Dhaka ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আন্তর্জাতিক নারী দিবস

সমাধিকার নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৭:০০:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪
  • / ১১১৯ জন সংবাদটি পড়েছেন

আজ ৮ মার্চ ২০২৪ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের সকল নারীদেরকে জানাচ্ছি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা। গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি বিশ্বের সকল সংগ্রামী নারী নেত্রীর প্রতি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় – “Invest in Women:Accelerate progress – নারীর সমঅধিকার সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ” বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ বছর প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে- “অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে নারীর সার্বিক ক্ষমতায়ন” শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নারীর সমঅধিকার ও সমসুযোগ নিশ্চিত করতে বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। নারীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টির নিশ্চয়তা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি,উদ্যোক্তা ঋণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন। তবে আর্থিক বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন মেধা, শ্রম, দক্ষতা ও সময়ের বিনিয়োগ। শুধু সরকার নয় সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এই বিনিয়োগের ভার বহন করতে হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০,১৬,২৬,২৭,২৮,২৯ ও ৩০ ধারায় নারীর সমঅধিকারের ঘোষণা করা হয়েছে। স়ংবিধানের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে – রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী, পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে। নারীর সমঅধিকার ও সমসুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনেক বাঁধা রয়েছে। ধর্মান্ধতা ও নারীর প্রতি সহিংসতা অন্যতম। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে অনেক আইন থাকলেও নারী নির্যাতনের মাত্রা কমছে না বরং বেড়েই চলেছে নারীর শারীরিক, মানসিক যৌন ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের সাথে যুক্ত হয়েছে সাইবার সহিংসতা। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম,ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইউটিউবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা। এই হয়রানি নারীর আত্মবিশ্বাসকে বাধাগ্রস্ত করছে। নারী নির্যাতনে উৎসাহ যোগায় আমাদের দেশে প্রচলিত বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন। আমাদের দেশে প্রধান চারটি ধর্মাবলম্বীদের পারিবারিক আইনের পার্থক্য থাকায় একই দেশের নাগরিকদের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে । বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব, সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী সমাজ অসম আইনের শিকার হয়ে শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার আলোকে জীবনে প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোন শিরোনামে একটি সম্পূর্ণ পারিবারিক আইন প্রচলনের খসড়া সুপারিশ দেশবাসী ও সরকারের নিকট পেশ করেছে। নারী পুরুষের মধ্যে বিরাজমান ব্যবধান দূর করতে ১৯৯৩ সালে এই আইনের খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। অভিন্ন পারিবারিক আইনে সকল বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বামীর অপারগতায় স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর ভরণপোষণের কথা বলা হয়েছে। সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে পিতা মাতা উভয়ের সমমর্যাদা স্বীকৃত হয়েছে। উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে -সমমর্যাদার নারী ও পুরুষ উত্তরাধিকারী হিসেবে সমান অধিকার লাভ করবে এবং প্রত্যেকেই সমান অংশের অধিকারী হবে । সুতরাং অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করা হলে নারীর সমঅধিকার ও সমসুযোগ প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে এবং ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্য হ্রাস, প্রসূতিকালীন ছুটি ও কর্মঘন্টা কমানোর দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। জাতিসংঘ এই দিবসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় সদস্য দেশগুলো প্রতি বছর এই দিবস পালন করে। বাংলাদেশও প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় এই দিবসটি পালন করে আসছে। তবে বাস্তবতা এটাই – বাংলাদেশের বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে শ্রম অধিকার, স্বাস্থ্য বীমা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা ও শিশু পরিচর্যা ব্যবস্থা নেই। রয়েছে মজুরি বৈষম্য। বাংলাদেশের নারীরা সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে তাদের সমঅধিকার সমসুযোগ নিশ্চত করে চলার পথ মসৃণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রাজবাড়ী জেলা শাখা।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

সমাধিকার নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব

প্রকাশের সময় : ০৭:০০:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪

আজ ৮ মার্চ ২০২৪ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের সকল নারীদেরকে জানাচ্ছি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা। গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি বিশ্বের সকল সংগ্রামী নারী নেত্রীর প্রতি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় – “Invest in Women:Accelerate progress – নারীর সমঅধিকার সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ” বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ বছর প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে- “অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে নারীর সার্বিক ক্ষমতায়ন” শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নারীর সমঅধিকার ও সমসুযোগ নিশ্চিত করতে বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। নারীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টির নিশ্চয়তা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি,উদ্যোক্তা ঋণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন। তবে আর্থিক বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন মেধা, শ্রম, দক্ষতা ও সময়ের বিনিয়োগ। শুধু সরকার নয় সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এই বিনিয়োগের ভার বহন করতে হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০,১৬,২৬,২৭,২৮,২৯ ও ৩০ ধারায় নারীর সমঅধিকারের ঘোষণা করা হয়েছে। স়ংবিধানের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে – রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী, পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে। নারীর সমঅধিকার ও সমসুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনেক বাঁধা রয়েছে। ধর্মান্ধতা ও নারীর প্রতি সহিংসতা অন্যতম। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে অনেক আইন থাকলেও নারী নির্যাতনের মাত্রা কমছে না বরং বেড়েই চলেছে নারীর শারীরিক, মানসিক যৌন ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের সাথে যুক্ত হয়েছে সাইবার সহিংসতা। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম,ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইউটিউবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা। এই হয়রানি নারীর আত্মবিশ্বাসকে বাধাগ্রস্ত করছে। নারী নির্যাতনে উৎসাহ যোগায় আমাদের দেশে প্রচলিত বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন। আমাদের দেশে প্রধান চারটি ধর্মাবলম্বীদের পারিবারিক আইনের পার্থক্য থাকায় একই দেশের নাগরিকদের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে । বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব, সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী সমাজ অসম আইনের শিকার হয়ে শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার আলোকে জীবনে প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোন শিরোনামে একটি সম্পূর্ণ পারিবারিক আইন প্রচলনের খসড়া সুপারিশ দেশবাসী ও সরকারের নিকট পেশ করেছে। নারী পুরুষের মধ্যে বিরাজমান ব্যবধান দূর করতে ১৯৯৩ সালে এই আইনের খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। অভিন্ন পারিবারিক আইনে সকল বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বামীর অপারগতায় স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর ভরণপোষণের কথা বলা হয়েছে। সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে পিতা মাতা উভয়ের সমমর্যাদা স্বীকৃত হয়েছে। উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে -সমমর্যাদার নারী ও পুরুষ উত্তরাধিকারী হিসেবে সমান অধিকার লাভ করবে এবং প্রত্যেকেই সমান অংশের অধিকারী হবে । সুতরাং অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করা হলে নারীর সমঅধিকার ও সমসুযোগ প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে এবং ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্য হ্রাস, প্রসূতিকালীন ছুটি ও কর্মঘন্টা কমানোর দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। জাতিসংঘ এই দিবসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় সদস্য দেশগুলো প্রতি বছর এই দিবস পালন করে। বাংলাদেশও প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় এই দিবসটি পালন করে আসছে। তবে বাস্তবতা এটাই – বাংলাদেশের বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে শ্রম অধিকার, স্বাস্থ্য বীমা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা ও শিশু পরিচর্যা ব্যবস্থা নেই। রয়েছে মজুরি বৈষম্য। বাংলাদেশের নারীরা সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে তাদের সমঅধিকার সমসুযোগ নিশ্চত করে চলার পথ মসৃণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রাজবাড়ী জেলা শাখা।