ডেঙ্গুতে অকাল মৃত্যু যুবমহিলা লীগ নেত্রীর
- প্রকাশের সময় : ০৮:৩২:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১১২২ জন সংবাদটি পড়েছেন
রাজবাড়ীতে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে যুবমহিলা লীগের নেত্রী রুমানা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১ টার দিকে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। রুমানা রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়ন যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একই ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত বাবু মোল্লার মেয়ে তিনি। রিয়াদ নামে তার ১১ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে রুমানা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারের সদস্যরা সবাই শোকে বিহŸল। ঘরে রুমানার মা সখিনা বেগম, ছোট বোন সোমা বিলাপ করে কাঁদছে। তাকে সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করছে ভাই রাসেল মোল্লাসহ আত্মীয় স্বজন। ১১ বছরের ছেলে রিয়াদ ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে।
রুমানা আক্তারের ভাই রাসেল মোল্লা জানান, গত মঙ্গলবার তার বোনের জ¦র আসে। জ¦রের সাথে মাথা ব্যথা ও বমিও ছিল। বুধবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজবাড়ী শহরের সেন্ট্রাল হাসপাতালে তার বোনের ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ওই সময় আরও তিনটি পরীক্ষা করানো হয়। তার বোনের প্লাটিলেট ৮১ হাজারে নেমে এসেছিল। বেসরকারি ওই হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শে তার বোনকে তখনই রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি করার পর তার বোন পেটে ব্যথার কথা জানায়। সদর হাসপাতালে স্যালাইন দেওয়া হয়। সারাদিন স্যালাইন চলে। তাতেও কিছু হয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পেট ক্রমে ফুলেই যাচ্ছিল। খুবই টেনশন হচ্ছিল। ডাক্তারদের সাথে কথা বললে ডাক্তাররা জানান, এর থেকে ভালো ট্রিটমেন্ট রাজবাড়ীতে হবেনা। তারা ফরিদপুর নেওয়ার পরামর্শ দেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে তার বোনকে ভর্তি করেন। সেখানেও তার বোনকে পাঁচটি স্যালাইন দেওয়া হয়। এতে তার বোন আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। তার বোন তাকে বলছিল; তার পেটে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। পেট ফুলে যাচ্ছে। স্যালাইন, অক্সিজেন দেওয়ার পরও কোনো উন্নতি হয়নি। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাক্তারের সাথে কথা বললে তিনি জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ মেডিকেল অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আইসিইউ ডাক্তারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আইসিইউতে এই রুগিকে শিফট করতে পারবেন। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীদের যে চিকিৎসা সেটা এখানে নেই। এর জন্য ঢাকায় যেতে হবে। ডাক্তার বললেন, আপনার বোনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে গেছে। এখানে থাকলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। তাৎক্ষণিক তিনি ঢাকায় যোগাযোগ করেন। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তার বোনকে অ্যম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পার হওয়ার সময় বোন পানি খেতে চায়। এরপর তিনটি ঢেকুর দিয়ে ডান দিকে কাত হয়ে পড়ে যায়। তার মা দেখে চিৎকার দেন। বোনের শরীরে হাত দিয়ে দেখেন নিস্তেজ হয়ে গেছে। তখনই বোঝেন তার বোন আর নেই। তবুও নিজের মনকে সান্ত¡না দিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তার তার বোনকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, তার বাবা নেই। তার বোনই ছিলেন তাদের অভিভাবক। সংসারের সব দায়িত্ব সামলাতেন তার বোন। বোনকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করেছেন তিনি। তার বোনের মৃত্যুতে ১১ বছরের ভাগ্নে একেবারে এতিম হয়ে গেল। তার সংসারের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শামীম আহসান জানান, ওই রোগী ডেঙ্গু শকে ছিল। তার পেশার কমে গিয়েছিল। শরীরের বিভিন্ন স্থানে পানি জমেছিল। খুব খারাপ অবস্থা হওয়ায় তাকে ফরিদপুর রেফার্ড করা হয়।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. এসএমগএ হান্নান জানান, তারা সাধ্যমত চেষ্টা করেন রোগীদের সেবা দেওয়ার। রোগী আসলেই রেফার্ড করা হয়না। ওই রোগীকে রেফার্ড করার আগে ডা. শামীম আহসান তাকে জানিয়েছিলেন। যতটুকু জেনেছেন খুব খারাপ অবস্থা ছিল তার।
ডেঙ্গু এখন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সবাইকে সচেতন ও মশারি ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহীম টিটন জানান, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কেউ মারা যায়নি। তবে, রাজবাড়ীর বাসিন্দা এমন তিনজন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে বলে জানান তিনি। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৪৯ জন।