Dhaka ১১:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীর চরধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুঃখগাথা

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৫৮:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর ২০১৮
  • / ১৯৭০ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ আবারও নদী ভাঙনের কবলে পড়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোদারবাজার এলাকায় নদী তীরবর্তী চরধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এতে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ও সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম সংশয়। হতাশা আর দুঃখ বিরাজ করছে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে। ইতিপূর্বেও বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের কবলে পড়েছিল।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, চরধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আগে নদীর ওপারে ছিল। ২০১২ সালে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয় ভবন বিলীন হয়ে যায়। ওই সময় বেশকিছু দিন বন্ধ ছিল পাঠদান। আপৎকালীন সময়ে রাজবাড়ী গোদারবাজার এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত নজরুল ইসলাম গাজী তার বাড়িতে ক্লাস করার সম্মতি দেন। পরে সাত শতক জমি স্কুলের জন্য দান করে তিনি অন্যত্র বসবাস শুরু করেন। তবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিদ্যালয় সরিয়ে আনার ফলে ছাত্রÑছাত্রী খুব একটা ছিল না। এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার জন্য রাস্তা হয়নি। অন্যের জমির উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। শ্রেণিকক্ষ মাত্র দুটি। যেকারণে অনেক সময় বারান্দায় বসিয়ে ক্লাস করতে হতো। বিদ্যালয় ভবনের চাল চুইয়ে পানি পড়তো। ঝড় বৃষ্টি হলে দিতে হতো ছুটি। এছাড়া বিদ্যালয়টির সামনে যথেষ্ট জায়গা না থাকায় করা যেত না সমাবেশ। এতো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল স্কুলটি। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যা একশ ৪৮ জন। শিক্ষক রয়েছেন চারজন। বিগত বছরগুলোতে সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলও ভাল। পাশের হার প্রায় শতভাগ। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়টি পড়েছে চরম অনিশ্চয়তার মুখে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর নদী ভাঙন শুরু হওয়ার পরদিন থেকেই বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের সকল আসবাবপত্র সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার নিরাপদের জন্য অন্যত্র চলে গেছে।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের বসতঘরের মত স্কুলটির কাঠামো। বরান্দার সামনে গ্রীল। আঙিনা বলতে অল্প একটু জায়গা। বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষ বন্ধ রয়েছে। খোলা রয়েছে শিক্ষকদের কক্ষটি। সেখানে কয়েকজন ছাত্রী মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছিল। একই কক্ষে ছিলেন প্রধান শিক্ষক দোলেনা সুলতানা ও দুজন সহকারী শিক্ষিকা।
বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হলেও চলছিল প্রাথমিক সমাপনীর মডেল টেস্ট পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী ঝর্ণা খাতুন, বিপাশা আক্তার, অষ্টমী কর্মকার সহ বেশ কয়েকজন জানায়, তাদের শিক্ষা জীবন এখন অনিশ্চয়তার মুখে। তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কীনা সেটাও ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। জরুরী ভিত্তিতে যেন তাদের স্কুলের জন্য একটা ব্যবস্থা করা হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দোলেনা সুলতানা বলেন, আমি ২০১৬ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগ দেই। তখন বিদ্যালয়ের অবস্থা খুব বেশি ভাল ছিলনা। ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যাও ছিল কম। আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রÑছাত্রী সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। শিক্ষার্থীরা যাতে নিয়মিত স্কুলে আসে সেজন্য আমি নিজ উদ্যোগে তাদের খাবার ও উপহার দিতাম। আস্তে আস্তে বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরয়িা বাড়িয়েছি। বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত অবস্থা মোটেই ভালো ছিলনা। শিক্ষা কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসে নিজেরাই অবাক হতেন। তারপরও বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার মান বেশ ভালো। চলতি বছর জুন মাসে বিদ্যালয় মেরামত ও উন্নয়নের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সেই কাজও হয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো যখন কাজ সম্পন্ন হলো তখনই শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। সবকিছু আবার খুলে ফেলতে হয়েছে। এখন যে অবস্থায় আছে তাতে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান মোটেই সম্ভব নয়। এজন্য পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার মডেল টেস্ট নেয়া হচ্ছে।
তিনি জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থাপনের জন্য জোর দাবি জানান।
রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমীন করিমী জানান, খবর পেয়ে তিনি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। বিদ্যালয়ের পেছনে নদী ভাঙনের জায়গায় বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। এজন্য তিনি বিদ্যালয় সরাতে নিষেধ করেছেন। তবে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত যে সমস্যা তাতে অন্যত্র শিফট করা খুবই জরুরী। কিন্তু বিদ্যালয়ের জন্য কেউ জমি দিতে রাজী হচ্ছে না। উপযুক্ত জমি পেলে অন্যত্র শিফট করা হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীর চরধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুঃখগাথা

প্রকাশের সময় : ০৬:৫৮:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর ২০১৮

জনতার আদালত অনলাইন ॥ আবারও নদী ভাঙনের কবলে পড়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোদারবাজার এলাকায় নদী তীরবর্তী চরধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এতে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ও সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম সংশয়। হতাশা আর দুঃখ বিরাজ করছে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে। ইতিপূর্বেও বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের কবলে পড়েছিল।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, চরধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আগে নদীর ওপারে ছিল। ২০১২ সালে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয় ভবন বিলীন হয়ে যায়। ওই সময় বেশকিছু দিন বন্ধ ছিল পাঠদান। আপৎকালীন সময়ে রাজবাড়ী গোদারবাজার এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত নজরুল ইসলাম গাজী তার বাড়িতে ক্লাস করার সম্মতি দেন। পরে সাত শতক জমি স্কুলের জন্য দান করে তিনি অন্যত্র বসবাস শুরু করেন। তবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিদ্যালয় সরিয়ে আনার ফলে ছাত্রÑছাত্রী খুব একটা ছিল না। এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার জন্য রাস্তা হয়নি। অন্যের জমির উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। শ্রেণিকক্ষ মাত্র দুটি। যেকারণে অনেক সময় বারান্দায় বসিয়ে ক্লাস করতে হতো। বিদ্যালয় ভবনের চাল চুইয়ে পানি পড়তো। ঝড় বৃষ্টি হলে দিতে হতো ছুটি। এছাড়া বিদ্যালয়টির সামনে যথেষ্ট জায়গা না থাকায় করা যেত না সমাবেশ। এতো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল স্কুলটি। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যা একশ ৪৮ জন। শিক্ষক রয়েছেন চারজন। বিগত বছরগুলোতে সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলও ভাল। পাশের হার প্রায় শতভাগ। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়টি পড়েছে চরম অনিশ্চয়তার মুখে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর নদী ভাঙন শুরু হওয়ার পরদিন থেকেই বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের সকল আসবাবপত্র সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার নিরাপদের জন্য অন্যত্র চলে গেছে।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের বসতঘরের মত স্কুলটির কাঠামো। বরান্দার সামনে গ্রীল। আঙিনা বলতে অল্প একটু জায়গা। বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষ বন্ধ রয়েছে। খোলা রয়েছে শিক্ষকদের কক্ষটি। সেখানে কয়েকজন ছাত্রী মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছিল। একই কক্ষে ছিলেন প্রধান শিক্ষক দোলেনা সুলতানা ও দুজন সহকারী শিক্ষিকা।
বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হলেও চলছিল প্রাথমিক সমাপনীর মডেল টেস্ট পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী ঝর্ণা খাতুন, বিপাশা আক্তার, অষ্টমী কর্মকার সহ বেশ কয়েকজন জানায়, তাদের শিক্ষা জীবন এখন অনিশ্চয়তার মুখে। তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কীনা সেটাও ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। জরুরী ভিত্তিতে যেন তাদের স্কুলের জন্য একটা ব্যবস্থা করা হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দোলেনা সুলতানা বলেন, আমি ২০১৬ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগ দেই। তখন বিদ্যালয়ের অবস্থা খুব বেশি ভাল ছিলনা। ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যাও ছিল কম। আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রÑছাত্রী সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। শিক্ষার্থীরা যাতে নিয়মিত স্কুলে আসে সেজন্য আমি নিজ উদ্যোগে তাদের খাবার ও উপহার দিতাম। আস্তে আস্তে বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরয়িা বাড়িয়েছি। বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত অবস্থা মোটেই ভালো ছিলনা। শিক্ষা কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসে নিজেরাই অবাক হতেন। তারপরও বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার মান বেশ ভালো। চলতি বছর জুন মাসে বিদ্যালয় মেরামত ও উন্নয়নের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সেই কাজও হয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো যখন কাজ সম্পন্ন হলো তখনই শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। সবকিছু আবার খুলে ফেলতে হয়েছে। এখন যে অবস্থায় আছে তাতে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান মোটেই সম্ভব নয়। এজন্য পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার মডেল টেস্ট নেয়া হচ্ছে।
তিনি জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থাপনের জন্য জোর দাবি জানান।
রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমীন করিমী জানান, খবর পেয়ে তিনি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। বিদ্যালয়ের পেছনে নদী ভাঙনের জায়গায় বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। এজন্য তিনি বিদ্যালয় সরাতে নিষেধ করেছেন। তবে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত যে সমস্যা তাতে অন্যত্র শিফট করা খুবই জরুরী। কিন্তু বিদ্যালয়ের জন্য কেউ জমি দিতে রাজী হচ্ছে না। উপযুক্ত জমি পেলে অন্যত্র শিফট করা হবে।