হক, সদর উপজেলার লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা বিয়ের কাজী এমদাদ হোসেন, সদর উপজেলার বাগমারা গ্রামের বাসিন্দা রিমা খাতুন এবং রিমার সাজানো বোন জামাই কালুখালীর মদাপুরের বাসিন্দা জামাল সরদার। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের আটক করা হয়। শুক্রবার রাতে রাজবাড়ীর ডিবি পুলিশ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানায়।
রাজবাড়ীর ডিবি অফিস সূত্র জানায়, রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দার বাসিন্দা সেনা সদস্য মাহফুজুর রহমানের সাথে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে রিমা খাতুনের। সম্প্রতি রিমা খাতুন মাহফুজকে কথা বলার জন্য মাসুদুর রহমানের বাড়িতে ডেকে নেয়। সেখানে জামাল সর্র্দার এবং ফজলুল হকের সহায়তায় তাদের অন্তরঙ্গ দৃশ্য ভিডিও ধারণ করা হয়। সেই ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে মাহফুজের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এবং তিনটি সাদা স্ট্যাস্পে স্বাক্ষর নেয়। সেই স্ট্যাম্প দিয়ে বিয়ের হলফনামা তৈরি করেন ভুয়া আইনজীবী ফজলুল হক। সাক্ষী এবং বর ছাড়াই কাজী ইমদাদ হোসেনকে তৈরি করা হয় কাবিননামা। চক্রের আরেক সদস্য জামাল সরদারকে রিমার বোন জামাই সাজিয়ে মাহফুজকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে আরও এক লাখ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এখানেই তারা থেমে যায়নি। চক্রটি আবারও বø্যাকমেইল শুরু করে। এবার মহফুজের পরিবারের কাছে দাবি করে ১০ লাখ টাকা। ভুক্তভোগী পরিবারটি উপায়ন্তর না দেখে বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
রাজবাড়ীর ডিবি ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, ভুক্তভোগীরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে চক্রটিকে ধরার জন্য তারা তৎপর হয়ে ওঠে। তাদের দাবিকৃত টাকা নেওয়ার জন্য শহরের জেলা স্কুলের সামনে আসতে বলা হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে চক্রের তিন সদস্য মাসুদুর রহমান, রিমা খাতুন এবং জামাল সরদার টাকা নেওয়ার জন্য আসলে তাদের আটক করা হয়। চক্রের অপর দুই সদস্য বিয়ের কাজী এমদাদ হোসেন ও কথিত আইনজীবী ফজলুল হককে ওই দিন গভীর রাতে তাদের নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
পুলিশি জিজ্ঞসাবাদে তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। তারা এধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোনে এ সংক্রান্ত প্রমাণও মিলেছে। এবিষয়ে পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনসহ মোট ১১টি ধারায় রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়েরের পর শুক্রবার আসামিদের রাজবাড়ীর আদালতে চালান করা হয়েছে।
ফজলুল হকের বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যড. বিজন বোস জানান, ফজলুল হক তাদের বার এর তালিকাভুক্ত নন। এমনকি শিক্ষানবীশও না। তিনি কালো কোর্ট পরে আদালত চত্ত¡রে ঘোরাফেরা করেন। ২০২২ সালে তাকে দালাল হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

প্রেমের ফাঁদে ফেলে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে বø্যাকমেইল \ তরুণীসহ গ্রেপ্তার ৫

প্রকাশের সময় : ০৬:৩২:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার
সুন্দরী তরুণীকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। অবশেষে রাজবাড়ীর ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে চক্রের পাঁচ সদস্য। যাদের মধ্যে রয়েছেন ভুয়া আইনজীবী, বিয়ের কাজী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও সুন্দরী তরুণী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি এন্ড্রয়েড ফোন, বিয়ে সংক্রান্ত হলফনামা, ভুয়া নিকাহনামা, নিকাহ রেজিস্ট্রার, নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের মেজরের সীল, মেজর স্বাক্ষরিত ভুয়া প্রত্যয়ন পত্র, পাঁচটি মেমোরি কার্ড, সেনাবাহিনীর একটি আইডি কার্ড।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মাসুদুর রহমান, শহরের ভবানীপুরের বাসিন্দা ফজলুল হক, সদর উপজেলার লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা বিয়ের কাজী এমদাদ হোসেন, সদর উপজেলার বাগমারা গ্রামের বাসিন্দা রিমা খাতুন এবং রিমার সাজানো বোন জামাই কালুখালীর মদাপুরের বাসিন্দা জামাল সরদার। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের আটক করা হয়। শুক্রবার রাতে রাজবাড়ীর ডিবি পুলিশ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানায়।
রাজবাড়ীর ডিবি অফিস সূত্র জানায়, রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দার বাসিন্দা সেনা সদস্য মাহফুজুর রহমানের সাথে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে রিমা খাতুনের। সম্প্রতি রিমা খাতুন মাহফুজকে কথা বলার জন্য মাসুদুর রহমানের বাড়িতে ডেকে নেয়। সেখানে জামাল সর্র্দার এবং ফজলুল হকের সহায়তায় তাদের অন্তরঙ্গ দৃশ্য ভিডিও ধারণ করা হয়। সেই ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে মাহফুজের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এবং তিনটি সাদা স্ট্যাস্পে স্বাক্ষর নেয়। সেই স্ট্যাম্প দিয়ে বিয়ের হলফনামা তৈরি করেন ভুয়া আইনজীবী ফজলুল হক। সাক্ষী এবং বর ছাড়াই কাজী ইমদাদ হোসেনকে তৈরি করা হয় কাবিননামা। চক্রের আরেক সদস্য জামাল সরদারকে রিমার বোন জামাই সাজিয়ে মাহফুজকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে আরও এক লাখ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এখানেই তারা থেমে যায়নি। চক্রটি আবারও বø্যাকমেইল শুরু করে। এবার মহফুজের পরিবারের কাছে দাবি করে ১০ লাখ টাকা। ভুক্তভোগী পরিবারটি উপায়ন্তর না দেখে বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
রাজবাড়ীর ডিবি ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, ভুক্তভোগীরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে চক্রটিকে ধরার জন্য তারা তৎপর হয়ে ওঠে। তাদের দাবিকৃত টাকা নেওয়ার জন্য শহরের জেলা স্কুলের সামনে আসতে বলা হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে চক্রের তিন সদস্য মাসুদুর রহমান, রিমা খাতুন এবং জামাল সরদার টাকা নেওয়ার জন্য আসলে তাদের আটক করা হয়। চক্রের অপর দুই সদস্য বিয়ের কাজী এমদাদ হোসেন ও কথিত আইনজীবী ফজলুল হককে ওই দিন গভীর রাতে তাদের নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
পুলিশি জিজ্ঞসাবাদে তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। তারা এধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোনে এ সংক্রান্ত প্রমাণও মিলেছে। এবিষয়ে পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনসহ মোট ১১টি ধারায় রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়েরের পর শুক্রবার আসামিদের রাজবাড়ীর আদালতে চালান করা হয়েছে।
ফজলুল হকের বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যড. বিজন বোস জানান, ফজলুল হক তাদের বার এর তালিকাভুক্ত নন। এমনকি শিক্ষানবীশও না। তিনি কালো কোর্ট পরে আদালত চত্ত¡রে ঘোরাফেরা করেন। ২০২২ সালে তাকে দালাল হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।