Dhaka ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শেষের পথে

এখনও সরকারি সহায়তা পাননি জেলেরা, মানবেতর জীবনযাপন

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ১০:৫৩:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২
  • / ১১১৬ জন সংবাদটি পড়েছেন

 মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান প্রায় শেষের দিকে। এখনও সরকারি সহায়তা পাননি রাজবাড়ীর বেশিরভাগ জেলে। জেলার ১৩ হাজার জেলের মধ্যে চাল প্রাপ্তির জন্য তালিকা চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে ৪ হাজার ৭শ জনের। সেটাও এখনও মেলেনি অনেকের ভাগ্যে। জেলার দুই উপজেলার কিছু সংখ্যক জেলে পেয়েছেন সরকারি বরাদ্দের চাল। তবে, সেখানেও আছে অনিয়মের অভিযোগ। সরকারি সহায়তা বঞ্চিত বেকার জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে করছেন মানবেতর জীবনযাপন। এদিকে ঢিলোঢালা অভিযানের সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু জেলে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করেই চলেছে। অভিযানে ধরা পড়লেও অর্থের বিনিময়ে ছাড়া পাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও বিষয়টি স্বীকার করেননি মৎস্য কর্মকর্তারা।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলার মধ্যে চারটিই পদ্মা নদী বেষ্টিত। এগুলো হলো গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী সদর, কালুখালী ও পাংশা। এ চার উপজেলায় তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৩৮ জন। এর মধ্যে সরকারি সহায়তা প্রাপ্তির জন্য ৪ হাজার ৭শ জনের নাম চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। জেলার কালুখালী ও গোয়ালন্দ উপজেলায় চাল বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। রাজবাড়ী সদরের ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে পদ্মা নদী বেষ্টিত দাদশী ও চন্দনী ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার দেওয়া হয়েছে। বাকী ইউনিয়নগুলোতে শনিবার দেওয়ার কথা রয়েছে।

মৎস্য অফিস জানিয়েছে, যেসব জেলে ইলিশ শিকার করে তারাই পাবে সরকারি সহায়তা। যেখানে নদীতে জাল ফেলাই নিষিদ্ধ সেখানে ইলিশ শিকারিরাই কেন পাবে? অন্যরা কেন নয়? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর মৎস্য কর্মকর্তাদের কাছে নেই।

চলতি ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে গত ৭  অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত জেলা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে ১২৯টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। মামলা হয়েছে ৫৪টি । বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে ৩৫ জন জেলেকে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে মোট এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা। মাছ উদ্ধার হয়েছে ১৭১ কেজি।

বৃহস্পতিবার রাজবাড়ী সদর উপজেলার বড়চর বেনিনগর গ্রামের পদ্মা নদীর তীরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেকার হয়ে পড়া জেলেরা অলস সময় পার করছেন। কেউ বসে গল্প করছেন। কেউ তাস লুডু খেলছেন। নদী দিয়ে স্পীড বোডে করে অভিযান চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এসময় কথা হয় কয়েকজন জেলের সাথে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার সিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলে সাহেব উদ্দিন জানান, স্ত্রী, দুই ছেলেসহ আটজনের পরিবার তার। তারা দুই ভাই পেশায় মৎস্যজীবী। তালিকায়ও নাম আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা তারা পাননি। নদীতে মাছ শিকার নিষিদ্ধ করায় তারা বাড়িতে বেকার সময় কাটাচ্ছেন। ধার দেনা করে সংসার চালাচ্ছেন। ধার দেনার টাকা ফুরিয়ে গেলে সওদা কিনতে হয় বাকীতে। দোকানদার বাকী দিতে চায় না। জোর জবরদস্তি করে সওদা নেন। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি নির্দেশনা তারা ঠিকই মানছেন। কিন্তু অনেকেই দিনে রাতে লুকিয়ে নদীতে মাছ ধরছেন। একই কথা জানালেন জেলে খোকন সরদার, সিরাজুল ইসলামসহ অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নদীতে মাছ ধরছেন অভিযানে আসা লোকেদের কাছে ধরা পড়লে টাকা দিয়ে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।

রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, গোয়ালন্দ ও কালুখালী এ দুই উপজেলায় প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে সরকারি বরাদ্দের চাল দেওয়া হয়েছে। সদরের চন্দনী ও দাদশী ইউনিয়নে আজ (বৃহঃবার) দেওয়া হয়েছে। শনিবারের মধ্যে বাকীদের দেওয়া হবে।  ইলিশ ধরার সাথে সম্পৃক্ত যারা তারাই শুধু পাবে। বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৭ অক্টোবর। জেলেদের বাছাই করতে একটু সময় লেগে গেছে।

টাকার বিনিময়ে অসাধু জেলেদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে বলেন, এরকম সঠিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের কোনো লোক এর সাথে জড়িত নয়। আমি নিজে এসব মনিটরিং করি। কিছু সোর্সও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শেষের পথে

এখনও সরকারি সহায়তা পাননি জেলেরা, মানবেতর জীবনযাপন

প্রকাশের সময় : ১০:৫৩:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২

 মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান প্রায় শেষের দিকে। এখনও সরকারি সহায়তা পাননি রাজবাড়ীর বেশিরভাগ জেলে। জেলার ১৩ হাজার জেলের মধ্যে চাল প্রাপ্তির জন্য তালিকা চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে ৪ হাজার ৭শ জনের। সেটাও এখনও মেলেনি অনেকের ভাগ্যে। জেলার দুই উপজেলার কিছু সংখ্যক জেলে পেয়েছেন সরকারি বরাদ্দের চাল। তবে, সেখানেও আছে অনিয়মের অভিযোগ। সরকারি সহায়তা বঞ্চিত বেকার জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে করছেন মানবেতর জীবনযাপন। এদিকে ঢিলোঢালা অভিযানের সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু জেলে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করেই চলেছে। অভিযানে ধরা পড়লেও অর্থের বিনিময়ে ছাড়া পাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও বিষয়টি স্বীকার করেননি মৎস্য কর্মকর্তারা।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলার মধ্যে চারটিই পদ্মা নদী বেষ্টিত। এগুলো হলো গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী সদর, কালুখালী ও পাংশা। এ চার উপজেলায় তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৩৮ জন। এর মধ্যে সরকারি সহায়তা প্রাপ্তির জন্য ৪ হাজার ৭শ জনের নাম চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। জেলার কালুখালী ও গোয়ালন্দ উপজেলায় চাল বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। রাজবাড়ী সদরের ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে পদ্মা নদী বেষ্টিত দাদশী ও চন্দনী ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার দেওয়া হয়েছে। বাকী ইউনিয়নগুলোতে শনিবার দেওয়ার কথা রয়েছে।

মৎস্য অফিস জানিয়েছে, যেসব জেলে ইলিশ শিকার করে তারাই পাবে সরকারি সহায়তা। যেখানে নদীতে জাল ফেলাই নিষিদ্ধ সেখানে ইলিশ শিকারিরাই কেন পাবে? অন্যরা কেন নয়? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর মৎস্য কর্মকর্তাদের কাছে নেই।

চলতি ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে গত ৭  অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত জেলা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে ১২৯টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। মামলা হয়েছে ৫৪টি । বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে ৩৫ জন জেলেকে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে মোট এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা। মাছ উদ্ধার হয়েছে ১৭১ কেজি।

বৃহস্পতিবার রাজবাড়ী সদর উপজেলার বড়চর বেনিনগর গ্রামের পদ্মা নদীর তীরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেকার হয়ে পড়া জেলেরা অলস সময় পার করছেন। কেউ বসে গল্প করছেন। কেউ তাস লুডু খেলছেন। নদী দিয়ে স্পীড বোডে করে অভিযান চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এসময় কথা হয় কয়েকজন জেলের সাথে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার সিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলে সাহেব উদ্দিন জানান, স্ত্রী, দুই ছেলেসহ আটজনের পরিবার তার। তারা দুই ভাই পেশায় মৎস্যজীবী। তালিকায়ও নাম আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা তারা পাননি। নদীতে মাছ শিকার নিষিদ্ধ করায় তারা বাড়িতে বেকার সময় কাটাচ্ছেন। ধার দেনা করে সংসার চালাচ্ছেন। ধার দেনার টাকা ফুরিয়ে গেলে সওদা কিনতে হয় বাকীতে। দোকানদার বাকী দিতে চায় না। জোর জবরদস্তি করে সওদা নেন। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি নির্দেশনা তারা ঠিকই মানছেন। কিন্তু অনেকেই দিনে রাতে লুকিয়ে নদীতে মাছ ধরছেন। একই কথা জানালেন জেলে খোকন সরদার, সিরাজুল ইসলামসহ অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নদীতে মাছ ধরছেন অভিযানে আসা লোকেদের কাছে ধরা পড়লে টাকা দিয়ে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।

রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, গোয়ালন্দ ও কালুখালী এ দুই উপজেলায় প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে সরকারি বরাদ্দের চাল দেওয়া হয়েছে। সদরের চন্দনী ও দাদশী ইউনিয়নে আজ (বৃহঃবার) দেওয়া হয়েছে। শনিবারের মধ্যে বাকীদের দেওয়া হবে।  ইলিশ ধরার সাথে সম্পৃক্ত যারা তারাই শুধু পাবে। বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৭ অক্টোবর। জেলেদের বাছাই করতে একটু সময় লেগে গেছে।

টাকার বিনিময়ে অসাধু জেলেদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে বলেন, এরকম সঠিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের কোনো লোক এর সাথে জড়িত নয়। আমি নিজে এসব মনিটরিং করি। কিছু সোর্সও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।