ঘটনার সময় তিনি ছিলেন পাংশায়
ঢাকার যাত্রাবাড়িতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার আসামি সাংবাদিক শামীম
- প্রকাশের সময় : ০৫:২৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
- / 11
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সাংবাদিক শামীম হোসেন গত বছর অক্টোবর মাসের আগে শেষ কবে ঢাকা গিয়েছেন মনে করতে পারছেন না। অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই তারিখের ঘটনায় ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলার আসামির তালিকায় রয়েছে তার নাম। মামলার বাদী হয়েছেন আব্দুল বারিক শেখ। ঠিকানা উল্লেখ করেছেন বাসা/হোল্ডিং ২৮, গোলাপবাগ, ডাকঘর-ওয়ারি, ঢাকা, থানা যাত্রাবাড়ি ও ইকুরিয়া দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, জেলা ঢাকা। শামীম রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের গৌরাঙ্গপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে। দৈনিক কালবেলা ও আজকের পত্রিকা নামক দুটি জাতীয় দৈনিকের পাংশা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত শামীম। জীবনে কখনও রাজনীতি না করলেও তাকে বানানো হয়েছে যুবলীগের নেতা। মামলার আসামি হয়েছেন একথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়েছেন শামীম। মামলার বাদী আব্দুল বারিক শেখ এবিষয়ে মোবাইল ফোনে এ প্রতিনিধির কাছে বিস্তারিত বলতে রাজী হননি। তবে, শামীমের কাছে তিনি বলেছেন অন্যের প্ররোচনায় তিনি মামলাটি দায়ের করতে বাধ্য হন।
গত ৩১ অক্টোবর তারিখে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক র্যাব মহাপরিচালক খোরশেদ হোসেন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকারসহ আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাকর্মী। তালিকায় ৫৮ নং ক্রমিকে রয়েছে শামীম হোসেনের নাম।
বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯ জুলাই তারিখে যাত্রাবাড়ী থানার ডিসি অফিস গোলাপবাগ বিশ^রোড মসজিদের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে আসামিরা তাদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে তার ছেলে আব্দুল্লাহ বাবু দৃষ্টিশক্তি হারায়।
সাংবাদিক শামীম হোসেন জানান, গত ২১ ডিসেম্বর তিনি কক্সবাজারে যান। ওই সময় তার বাড়ি থেকে ফোন করে জানায় পুলিশ তার খোঁজে এসেছিল। তিনি বাড়ি ফিরে কালুখালী থানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা হয়েছে। সে মামলায় তিনি আসামি। যাত্রাবাড়ি থানা নাম যাচাই বাছাইয়ের জন্য তাদের সহযোগিতা চেয়েছে। পরে তিনি আদালত থেকে মামলার কপি সংগ্রহ করে বিষয়টির সত্যতা পান এবং আকাশ থেকে পড়েন। এটা কীভাবে সম্ভব? শামীম বলেন, যেদিনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে ওই দিন আমি বাড়িতে বৈদ্যুতিক কাজ করছিলাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে। এছাড়া গত বছরের অক্টোবর মাসে একবার ঢাকা গিয়েছিলাম। তার আগে কবে ঢাকা গিয়েছি মনে পড়েনা। এছাড়া আমাকে যুবলীগের নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ তিনি কখনও কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। মামলার নথি থেকে বাদী আব্দুল বারিকের মোবাইল নাম্বার নিয়ে তাকে ফোন করেছিলেন। বারিক শেখ তাকে বলেছেন, তিনি মামলাটি করতে চাননি। তাকে দিয়ে জোর করে করানো হয়েছে। মামলার আসামি কারা তাও বাদী সঠিকভাবে জানেন না।
আব্দুল বারিক শেখের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় এ প্রতিনিধির। জানালেন, তিনি পেশায় একজন গাড়ি চালক। তার ছেলে আব্দুল্লাহ বাবু (২২) প্রাইমারী পর্যন্ত পড়েছে। সেও মাঝে মধ্যে গাড়ি চালাতো। এখন সে (বাবু) চিকিৎসাধীন। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমি মোবাইলে কিছু বলতে পারব না। আমার বারণ আছে। সাংবাদিক শামীম তাকে ফোন করেছিলেন। তার সাথে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কালুখালী থানার ওসি জাহেদুর রহমান জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানা থেকে শামীমের বিষয়ে তাদের কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছিল তা যাচাই বাছাই করে পাঠিয়েছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।
ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানার ওসি ফারুক আহমেদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।