Dhaka ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রাজবাড়ীতে রেল জমিতে বসবাসরতদের উচ্ছেদে মাইকিং

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৯:০৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২
  • / ১১৪৫ জন সংবাদটি পড়েছেন

 রাজবাড়ীতে রেলের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে তিন দিন সময় দিয়ে মাইকিংয়ের প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে রেলের জায়গায় বসবাসরত বাসিন্দারা।

সকালে রেল স্টেশন চত্ত¡র থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত¡রে গিয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে বাসিন্দারা রেলের অন্যায় ও অমানবিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য জোড় দাবি জানান। সমাবেশে এক পর্যায়ে উপস্থিত হয়ে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন, রাজবাড়ী রেলওয়ের এইএন (সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী) গৌতম বিশ^াস রাজবাড়ীতে যোগ দেওয়ার পর থেকে উল্টাপাল্টা অনেক কিছু হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে আইন আপনাদেরও মেনে চলতে হবে। আপনাদের বিষয়টার সুষ্ঠু সমাধান হয় সে কথা আমি মিটিংয়ে (আইনশৃঙ্খলা মিটিং) বলে এসেছি। রাজবাড়ীর বেশির ভাগ জায়গাই রেলের। সবচেয়ে বড় কথা জনগণকে ক্ষতি করে আমরা কোনো কাজ করতে চাইনা। বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের গোচরে আনতে হবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ী রেল স্টেশনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে এবং বিনোদপুর এলাকায় রয়েছে রেলের কোয়ার্টার। এসব কোয়ার্টারে যারা বাস করে তারা রেলকে কোনো ভাড়া দেয় না। এছাড়া রেলের জমিতে অবৈধভাবে ঘর তুলে বসবাস করছে অনেকে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার পরিবার বসবাস করে রেলের জায়গা ও কোয়ার্টারে।

 রেল কোয়ার্টারের বাসিন্দা চঞ্চল কুন্ডু জানান, তার বাবা রেলে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে তারা রেলের কোয়ার্টারে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন। রেল থেকে তাদের কাছে কখনও ভাড়া চায়নি, তারাও আর দেননি। রোববার রেল কর্তৃপক্ষ মাত্র তিন দিন সময় দিয়ে উচ্ছেদের জন্য এলাকায় মাইকিং করেছে। এখন তারা পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন? রেল কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারতো।  তারা যে কোনো শর্তে বা চুক্তিতে থাকতে চান রেলের কোয়ার্টারে বলে জানান তিনি।

আকবর খান নামে এক ব্যক্তি জানান, তার নানা রেলে চাকরি করতেন। সেই সূত্রে নানার আমল থেকে এখন পর্যন্ত দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে বসবাস করছেন। রেল কর্তৃপক্ষ কখনও তাদের কিছু বলেনি। না লীজ, না ভাড়া কোনো ধরনের চুক্তিই করেনি। একারণে তারা এভাবেই বসবাস করছেন। হঠাৎ করে তাদের এভাবে উচ্ছেদ করে দিলে পরিবার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। এটা খুবই অন্যায় এবং অমানবিক হবে।

রাজবাড়ী রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গৌতম বিশ^াস বলেন, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কানুনগো অফিস এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে তার করণীয় কিছু নেই।

তাকে অভিযুক্ত করার বিষয়ে বলেন, এখানে আমাকে দায়ী করার কোনো মানে নেই। অন্ধকারে ঢিল মেরে তো লাভ নেই। তারা অবৈধভাবে বছরের পর বছর বসবাস করে আসছে। রেল এখন সব জায়গায় অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছে। আমাকে অভিযুক্ত করার কারণ, রেলের জায়গা দখলে বাধা দেওয়ায় একটি মহল আমার উপর নাখোশ হয়েছে। যখন কেউ দখল করছে আমি গিয়ে বাধা দিচ্ছি যেকারণে খারাপ হয়ে যাচ্ছি। রেলের কাজ রেলের মত করে করতে দিলে কারো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।

রাজবাড়ী রেলওয়ের কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ তারা পালন করেছেন মাত্র। আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত তাদেরকে সময় দেওয়া হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাজবাড়ীতে রেলের জায়গায় অবৈধ দখলে রেখেছে বহু মানুষ। এছাড়া রেলের কোয়ার্টারেও অবৈধভাবে বসবাস করছে অনেকে। এতো লোককে লিখিত নোটিশ দেওয়া সম্ভব নয়। একারণে তারা মাইকিং করেছেন। ইতিপূর্বে বারংবার তাদের দখল ছাড়তে বলা হলেও তারা সেটি মানেননি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রাজবাড়ীতে রেল জমিতে বসবাসরতদের উচ্ছেদে মাইকিং

প্রকাশের সময় : ০৯:০৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২

 রাজবাড়ীতে রেলের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে তিন দিন সময় দিয়ে মাইকিংয়ের প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে রেলের জায়গায় বসবাসরত বাসিন্দারা।

সকালে রেল স্টেশন চত্ত¡র থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত¡রে গিয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে বাসিন্দারা রেলের অন্যায় ও অমানবিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য জোড় দাবি জানান। সমাবেশে এক পর্যায়ে উপস্থিত হয়ে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন, রাজবাড়ী রেলওয়ের এইএন (সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী) গৌতম বিশ^াস রাজবাড়ীতে যোগ দেওয়ার পর থেকে উল্টাপাল্টা অনেক কিছু হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে আইন আপনাদেরও মেনে চলতে হবে। আপনাদের বিষয়টার সুষ্ঠু সমাধান হয় সে কথা আমি মিটিংয়ে (আইনশৃঙ্খলা মিটিং) বলে এসেছি। রাজবাড়ীর বেশির ভাগ জায়গাই রেলের। সবচেয়ে বড় কথা জনগণকে ক্ষতি করে আমরা কোনো কাজ করতে চাইনা। বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের গোচরে আনতে হবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ী রেল স্টেশনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে এবং বিনোদপুর এলাকায় রয়েছে রেলের কোয়ার্টার। এসব কোয়ার্টারে যারা বাস করে তারা রেলকে কোনো ভাড়া দেয় না। এছাড়া রেলের জমিতে অবৈধভাবে ঘর তুলে বসবাস করছে অনেকে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার পরিবার বসবাস করে রেলের জায়গা ও কোয়ার্টারে।

 রেল কোয়ার্টারের বাসিন্দা চঞ্চল কুন্ডু জানান, তার বাবা রেলে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে তারা রেলের কোয়ার্টারে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন। রেল থেকে তাদের কাছে কখনও ভাড়া চায়নি, তারাও আর দেননি। রোববার রেল কর্তৃপক্ষ মাত্র তিন দিন সময় দিয়ে উচ্ছেদের জন্য এলাকায় মাইকিং করেছে। এখন তারা পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন? রেল কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারতো।  তারা যে কোনো শর্তে বা চুক্তিতে থাকতে চান রেলের কোয়ার্টারে বলে জানান তিনি।

আকবর খান নামে এক ব্যক্তি জানান, তার নানা রেলে চাকরি করতেন। সেই সূত্রে নানার আমল থেকে এখন পর্যন্ত দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে বসবাস করছেন। রেল কর্তৃপক্ষ কখনও তাদের কিছু বলেনি। না লীজ, না ভাড়া কোনো ধরনের চুক্তিই করেনি। একারণে তারা এভাবেই বসবাস করছেন। হঠাৎ করে তাদের এভাবে উচ্ছেদ করে দিলে পরিবার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। এটা খুবই অন্যায় এবং অমানবিক হবে।

রাজবাড়ী রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গৌতম বিশ^াস বলেন, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কানুনগো অফিস এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে তার করণীয় কিছু নেই।

তাকে অভিযুক্ত করার বিষয়ে বলেন, এখানে আমাকে দায়ী করার কোনো মানে নেই। অন্ধকারে ঢিল মেরে তো লাভ নেই। তারা অবৈধভাবে বছরের পর বছর বসবাস করে আসছে। রেল এখন সব জায়গায় অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছে। আমাকে অভিযুক্ত করার কারণ, রেলের জায়গা দখলে বাধা দেওয়ায় একটি মহল আমার উপর নাখোশ হয়েছে। যখন কেউ দখল করছে আমি গিয়ে বাধা দিচ্ছি যেকারণে খারাপ হয়ে যাচ্ছি। রেলের কাজ রেলের মত করে করতে দিলে কারো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।

রাজবাড়ী রেলওয়ের কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ তারা পালন করেছেন মাত্র। আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত তাদেরকে সময় দেওয়া হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাজবাড়ীতে রেলের জায়গায় অবৈধ দখলে রেখেছে বহু মানুষ। এছাড়া রেলের কোয়ার্টারেও অবৈধভাবে বসবাস করছে অনেকে। এতো লোককে লিখিত নোটিশ দেওয়া সম্ভব নয়। একারণে তারা মাইকিং করেছেন। ইতিপূর্বে বারংবার তাদের দখল ছাড়তে বলা হলেও তারা সেটি মানেননি।