Dhaka ০১:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক সাথে জন্ম নেয়া তিন শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হতদরিদ্র পরিবার

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৮:১৫:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২১
  • / 195

জনতার আদালত অনলাইন ভাঙা ঘরের ফর্ঁাক দিয়ে চাঁদের আলো দেখতে ক্ষণিকের জন্য ভালো লাগে। কিন্তু সেখানে দিনের পর দিন যেমন ভালো লাগে না, ঠিক তেমনই এক সাথে তিন পুত্র সন্তানের পিতা হয়ে যেমন আকাশ ছোঁয়া খুশি হয়েছিলেন হতদরিদ্র কিরণ মুন্সি। কিন্তু কয়েকদিন যেতেই তার সেই আনন্দের বন্যায় ভাটা পড়েছে। প্রিয় সন্তানদের মুখের আহার যোগাতে তার সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। এনিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের শাহদত মেম্বার পাড়া গ্রামের দিনমজুর কিরণ মুন্সি’র স্ত্রী ববিতা বেগম (২৮) গত ৪ নভেম্বর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক ভাবে একে একে তিনটি সুস্থ্য পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পরিবারে নতুন সদস্যের আগমনে খুশিতে আত্মহারা কিরণ মুন্সি সন্তানদের নাম রাখেন তামিম, তাসিন, তানজিল। কিন্তু দিন গড়ানোর সাথে সাথে তার সে আনন্দ ফিকে হয়ে ওঠে। কারণ তিনটি শিশু সন্তানকে লালন পালন করতে যে খরচ হয়, তা তিনি রোজগারও করতে পারেন না।  ইতিমধ্যেই তাদের ২৪ দিন বয়সী ওই তিন শিশুর লালন-পালন ও চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।

সরেজমিনে জানা যায়, নদী ভাঙনে সহায়-সম্বল হারিয়ে ববিতা-কিরণ দম্পতি আশ্রয় নেন দৌলতদিয়া শাহাদাৎ মেম্বার পাড়া এলাকায়। সেখানেই তিন শতাংশ জমি লীজ নিয়ে কোনমতে মাথা গোজার ঠাই করে নেন কিরণ। জীবিকার তাগিদে কখনো হকারী, কখনো বা দিমজুরের কাজ করে কোন মতে ভরনপোশন করেন পরিবারের। তাদের ৭ বছর বয়সী আরো একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, পরিবারটি খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। এমনিতেই ৩জনের সংসারে অভাবের শেষ নেই। তার উপর আরো তিনটি শিশু সন্তান নিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পরেছেন। আশেপাশের লোকজন যে যতটুকু পাড়ছে সহযোগিতা করছে, কিন্তু এভাবে কয় দিন। সরকার যদি ওদেরকে একটু সহযোগিতা করতো তাহলে পরিবারটি বেঁচে যেত।

গৃহবধু ববিতা বেগম বলেন, আল্লাহ আমার ঘরে ফুটফুটে তিনটি পূত্র সন্তান দিয়েছেন। এই তিনটি সন্তান লালন-পালন করতে গিয়ে ধারদেনা করে আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি। সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে ওদের খাবারের জন্য কষ্ট দিতে পারি না। কিন্তু আমাদের কতটুকু সামর্থ আছে।

তিন সন্তানের পিতা কিরণ মুন্সি জানান, তিনটি সন্তানের জন্য প্রতিদিন একটি ল্যাকটোজেন ওয়ান ও মিসরি লাগে যার দাম প্রায় সাড়ে ৬শ টাকা। এর উপর আবার আমাদের নিজেদেরও তো পেট আছে। আমি দিনমজুরের কাজ করে প্রতিদিন ৪শ থেকে ৫শ টাকা আয় করি। যার কারণে প্রতিদিনই কারো না করো কাছ থেকে ধারদেনা করে ওদের খাবার যোগাতে হয়। এভাবে আর কয়দিন চলবে।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজিজুল হক খান মামুন জানান, হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া তিন শিশু যাতে সমাজের অন্যান্য শিশুদের মত সমান সুযোগ পেয়ে বড় হতে পারে, সেজন্য গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। এই শিশুই হয়তো আগামীতে দেশ বরেণ্য মানুষ হয়ে উঠবে। এ সময় তিনি সমাজের সামর্থ্যবান মানুষেকেও এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

এক সাথে জন্ম নেয়া তিন শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হতদরিদ্র পরিবার

প্রকাশের সময় : ০৮:১৫:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

জনতার আদালত অনলাইন ভাঙা ঘরের ফর্ঁাক দিয়ে চাঁদের আলো দেখতে ক্ষণিকের জন্য ভালো লাগে। কিন্তু সেখানে দিনের পর দিন যেমন ভালো লাগে না, ঠিক তেমনই এক সাথে তিন পুত্র সন্তানের পিতা হয়ে যেমন আকাশ ছোঁয়া খুশি হয়েছিলেন হতদরিদ্র কিরণ মুন্সি। কিন্তু কয়েকদিন যেতেই তার সেই আনন্দের বন্যায় ভাটা পড়েছে। প্রিয় সন্তানদের মুখের আহার যোগাতে তার সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। এনিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের শাহদত মেম্বার পাড়া গ্রামের দিনমজুর কিরণ মুন্সি’র স্ত্রী ববিতা বেগম (২৮) গত ৪ নভেম্বর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক ভাবে একে একে তিনটি সুস্থ্য পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পরিবারে নতুন সদস্যের আগমনে খুশিতে আত্মহারা কিরণ মুন্সি সন্তানদের নাম রাখেন তামিম, তাসিন, তানজিল। কিন্তু দিন গড়ানোর সাথে সাথে তার সে আনন্দ ফিকে হয়ে ওঠে। কারণ তিনটি শিশু সন্তানকে লালন পালন করতে যে খরচ হয়, তা তিনি রোজগারও করতে পারেন না।  ইতিমধ্যেই তাদের ২৪ দিন বয়সী ওই তিন শিশুর লালন-পালন ও চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।

সরেজমিনে জানা যায়, নদী ভাঙনে সহায়-সম্বল হারিয়ে ববিতা-কিরণ দম্পতি আশ্রয় নেন দৌলতদিয়া শাহাদাৎ মেম্বার পাড়া এলাকায়। সেখানেই তিন শতাংশ জমি লীজ নিয়ে কোনমতে মাথা গোজার ঠাই করে নেন কিরণ। জীবিকার তাগিদে কখনো হকারী, কখনো বা দিমজুরের কাজ করে কোন মতে ভরনপোশন করেন পরিবারের। তাদের ৭ বছর বয়সী আরো একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, পরিবারটি খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। এমনিতেই ৩জনের সংসারে অভাবের শেষ নেই। তার উপর আরো তিনটি শিশু সন্তান নিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পরেছেন। আশেপাশের লোকজন যে যতটুকু পাড়ছে সহযোগিতা করছে, কিন্তু এভাবে কয় দিন। সরকার যদি ওদেরকে একটু সহযোগিতা করতো তাহলে পরিবারটি বেঁচে যেত।

গৃহবধু ববিতা বেগম বলেন, আল্লাহ আমার ঘরে ফুটফুটে তিনটি পূত্র সন্তান দিয়েছেন। এই তিনটি সন্তান লালন-পালন করতে গিয়ে ধারদেনা করে আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি। সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে ওদের খাবারের জন্য কষ্ট দিতে পারি না। কিন্তু আমাদের কতটুকু সামর্থ আছে।

তিন সন্তানের পিতা কিরণ মুন্সি জানান, তিনটি সন্তানের জন্য প্রতিদিন একটি ল্যাকটোজেন ওয়ান ও মিসরি লাগে যার দাম প্রায় সাড়ে ৬শ টাকা। এর উপর আবার আমাদের নিজেদেরও তো পেট আছে। আমি দিনমজুরের কাজ করে প্রতিদিন ৪শ থেকে ৫শ টাকা আয় করি। যার কারণে প্রতিদিনই কারো না করো কাছ থেকে ধারদেনা করে ওদের খাবার যোগাতে হয়। এভাবে আর কয়দিন চলবে।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজিজুল হক খান মামুন জানান, হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া তিন শিশু যাতে সমাজের অন্যান্য শিশুদের মত সমান সুযোগ পেয়ে বড় হতে পারে, সেজন্য গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। এই শিশুই হয়তো আগামীতে দেশ বরেণ্য মানুষ হয়ে উঠবে। এ সময় তিনি সমাজের সামর্থ্যবান মানুষেকেও এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।