Dhaka ০৯:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দলীয় কার্যালয় ভাংচুর

রাজবাড়ীতে বিএনপির  দুই পক্ষের সংঘর্ষ  \ আহত ২০

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৯:১০:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩
  • / ১০৯৩ জন সংবাদটি পড়েছেন

 রাজবাড়ীতে বিএনপির পদযাত্রা রূপ নিয়েছে দুই পক্ষের সংঘর্ষে। দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা বিএনপির চার নেতাসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্ত¡রের সামনে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম ও অ্যড. লিয়াকত আলী-হারুন গ্রæপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন গাজী, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফসার আলী সরদার, বিএনপি নেতা মীর লায়েক আলী, পাংশা উপজেলা বিএনপি নেতা বাহারাম সরদার, মুন্না মিয়া, জুয়েল ব্যাপারী, সৌরভ, রবিউল ইসলাম, সহিদুল ইসলাম, মঞ্জুরুল আলম, পলান কর্মকার, আব্দুর রাজ্জাক, সোহেল মোল্লা, মান্নান মির, আক্কাস আলী ও পলাশ। এদের সবাইকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই রাজবাড়ী জেলা বিএনপির দুটি পক্ষ আলাদাভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করে আসছে। অ্যড. লিয়াকত-হারুন গ্রæপ দলীয় কার্যালয়ে এবং আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম তার বাসভবনে কর্মসূচি পালন করে থাকে। মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকে জেলা বিএনপির আহŸায়ক অ্যড. লিয়াকত আলী-সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ গ্রæপ দলীয় কার্যালয়ে জমায়েত হয়। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে খৈয়ম গ্রæপ দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের সময় দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে খৈয়ম গ্রæপের নেতাকর্মীরা পিছু হটে। এর কিছুক্ষণ পরে খৈয়মের নেতৃত্বে খৈয়ম গ্রæপ সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠি সোঠা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে লিয়াকত-হারুন গ্রæপ তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে দ্বিতীয় দফায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। উভয় পক্ষই এসময় ইট পাটকেল ও লাঠিসোঠা ব্যবহার করে। এসময় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্ত¡র, আজাদী ময়দান ও জেলা বিএনপির কার্যালয় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশকে কার্যত নীরব দেখা যায়। খৈয়ম গ্রæপ প্রতিরোধ ভেদ করে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ থেকে আবার ফিরে যায়। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে অন্ততঃ ২০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় দলীয় কার্যালয়ের সভা কক্ষসহ তিনটি কক্ষ, চেয়ার, টেবিল, আলমিরা, পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। খৈয়ম গ্রæপের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঠা হাতে ফিরে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের উপর মৃদু লাঠিচার্জ করে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লিয়াকত-হারুন গ্রæপ দলীয় কার্যালয় থেকে পদযাত্রা বের করে। পদযাত্রাটি শহরের বাজার এলাকার পরিদর্শন করে আবার কার্যালয়ে ফিরে যায়।

ঘটনার পর রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহŸায়ক অ্যড. লিয়াকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, গত তিনদিন ধরে তারা আলোচনা চালাচ্ছেন। যাতে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি সফল করা যায়। আলোচনা এখনও অব্যাহত আছে। সোমবার তারা একসাথে মিটিংও করেছেন। মিটিংয়ের পর বলেছি, আরও একটু সময় লাগবে। তাদের মধ্যে যেসব ভুল বোঝাবুঝি আছে সবকিছু ওভারকাম করতে চান। আমাদের অফিসে ঢোকার পথে আওয়ামী লীগের অফিস। অনেক লোক হলে নিয়ন্ত্রণ করা সমস্যা হয়। সেই জায়গায় কিছু বিশৃঙ্খলা হতে পারে। যেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছি। আমরা এখনও সংযত অবস্থার মধ্যে রয়েছি। ঘটনা কাদের সাথে ঘটেছে এটা এখনও ফাইন্ড আউট করা যায়নি।

রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম তার বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার সারা বাংলাদেশে বিএনপির কর্মসূচি ছিল। এ কমূসূচিকে ঘিরে তাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী সমবেত হয়েছিল। তারা যখন যাচ্ছিলেন তখন সরকার দলীয় প্ররোচনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় কতিপয় সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। শান্তিপূর্ণ একটি পদযাত্রা করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর হয়েছে কীনা তা তিনি জানেন না।

রাজবাড়ী সদর থানার ওসি শাহাদত হোসেন জানান, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে হেফাজতে রেখেছে। এছাড়া আর কোনো আটক বা গ্রেপ্তার নেই। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন জানান, বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

দলীয় কার্যালয় ভাংচুর

রাজবাড়ীতে বিএনপির  দুই পক্ষের সংঘর্ষ  \ আহত ২০

প্রকাশের সময় : ০৯:১০:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩

 রাজবাড়ীতে বিএনপির পদযাত্রা রূপ নিয়েছে দুই পক্ষের সংঘর্ষে। দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা বিএনপির চার নেতাসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্ত¡রের সামনে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম ও অ্যড. লিয়াকত আলী-হারুন গ্রæপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন গাজী, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফসার আলী সরদার, বিএনপি নেতা মীর লায়েক আলী, পাংশা উপজেলা বিএনপি নেতা বাহারাম সরদার, মুন্না মিয়া, জুয়েল ব্যাপারী, সৌরভ, রবিউল ইসলাম, সহিদুল ইসলাম, মঞ্জুরুল আলম, পলান কর্মকার, আব্দুর রাজ্জাক, সোহেল মোল্লা, মান্নান মির, আক্কাস আলী ও পলাশ। এদের সবাইকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই রাজবাড়ী জেলা বিএনপির দুটি পক্ষ আলাদাভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করে আসছে। অ্যড. লিয়াকত-হারুন গ্রæপ দলীয় কার্যালয়ে এবং আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম তার বাসভবনে কর্মসূচি পালন করে থাকে। মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকে জেলা বিএনপির আহŸায়ক অ্যড. লিয়াকত আলী-সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ গ্রæপ দলীয় কার্যালয়ে জমায়েত হয়। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে খৈয়ম গ্রæপ দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের সময় দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে খৈয়ম গ্রæপের নেতাকর্মীরা পিছু হটে। এর কিছুক্ষণ পরে খৈয়মের নেতৃত্বে খৈয়ম গ্রæপ সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠি সোঠা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে লিয়াকত-হারুন গ্রæপ তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে দ্বিতীয় দফায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। উভয় পক্ষই এসময় ইট পাটকেল ও লাঠিসোঠা ব্যবহার করে। এসময় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্ত¡র, আজাদী ময়দান ও জেলা বিএনপির কার্যালয় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশকে কার্যত নীরব দেখা যায়। খৈয়ম গ্রæপ প্রতিরোধ ভেদ করে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ থেকে আবার ফিরে যায়। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে অন্ততঃ ২০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় দলীয় কার্যালয়ের সভা কক্ষসহ তিনটি কক্ষ, চেয়ার, টেবিল, আলমিরা, পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। খৈয়ম গ্রæপের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঠা হাতে ফিরে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের উপর মৃদু লাঠিচার্জ করে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লিয়াকত-হারুন গ্রæপ দলীয় কার্যালয় থেকে পদযাত্রা বের করে। পদযাত্রাটি শহরের বাজার এলাকার পরিদর্শন করে আবার কার্যালয়ে ফিরে যায়।

ঘটনার পর রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহŸায়ক অ্যড. লিয়াকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, গত তিনদিন ধরে তারা আলোচনা চালাচ্ছেন। যাতে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি সফল করা যায়। আলোচনা এখনও অব্যাহত আছে। সোমবার তারা একসাথে মিটিংও করেছেন। মিটিংয়ের পর বলেছি, আরও একটু সময় লাগবে। তাদের মধ্যে যেসব ভুল বোঝাবুঝি আছে সবকিছু ওভারকাম করতে চান। আমাদের অফিসে ঢোকার পথে আওয়ামী লীগের অফিস। অনেক লোক হলে নিয়ন্ত্রণ করা সমস্যা হয়। সেই জায়গায় কিছু বিশৃঙ্খলা হতে পারে। যেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছি। আমরা এখনও সংযত অবস্থার মধ্যে রয়েছি। ঘটনা কাদের সাথে ঘটেছে এটা এখনও ফাইন্ড আউট করা যায়নি।

রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম তার বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার সারা বাংলাদেশে বিএনপির কর্মসূচি ছিল। এ কমূসূচিকে ঘিরে তাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী সমবেত হয়েছিল। তারা যখন যাচ্ছিলেন তখন সরকার দলীয় প্ররোচনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় কতিপয় সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। শান্তিপূর্ণ একটি পদযাত্রা করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর হয়েছে কীনা তা তিনি জানেন না।

রাজবাড়ী সদর থানার ওসি শাহাদত হোসেন জানান, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে হেফাজতে রেখেছে। এছাড়া আর কোনো আটক বা গ্রেপ্তার নেই। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন জানান, বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।