পার্লামেন্টে সিট দিয়েও আমাদের কিনতে পারবেন না: হাসনাত
- প্রকাশের সময় : ১০:৩০:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / 36
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, আমরা তরুণ প্রজন্ম স্পষ্টভাবে বলতে চাই- আমরা যতদিন পর্যন্ত রাজপথে আছি, আমাদেরকে হাসিনা কিনতে পারেনি। আমাদেরকে আওয়ামী লীগ কিনতে পারেনি। এই তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে আপনারা যারা বেঈমানি করবেন, আপনারা আমাদের আসনের লোভ দেখাবেন, আপনারা বলবেন আমরা অমুক আসন ছেড়ে দেব। পার্লামেন্টে একটি সিট দিয়েও আমাদেরকে কিনতে পারবেন না। আমাদের যে চরম আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে সেটির প্রতিফলন আপনাদেরকে ঘটাতে হবে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ সড়কের পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠ প্রাঙ্গণে ‘রাইজিং চুয়াডাঙ্গা’ শীর্ষক ছাত্র-জনতার মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে কোনো কথা দেখি না। আমরা দেখি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকবে কি থাকবে না সেটি নিয়ে তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে কীভাবে নিষিদ্ধ করা যায় সেটি নিয়ে তাদের মধ্যে কোন আলাপ-আলোচনা নাই। কারণ তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ব্যবসার চিন্তা রয়েছে। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে লীগের ব্যবসাগুলোকে তারা দখল করতে চায়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কাঠামোগুলোকে দখল করতে চায়।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি এই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটা রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা তৈরি হচ্ছে। আমরা দেখেছি আমাদের প্রবীণ যে নেতৃত্ব রয়েছে, এই প্রবীণ নেতৃত্ব আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভাষা বুঝতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের তরুণদের মনুষত্ব বুঝতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের তরুণদের কথা তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের তরুণদের চিন্তা এবং চেতনার সঙ্গে, আমাদের মনস্তত্ত্বের সঙ্গে তাদের যোজন যোজনের দূরত্ব রয়েছে। প্রবীণরা যেখানে চিন্তা করে মোবাইল চালানোই হচ্ছে ধ্বংসের কারিগর, আমরা দেখেছি এই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই আমাদের এই যে গণঅভ্যুত্থানের জোট তৈরি হয়েছিল।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের প্রবীণ রাজনীতিবিদরা তারা ছিলেন আপসকালীন। আমরা দেখেছি আমাদের কাছে খবর আছে, কারা কারা তিনটা নির্বাচনে শেখ হাসিনার সঙ্গে আপস করেছে। কাদের সঙ্গে খুনি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। কাদের কাদের সঙ্গে খুনি শেখ হাসিনা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। এই জিনিসগুলো কিন্তু আমাদের জানা রয়েছে। সুতরাং আপনারা যারা আওয়ামী লীগের বিচার বাদ দিয়ে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের জন্য চিন্তা করছেন, আপনারা এই তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে আপনারা দালালি করছেন।
তিনি বলেন, হাসিনা আর আওয়ামী লীগ সরকার গণঅভ্যুত্থানের সময় আমাদের কিনতে পারেনি। তাই এখন যারা ভাবছেন সংসদের কয়েকটা চেয়ার দিয়ে ছাত্রদের কিনে ফেলে ক্ষমতা দখল করবেন, তারা ভুল ভাবছেন। ক্ষমতার দিকে যারা যেতে চাচ্ছেন, তাদেরকে বলি, আপনারা ক্ষমতার দিকে না যেয়ে জনতার দিকে আসুন, আমরাও আপনাদের পাশে থাকব।
হাসনাত আব্দুল্লাহ ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই দেশের ছাত্র সমাজ যদি এক হয়ে কাজ করে, তবে এটি কোনোভাবেই স্বৈরাচারের কূটচাল চালানো শক্তির কাছে হারবে না। আওয়ামী লীগের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন যারা, তাদের কথা কখনো ভুলে যাবেন না। এই ছাত্র-জনতা, যারা রাস্তায় প্রাণ দিয়েছে, তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ভবিষ্যত গড়তে সহায়তা করবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার উন্নয়ন পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা এত বড় হওয়ার পরও এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। এখানে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এখনো সেবা প্রদান করছে, যা একটি বৃহৎ জেলার জন্য অত্যন্ত অপ্রতুল। চুয়াডাঙ্গা একটি সীমান্তবর্তী জেলা, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো গড়ে তোলা এখনো এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জেলার জনগণের জন্য উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি না হওয়া একটি বড় সমস্যা, যার কারণে এখানকার ছাত্রছাত্রীরা আধুনিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থান এবং ছাত্র-জনতা আরও বড় ভূমিকা পালন করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে এবং জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাফফাতুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় ফ্যাসিবাদ, গণতন্ত্র, আন্দোলন এবং সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নুসরাত তাবাসসুম, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোল্লা এহসান এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির ঢাকা মিরপুরের সদস্য সচিব গোলাম রাব্বানী।