গোয়ালন্দ পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ দুদকে \ অভিযোগ অস্বীকার মেয়রের
- প্রকাশের সময় : ০৯:০২:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩
- / ১১১৬ জন সংবাদটি পড়েছেন
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম মন্ডলের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোয়ালন্দ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের নছরউদ্দিন পাড়ার বাসিন্দা ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শহিদ শেখ দুই দফায় দুর্নীতি দমন কমিশন ফরিদপুর ও ঢাকা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সর্বশেষ তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেছেন।
নজরুল ইসলাম মন্ডল গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অভিযোগকারী শহিদ শেখ জানান, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন, ফরিদপুর কার্যালয়ে মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডলের বিরুদ্ধে লিখিত আভিযোগ করেন। এরপর গত ২৫ মে তারিখে ঢাকা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। দুদুকের তদন্তে দৃশ্যমান গতির প্রত্যাশায় তিনি গত ২৬ জুন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত গঠিত বেঞ্চ তিন মাসের মধ্যে দুদুককে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দানের নির্দেশ দিয়েছেন। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গা থেকে তিনি এ অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে শহিদ শেখ উল্লেখ করেছেন, গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম মন্ডল এনজিও কর্মী দিয়ে জীবন শুরু করলেও গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে দৌলতদিয়া ঘাট, যৌনপল্লীতে অবৈধভাবে আয় করে কোটি টাকার মালিক বনে যান। ২০২১ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশনে কাজ পাইয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। গোয়ালন্দ পৌরসভার কাঁচা বাজারের দর ১০ লাখ টাকা উঠলেও পৌরসভার তহবিলে সাত লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকী তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। মহাসড়ক থেকে গোয়ালন্দ বাজার পর্যন্ত প্রধান সড়কের সংস্কার কাজ না করেই সমুদয় বিল তুলে নিয়েছেন। পৌর ভবনে মেয়রের অফিস সাজসজ্জার জন্য চার লাখ টাকা খরচ করলেও ২২ লাখ টাকা বিল তুলে নেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে সোলার লাইট স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি লাইটে দাম ৪৫ হাজার টাকা করে হলেও বিল করা হয়েছে দেড় লাখ টাকা করে। পৌরসভার আপ্যায়ন বাবদ ভুয়া বিল ভাউচার করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত বছর ১৫ আগস্টের শোক দিবসের অনুষ্ঠানে কয়েক কেজি জিলেপী দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু ওই অনুষ্ঠান বাবদ পৌর তহবিল থেকে বিল উঠানো হয় ৬৫ হাজার টাকা।
গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডলের সাথে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কে অভিযোগ করেছে। কী অভিযোগ করেছে সে ব্যাপারে কিছুই জানিনা। কোনো চিঠি বা কাগজপত্রও আমি পাইনি। অভিযোগকারীকে তিনি চেনেন না। গোয়ালন্দ যুবলীগে শহিদ শেখ নামে কেউ নেই।
অভিযোগের বিষয়ে বলেন, মেয়রের কি বিল তুলে নেওয়ার ক্ষমতা আছে? বলেন, শহীদ যদি দুদকে কোনো অভিযোগ করে থাকে তাহলে দুদক আমাকে বলবে। আমি দুদকে জবাব দেব। অফিসিয়ালি আমার কাছে ডকুমেন্ট আসেনি। তাহলে অভিযোগের বিষয়ে কীভাবে বলব। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট ও আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অনেকেই অনেক রকম কথা বলতে পারে। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে। সামনে ইলেকশন। ইলেকশনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগকে কলুষিত করে বিএনপিসহ অন্যান্য লোকজন সুবিধা নিতে পারে।
পরে অভিযোগের কপি তাকে হোয়াটস অ্যপে পাঠালে তিনি ফোন করে বলেন, অভিযোগকারী শহীদকে চিনতে পেরেছি। সে আমার প্রতিপক্ষ। শহীদ গোয়ালন্দ পৌর এলাকার মধ্যে একটি ঘর তুলতে গিয়েছিল। ওই জায়গাটি নিয়ে মামলা চলছে। আমি তাকে নোটিশ করেছিলাম। একারণে সে আমার উপর ক্ষুব্ধ। শহিদকে ডেকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইবেন বলে জানান তিনি।
দুর্নীতি দমন কমিশন, ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম জানান, গোয়ালন্দ মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।