চুরির অভিযোগে ১০ বছরের শিশুকে নির্মম নির্যাতনের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাংশা হাসপাতাল থেকে তাড়িয়ে দেয় নির্যাতনকারী
- প্রকাশের সময় : ০৮:৪৪:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৭
- / ১৮৯৮ জন সংবাদটি পড়েছেন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ টাকা চুরির অভিযোগে রাজবাড়ীর পাংশায় রাজু নামের ১০ বছরের এক শিশুকে দীর্ঘ সাত ঘণ্টা আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি দোকান মালিক রাজীব। পাংশা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জোর করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় তাকে। বর্তমানে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে সে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাজু পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের আবুল কাসেমের ছেলে। পাংশা মৈশালা বাজারে রাজীবের মালিকানাধীন মুদি দোকান রাব্বী স্টোরে কর্মচারী ছিল সে। রাজীবের বাড়ি একই ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে। মারধরের কথা স্বীকার করলেও হাসপাতাল থেকে তাড়ানোর অভিযোগ সে অস্বীকার করেছে।
রাজু জানায়, বুধবার সকাল ৮টার দিকে রাজীব তাকে দোকানে আটকে রেখে বাজারে যায়। বাজার থেকে ফিরে এসে বলে প্যান্টের পকেট থেকে টাকা নিয়ে আয়। পকেটে পাঁচ টাকা থাকায় রাজীব তাকে দোষারোপ করে। সে চুরির বিষয়টি অস্বীকার করায় রাজীব তাকে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত দোকানে আটকে রেখে নির্যাতন করে। এসময়ের মধ্যে তাকে রড দিয়ে পিটিয়েছে, হাতে সিগারেটের ছ্যাকা দিয়েছে। তেল গরম করার যন্ত্র দিয়ে তার পিঠে কারেন্টের শক দিয়েছে। তার হাতের নখ কাটতে চেয়েছিল। রাজু জানায়, সে কোনো টাকা চুরি করেনি। মিথ্যা অভিযোগে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে।
রাজুর বাবা আবুল কাসেম জানান, তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে লুঙ্গি বিক্রি করেন। সংসারে অভাব অনটনের কারণে তার ১০ বছরের ছেলে রাজুকে ছয় মাস আগে রাজীবের দোকানে দেন। বুধবার দুপুরে তিনি বাড়ি ফিরে জানতে পারেন রাজুকে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আটকে রেখে রাজীব নির্যাতন করেছে। তিনি রাজীবের দোকানে একা যাওয়ার সাহস পাননি। যদি তাকে ধরেও মারধর করে। পরে এলাকার কয়েকজনকে সাথে করে রাজীবের দোকান থেকে রাজুকে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যায় পাংশা থানায় গেলে ওসি রাজুকে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে এসে তার ছেলেকে ডাক্তার দেখিয়ে আবার থানায় যান। ওসি তাকে মিলমিশ করার পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাজুর অবস্থার অবনতি হলে পুনরায় তাকে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করা হয়।
রাজুর মা রোজিনা খাতুন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে রাজীব পাংশা হাসপাতালে গিয়ে বলে; তোমরা হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে যাও। তোমরা হাসপাতালে থাকলে আমার অসুবিধা হবে। হাসপাতাল থেকে নাম কাটানোর ব্যবস্থা করা আছে। তিনি আরও জানান, ওই সময় রাজুর স্যালাইন চলছিল। ওই স্যালাইন শেষ হলে আর একটি স্যালাইন দেয়ার কথা ছিল। রাজীব স্যালাইন হাত থেকে খুলে ফেলে দেয়। রাজুর হাত থেকে তখন রক্ত পড়ছিল। ডাক্তারদের কাউকে কিছু বলতে দেয়ার সুযোগ না দিয়েই তাদেরকে বাড়ি ফিরতে হয় রাজুকে নিয়ে। রাজুকে বাড়ি নেয়ার পর সারা রাত ব্যথায় চিৎকার করেছে। পরদিন শুক্রবার সকালে তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাজীবরা বড়লোক। ওরা আমাদের যেকোন সময় ক্ষতি করতে পারে। আমরা খুব ভয়ে আছি।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সুশীল কুমার রায় জানান, শিশুটির শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে আঘাত ও ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। শরীরে এখনও ব্যথা রয়েছে। সুস্থ হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত রাজীবের সাথে শনিবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার দোকান থেকে ৪০ হাজার টাকা হারিয়েছে। বুধবার রাজুকে আমার প্যান্ট থেকে পাঁচ হাজার টাকা আনতে বলি। রাজু প্যান্ট হাতিয়ে এসে বলে টাকা নেই। এজন্য রাজুকে আমি চড় থাপ্পড় মেরেছি। লাঠি দিয়ে হাতে দুটি বারি দিয়েছি। হাসপাতাল থেকে জোর করে বের করে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ওদেরকে বলেছি যা হওয়ার হয়ে গেছে। পরে মিলমিশ করে নেয়া যাবে।
পাংশা থানার ওসি মোফাজ্জেল হোসেন জানান, শিশু রাজুকে নিয়ে তার বাবা থানায় এসেছিল। রাজীবকেও থানায় ডেকে আনা হয়েছিল। তাদেরকে মিলমিশ করে নিতে বলেছি। পাংশা হাসপাতাল থেকে জোর করে বের করে দেয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।