ভারতে বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ
- প্রকাশের সময় : ০৯:১৯:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / 23
ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমাবেশে ভারতীয় হাইকমিশনারকে অবিলম্বে তলব করে এই হত্যাকাণ্ডের কারণ ও সুষ্ঠু বিচারের জন্য জবাবদিহি চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
আজ শনিবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এমন দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানকে ভারতের পক্ষে থেকে সন্ত্রাসী কাজ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভারত আন্তর্জাতিক মহল ও তাদের দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে ঘৃণা সৃষ্টি করেছে। তারা কখনো জুলাই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেনি। কিন্তু ভারত সমর্থন না করলেও এদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ছিল সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। কীভাবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য দাঁড়াতে হয় বাংলাদেশের জনগণ সেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারত দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের জনগণের নিরাপত্তা দিতে পারে নাই। তারা নিজেদের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারে নাই। তারা শুধু উগ্রতাই ছড়িয়েছে। গতকাল ভারতে আমাদের বোন নাজমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এটা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও উগ্রতা ছড়ানোর ফলাফল। ভারতের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনাদের আগ্রাসনবিরোধী কাজের নিন্দা আমরা করেছি। সামনেও আপনারা কোনোরকম আগ্রাসী মনোভাব দেখালে আমরা আপনাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলবো। যতদিন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠতে না পারবে আমরা ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো।’
আরিফ সোহেল আরও বলেন, ‘ভারতকে অবশ্যই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবশ্যই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। হাইকমিশনারকে ডেকে জবাবদিহি করতে হবে। আগামীতে যেন এমন কোনো ধর্ষণ বা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে সেজন্য ভারতকে হুঁশিয়ারি প্রদান করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘যখন ভারতের আরজি কর হাসপাতালে আমার বোন মৌমিতাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হলো তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি কিন্তু যখন গতকাল নাজমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হলো তখন কাঁটাতারের ওপারের সবাই চুপ কেন? তারা কি আজকে মুখের কথা হারিয়ে ফেলেছে?’
তিনি বলেন, ‘হত্যার একদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়নি। আমরা বলতে চাই, এখন নতজানু হবার সুযোগ নেই। এদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি কোনো প্রশ্ন রাখা চলবে না। এদেশের ১৮ কোটি মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনারা যদি বিবৃতি প্রদান না করেন এবং ভারতীয় হাইকমিশনারকে চাপ প্রয়োগ না করা হয় তাহলে ছাত্রজনতা আপনাদেরকে ছেড়ে কথা বলবে না।’ এসময় তিনি ভারতের সাথে করা সকল অসম চুক্তি বাতিলের দাবি জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা কলেজের আহ্বায়ক আফজাল হোসেন রাকিব বলেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসনবাদীরা যদি মনে করে তারা এখনো তাদের আগ্রাসন চালিয়ে যাবে, তাহলে তারা ভুল ভাবছে। আমরা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, এখন থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে কিছু করতে গেলে ১০০ বার ভাববেন। আপনারা আগের ফ্যাসিস্টদের যে সহযোগিতা পেয়েছিলেন সেটা আর পাবেন না। আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করা হলে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দিবো না।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডাকা হয়নি, এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের কোনো জবাব চাওয়া হয়নি। আমরা চাই না আর নতজানু হয়ে চলতে। আমরা চাই নতজানু না হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হোক।’
এসময় তারা- ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘আমাদের ধমনীতে, আবরার/আবু সাঈদের রক্ত’; ‘বিচার চাই বিচার চাই, নাজমা/ফেলানী হত্যার বিচার চাই’; ‘আমার বোন মরলো কেন, ভারত তুই জবাব দে’; ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী’; ‘গোলামী না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।