মেয়ের সাফল্যে মায়েরও আছে ভূমিকা
- প্রকাশের সময় : ০৭:২৩:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০১৯
- / ২০৩৭ জন সংবাদটি পড়েছেন
সৌমিত্র শীল ॥ সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে বাবা-মায়ের রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। বিশেষ করে মায়ের ভূমিকা অগ্রগণ্য।
রাজবাড়ী শহরের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা রিনা দত্ত একজন স্কুল শিক্ষিকা। তার বড় মেয়ে সেবন্তি ঘোষ রিমঝিম উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। মায়ের কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা আর অনুশাসনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা রিমঝিম তার সব কৃতিত্ব দিতে চায় মাকেই। রিমঝিমকে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার পাশাপাশি তার সকল ভালো কাজেও উৎসাহ জুগিয়েছেন রিনা দত্ত।
একথা সবারই জানা; কেউ মেধাবী হয়ে জন্মায় না। মেধাবী হয়ে ওঠে পরিশ্রম আর সাধনার ফলে। রিমঝিম প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ৫ পাওয়ার পাশাপাশি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। জেএসসি, এসএসসিতে পাশ করে গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে। ২০১৯ সালে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকেও ভাল ফল করে। ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক এবং ঘ ইউনিট, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। একজন ভালো মানুষ একজন ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবার করার অদম্য ইচ্ছার কারণে সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে রিমঝিম।
লেখাপড়ার পাশাপাশি রিমঝিম গান, আবৃত্তি, বিতর্কতেও সমান পারদর্শী। নিজ ঘরের আলমিরা ভর্তি তার পুরষ্কার এবং ক্রেস্ট। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে সে স্বর্ণকিশোরী মনোনীত হয়েছে। সারা দেশের মধ্যে তার অবস্থান ছিল চতুর্থতম।
রিমঝিম বলেন, তার মা তার অনুপ্রেরণা। আমি এটুকু বুঝি মা যা করবেন তা আমার ভালোর জন্যই করবেন। আমার ভালো মায়ের চেয়ে বেশি আর কেউ বুঝবে না। বরং আমার এটা ভেবে ভালো লাগে যে, আমি মায়ের খুব বাধ্য। ভালো কিছু যখন যা করতে চেয়েছি মা আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। ভালো মন্দের তফাৎটা শিখিয়েছেন। আমার এ সাফল্যের পেছনে মায়ের রয়েছে অনেক অবদান।
রিমেঝিম জানায়, ভালো কিছু করতে হলে নিজের বেসিক ভালো থাকতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। আর আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজের কাজ নিজেকেই ঠিকভাবে করতে হবে। তাহলেই জীবনে সাফল্য আসবে।
সেবন্তী ঘোষ রিমঝিমের মা রিনা দত্ত বলেন, ছোটবেলা থেকেই রিমঝিমকে আমার নিজের মত করে বড় করেছি। এটা ভালো লাগতো যে, সে আমার কথা শুনতো। মেয়েদের বেড়ে ওঠার সময়টাতে অনেক কিছুর প্রতি কৌতুহল থাকে। সেসব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছি। লেখাপড়ার পাশাপাশি রিমঝিমকে সংস্কৃতিমনা হিসেবে গড়ে তুলতে সব রকমের চেষ্টা করেছি। অবাধ স্বাধীনতা যেমন দিয়েছি তেমনি কঠোর শৃঙ্খলার ভেতরেও রেখেছি। ব্যাপারটা এমন ঘুড়ি ছেড়ে দিয়ে নাটাইটা হাতে রেখেছি। তাকে এটা বুঝিয়েছি এসমটাতে মানুষ বেশি ভুল করে। একবার ভুল করলে আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তখন শুধুই অনুশোচনায় পুড়তে হবে।
রিনা দত্ত বলেন, বাবা অথবা মা হিসেবে সন্তানকে নৈতিকভাবে ন্যায়নিষ্ঠ এমন এক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে দেখা খুবই পরিতৃপ্তিদায়ক। আমি চাই রিমঝিম একজন ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। তবে এমন ফলাফল পেতে হলে বাবা মাকে একজন আর্দশ ব্যক্তি, সহযোগী, ভাববিনিময়কারী এবং শিক্ষক হিসেবে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও সমস্ত সন্তান নৈতিকভাবে কাজ করার মৌলিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। তবুও সন্তানরা পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মাকেই ধীরে ধীরে নৈতিক মূল্যবোধকে গেঁথে দিতে হবে।