করোনাকালে ভালো নেই যৌনকর্মীরা
- প্রকাশের সময় : ০৭:০৪:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১
- / 557
জনতার আদালত অনলাইন ॥ দুই তিন দিন না খাইয়ে আছি। লকডাউনে যদি কোন লোক না ঢোকে তাইলে আমরা কামাই করবো কেম্মা আর খাবোই কি? একজনের কাছ থেইকা ৫শত টাকা কজ্জো করে দুই কেজি চাল,ডাল ও তরকারি কিনে খাইছি। কিন্তু এম্মা আর কয় দিন চলবো জানি নে। করোনায় না মরলিও খিদের জ্বালায় ঠিকই মরবোনে। এভাবেই কষ্টের কথা বলছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লীর যৌনকর্মীরা। ঘরে চাউল নাই,ডাল নাই, এক বেলা খেলে আরেক বেলার খাবার থাকে না। কোন খদ্দের আসছে না। যে কারনে ঘরে খাবারও থাকছে না। বাচ্চারা খিদার জ্বালায় কাঁদে। এর সাথে আবার যোগ হচ্ছে বাড়িওয়ালীর কাছে ঘর ভাড়ার দেনা। বেলি এবং হামিদা বেগমই নয় এই পল্লীর অধিকাংশ যৌনকর্মীর একই অবস্থা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ফাঁকা বাড়িতে শুনসান নিরবতা । কোথাও কেউ নেই । কয়েক দিন আগেও যেখানে ছিল মানুষের সমাগম এখন সেখানে ভূতুরে পরিবেশ। করোনার সংক্রমণ রোধে ৫ এপ্রিল থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ দিয়ে এক সপ্তাহের লকডাউন শেষে আবার ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। তখন থেকেই অথাৎ ৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লী। ৬টি প্রবেশ পথের মধ্যে ১ পথ খোলা রেখে ৫টি প্রবেশ পথ বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে খাবার হোটেল ও দোকান পাট । জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এই পল্লীর কেউ বাহিরে যেতে পারবেনা, এমনকি বাহির থেকে কোন লোক প্রবেশ করতে পারবে না । খদ্দের আসা-যাওয়া না থাকায় বন্ধ রয়েছে এই পল্লীর বাসিন্দাদের আয় রোজগার । প্রতিদিন হাজার লোকের আসা-যাওয়া ছিল সেখানে লকডাউনের কারণে পুরুষশূণ্য । এই পল্লীতে ২ হাজারের বেশি যৌন কমীর বসবাস। চলমান লকডাউনে আয় রোজগার না থাকায় রয়েছে চরম অর্থ সংকটে।
কয়েকজন যৌনকর্মী জানান, গত বছর লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে অনেক ত্রাণ ও আর্থিক সহযোগিতা পেলেও এবার কোন সহযোগিতা নেই। জমানো যা ছিলো এরই মধ্যে খরচ হয়েগেছে।তার ওপর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাড়িওয়ালীর কাছে ঘর ভাড়ার দেনা। চলমান লকডাউন নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছে । গত বছর লকডাউনে পুলিশ ত্রাণ দিছে,অনান্য সংস্থা ত্রাণ দিয়েছে কিন্তু এবার কেউ কোন ত্রাণ দিচ্ছে না। সরকারের কাছে দাবি আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য।
অসহায় নারী ঐক্য সংগঠনের নেত্রী ঝুমুর বেগম জানান, আমাদের সার্বিক সহযোগীতা করে থাকেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান স্যার। ইতিমধ্যেই রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এম.এম.শাকিলুজ্জামান স্যার এবং গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্যার আবদুল্লাহ আল তায়েবির আশস্ত করেছে ত্রাণ দিবেন। কিন্তু কবে সেটা জানি না। গত বছরের লকডাউনে এই পল্লীর বাসিন্দাদের খাবারের কোন কমতি ছিলো না। এবছর একটি সংগঠন থেকে দুই শত মানুষের জন্য ত্রাণ পেয়েছে। যেটা একেবারেই অল্প। কিন্তু এখানে ২ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এরপর যদি আরও লকডাউনের সময় বাড়ে তাহলে আমারা করোনায় মরবো না,আমরা না খেয়ে মারা যাবো।
গোয়ালন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি, মোঃ মোস্তফা মুন্সী জানান, সরকারি যে ত্রাণ গতবছরের লকডাউনে এসেছিলো। তার থেকে দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীদের সর্বোচ্চ সহযোগীতা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এবারও তাদের সহযোগীতা করবার জন্য তালিকা করা হচ্ছে । তালিকার কাজ শেষ হলেই তাদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দেওয়া হবে।