Dhaka ০৩:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন: দুই হাজারের বেশি মামলায় গ্রেপ্তার ১২ হাজার

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩৫:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 13

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশের বিভিন্ন থানায় গত আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসে দুই হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় লক্ষাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ হাজারের বেশি আসামিকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগরের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

থানার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দায়ের করা বেশির ভাগই হত্যা মামলা। প্রতিটি মামলায় বেশির ভাগ আসামির মধ্যে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও পুলিশের নাম রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। আসামিদের মধ্যে ব্যবসায়ী, পুলিশ, সচিবসহ আরো অনেকে রয়েছেন।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মামলায় নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা কোনোভাবেই উচিত নয়। যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁরা যেন সঠিক বিচার পান সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বেশির ভাগ সদস্য গাঢাকা দেন। গত বছরের এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৩৯ জন সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে।

তাদের মধ্যে সাবেক শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও রয়েছেন। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদের দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে কেউ দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে, কেউ বা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। রিমান্ড শেষে অনেকে কারাগারে।
জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত মন্ত্রী, আর্থিক অনিয়মের জন্য আলোচিত ব্যক্তিবদের গ্রেপ্তার শুরু হয়।

সর্বশেষ গত বুধবার রাতে বগুড়া-৬ আসনের এমপি রাগিবুল হাসান রিপুকে নেত্রকোনা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১৪।
জানা গেছে, গত বছরের বিভিন্ন সময় করা মামলায় আসামি হিসেবে অনেক নিরীহ ব্যক্তির নাম রয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করার লক্ষ্যে জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা পুলিশ সুপারও এই কমিটিতে রয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র বলছে, এজাহারভুক্ত আসামিদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। অনেক মামলায় দেখা গেছে, বাদী সব আসামি বা সাক্ষীকে চেনেন না।

মামলার তদন্তে থাকা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, এসব মামলায় বেশির ভাগ হত্যা মামলার আসামি হলেও নিহতদের বেশির ভাগের ময়নাতদন্ত এখনো সম্পন্ন হয়নি। যে অস্ত্র দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে, এসবও উদ্ধার হয়নি।

গ্রেপ্তার হয়ে শীর্ষ যাঁরা করাগারে : গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয় ও বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম ও সাবেক তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সাবেক ৩৯ জন সদস্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আসাদুজ্জামান নূর, নুরুল ইসলাম সুজন, রমেশ চন্দ্র সেন, মাজহারুল ইসলাম সুজন প্রমুখ।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন: দুই হাজারের বেশি মামলায় গ্রেপ্তার ১২ হাজার

প্রকাশের সময় : ১২:৩৫:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশের বিভিন্ন থানায় গত আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসে দুই হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় লক্ষাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ হাজারের বেশি আসামিকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগরের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

থানার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দায়ের করা বেশির ভাগই হত্যা মামলা। প্রতিটি মামলায় বেশির ভাগ আসামির মধ্যে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও পুলিশের নাম রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। আসামিদের মধ্যে ব্যবসায়ী, পুলিশ, সচিবসহ আরো অনেকে রয়েছেন।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মামলায় নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা কোনোভাবেই উচিত নয়। যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁরা যেন সঠিক বিচার পান সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বেশির ভাগ সদস্য গাঢাকা দেন। গত বছরের এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৩৯ জন সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে।

তাদের মধ্যে সাবেক শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও রয়েছেন। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদের দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে কেউ দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে, কেউ বা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। রিমান্ড শেষে অনেকে কারাগারে।
জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত মন্ত্রী, আর্থিক অনিয়মের জন্য আলোচিত ব্যক্তিবদের গ্রেপ্তার শুরু হয়।

সর্বশেষ গত বুধবার রাতে বগুড়া-৬ আসনের এমপি রাগিবুল হাসান রিপুকে নেত্রকোনা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১৪।
জানা গেছে, গত বছরের বিভিন্ন সময় করা মামলায় আসামি হিসেবে অনেক নিরীহ ব্যক্তির নাম রয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করার লক্ষ্যে জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা পুলিশ সুপারও এই কমিটিতে রয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র বলছে, এজাহারভুক্ত আসামিদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। অনেক মামলায় দেখা গেছে, বাদী সব আসামি বা সাক্ষীকে চেনেন না।

মামলার তদন্তে থাকা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, এসব মামলায় বেশির ভাগ হত্যা মামলার আসামি হলেও নিহতদের বেশির ভাগের ময়নাতদন্ত এখনো সম্পন্ন হয়নি। যে অস্ত্র দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে, এসবও উদ্ধার হয়নি।

গ্রেপ্তার হয়ে শীর্ষ যাঁরা করাগারে : গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয় ও বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম ও সাবেক তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সাবেক ৩৯ জন সদস্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আসাদুজ্জামান নূর, নুরুল ইসলাম সুজন, রমেশ চন্দ্র সেন, মাজহারুল ইসলাম সুজন প্রমুখ।