Dhaka ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে শেষ হলো ৩ দিনের বাংলা উৎসব

 স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৯:২৫:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
  • / ১০৩২ জন সংবাদটি পড়েছেন

রাজবাড়ীতে তিন দিনব্যাপী বাংলা উৎসব শনিবার রাতে শেষ হয়েছে। রাজবাড়ী একাডেমির আয়োজনে গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

উৎসবের শেষ দিনে জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সহ¯্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী চারটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক ৩০টি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এ জেলার উপর দিয়ে যাওয়া নদীর নামানুসারে দেওয়া হয় চারটি বিভাগের নাম। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি নিয়ে বিভাগটির নাম দেওয়া হয় হড়াই, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি গড়াই, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম কুমার এবং নবম থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী চন্দনা বিভাগ।।

প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিল খালি ঘর পূরণ, বানান সংশোধন, ছড়া লিখন, বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, উপসর্গ ও অনুসর্গের ব্যবহার, বাগধারা দিয়ে বাক্য তৈরি, বিপরীত শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি, এক কথায় প্রকাশ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, বঙ্গানুবাদ, কারক ও বিভক্তি, সমাস, অভিধান থেকে শব্দ বের করা, শ্রæতি লিখন, কুইজ, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, দেয়াল পত্রিকা ইত্যাদি।

শনিবার রাত ১০টায় আমন্ত্রিত অতিথিদের আবৃত্তি ও গান পরিবেশনের মাধ্যমে পর্দা নামে এ উৎসবের। আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিকার ও অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী, সঙ্গীত শিল্পী জাকির হাসান তপন, আবৃত্তি শিল্পী পলি পারভীন এবং মেসবাহুল মোকার রাবিন । তাদের পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের।

এদিন সকাল ১০টা থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দৃষ্টিনন্দন মঞ্চে একদিকে চলেছে আলোচনা, গান, কবিতা। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা শেষে বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী। এ পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ পিপিএম, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল করিম। রাজবাড়ী একাডেমির সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকবাল হোসেন। আলোচনা শেষে বিজয়ী দেড়শ ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়া উৎসবে আমন্ত্রিত সকল অতিথিকে দেওয়া হয় সম্মাননা ক্রেস্ট। সংবর্ধিত করা হয় উত্তরীয় পরিয়ে।

রাজবাড়ী একাডেমির সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশের অনন্য এক সুযোগ এই বাংলা উৎসব। ছাত্র-ছাত্রীরা এ উৎসবে ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাদের আনন্দমুখর অংশগ্রহণ এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের অবতারণা করে।  বাংলা উৎসব এলে তারা  উদ্দীপ্ত হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সকলের সহযোগিতায় বাংলা উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে- এটাই আমাদের প্রাপ্তি।

সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। এ উৎসবের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বাংলা ভাষার প্রতি আরও বেশি যতœশীল হয়েছে বলেই মনে করি। আমরা ভবিষ্যতেও এমন উৎসব আয়োজন করতে চাই।

বাংলা উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল মুখর

ব্যতিক্রমধর্মী নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল মুখর। রাজবাড়ী একাডেমির উদ্যোগে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দ্বিতীয় দিন সকালে আবৃত্তি ও উচ্চারণ ভাবনা শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন কবি শাহেদ কায়েস ও আবৃত্তিকার মাহমুদুল হাসান তানভীর। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ সভাপতি কমল কান্তি সরকার। এ পর্বে পুঁথি পাঠ করেন পুঁথিশিল্পী এথেন্স শাওন।

দ্বিতীয় পর্বে নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের ‘সফলতার গল্প’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে নিজেদের সফলতার কথা তুলে ধরেন রাজবাড়ী একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইকবার হোসেন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদপুর এর রাইসা সরকার, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আবু সায়েম চৌধুরী, নগর পরিকল্পনাবিদ সাজেদা চৌধুরী তুলি ও চার্টার্ড অ্যকাউন্টেন্ট রাশেদুল ইসলাম। তাদের বেড়ে ওঠা, কীভাবে তারা ছাত্রজীবন থেকে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, কীভাবে তারা সফল হয়েছেন এমন নানা প্রশ্নের জবাবও দেন তারা।

বিকাল ৪টায় ছয়জন নির্বাচিত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ কুইজ প্রতিযোগিতা।

সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা, সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণী। এ পর্বে বিশেষ সম্মানিত অতিথি ছিলেন ডা. একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তি শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও রূপা চক্রবর্তী। সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার আজিজা খানম। অনুষ্ঠানে সমাজসেবায় প্রকৌশলী আল মামুন রনি, শিক্ষা ক্ষেত্রে রাবেয়া-কাদের স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম, সংস্কৃতিতে আব্দুস সাত্তার কালু এবং শিল্পকলায় বিশেষ অবদান রাখায় রাজকুমার পালকে সংবর্ধনা জানানো হয়। পরে কুইজ ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ১ম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চারটি হড়াই, গড়াই, কুমার ও চন্দনা নামে চারটি বিভাগে ভাগ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।

১ম দিন :

প্রাণের ঊচ্ছ¡াসে শুরু ৩দিনের বাংলা উৎসব শুরু

ভাষার যে নান্দনিক দিকগুলো আছে সাহিত্যিক দিকগুলো আছে এগুলো চর্চা করার জন্য আমাদের বই পড়তে হবে- ড. আতিউর রহমান

চারিদিকে শিশু-কিশোরদের কোলাহল। বাঁশ, বেত, পাট জাতীয় দ্রব্যে বর্ণিল সাজে সেজে উৎসব ময়দান। তিন দিনব্যাপী শিশু কিশোররা মেতে থাকবে বাংলা উৎসবে। জেলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রাজবাড়ী একাডেমির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার চারটায় বর্ণ মিছিলের মাধ্যমে সূচনা হয় উৎসবের। বিকেল সাড়ে চারটায় রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্ণর ড. আতিউর রহমান।

তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে রাজবাড়ী জেলার সহ¯্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করছে। যেখানে তারা খালি ঘর পূরণ, বানান সংশোধন, ছড়া লিখন, বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, উপসর্গ ও অনুসর্গের ব্যবহার, বাগধারা দিয়ে বাক্য তৈরি, বিপরীত শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি, এক কথায় প্রকাশ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, বঙ্গানুবাদ, কারক ও বিভক্তি, সমাস, অভিধান থেকে শব্দ বের করা, শ্রæতি লিখন, কুইজ, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলা এমন ্একটি ভাষা যাকে ঘিরে একটি রাষ্ট্র নির্মাণ হয়েছে। এমন উদাহরণ পৃথিবীতে আর খুব বেশি নেই। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের তরুণরা রক্ত ঢেলেছেন। পরবর্তীকালে সেই রক্তবীজ থেকে মুক্তির বীজ সৃষ্টি হয়েছে। মাতৃভাষা এবং মাতৃভ‚মির জয়গান কে না গাইতে চায়? আমরা দেশকে ভালোবাসতে চাইলে বাংলা ভাষায় কথা বলতেই হবে। দেশকে জানতে হয়। দেশকে ভালোবাসতে হয়। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্যই এই স্বদেশ অর্জন করেছি। আমাদের জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন  দেখিয়েছেন। তিনি সোনার মানুষ গগড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু এই সোনার মানুষ এমনি এমনি হবে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে প্রসারিত করতে হবে। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যেভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে আমাদের সোশাল মিডিয়া গ্রাস করে ফেলছে তাতে বাংলা ভাষা বাধার মুখে পড়বে। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম যেভাবে এগিয়ে এসেছে তাতে বাংলা ভাষার চর্চা আরও বেড়ে গেছে। এখন সবাই বাংলা ভাষায় কথা ও তথ্য আদান প্রদান করে। বাংলা ভাষার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে আরও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, দিনে দিনে সবই হয়তো ডিজিটাল হবে। কিন্তু তার মানে এ নয় যে, বাংলা ভাষা হারিয়ে যাবে। বাংলা ভাষার চর্চা ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র। আমরা আশা করি ভাষার যে নান্দনিক দিকগুলো আছে সাহিত্যিক দিকগুলো আছে এগুলো চর্চা করার জন্য আমাদের বই চর্চা করতে হবে। লেখালেখি বাড়ছে। এর মধ্যে যেগুলো নান্দনিক সেগুলোর সাথেআমাদের সন্তানদের পরিচিত করাতে হবে। সেই বইগুলো তাদের কাছে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য স্কুলে স্কুলে এমনকি ঘরে ঘরে লাইব্রেরি গড়ে তুলতে হবে। বাংলা ্উৎসবের মত আরও উৎসব হলে বাংলা ভাষা আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আমরা যেন শক্তিশালী হই। তাহলেই আমরা সমৃদ্ধ হব।

রাজবাড়ী একাডেমির সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল মোর্শেদ আরুজ, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার, শিল্পপতি নাসিম শফি, রাজবাড়ী একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ইকবাল হোসেন, সহ সভাপতি মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ। বাংলা উৎসব উপলক্ষে বর্ণমালা নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে। যেটি সম্পাদনা করেছেন সৌমিত্র শীল চন্দন।

রাজবাড়ী একাডেমির সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলা ভাষার শুদ্ধ ও যথাযথ চর্চার লক্ষ্যে রাজবাড়ী একাডেমি প্রতিবছর বাংলা উৎসবের আয়োজন করে। বাংলা উৎসব আমাদের প্রাণের উৎসব। শত শত ছাত্র-ছাত্রীর অংশগ্রহণে প্রতিবছর উৎসবমুখর পরিবেশে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ উৎসব ধীরে ধীরে সর্বজনীন রূপ ধারণ করছে। রাজবাড়ীর ছেলেমেয়েরা প্রতিবছর এ উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে। উৎসব উপলক্ষে অনেক প্রতিযোগিতা হয়। অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটে। একটি শিক্ষামূলক আয়োজন হলেও আনন্দ বিনোদনের কোন কমতি থাকে না।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীতে শেষ হলো ৩ দিনের বাংলা উৎসব

প্রকাশের সময় : ০৯:২৫:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

রাজবাড়ীতে তিন দিনব্যাপী বাংলা উৎসব শনিবার রাতে শেষ হয়েছে। রাজবাড়ী একাডেমির আয়োজনে গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

উৎসবের শেষ দিনে জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সহ¯্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী চারটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক ৩০টি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এ জেলার উপর দিয়ে যাওয়া নদীর নামানুসারে দেওয়া হয় চারটি বিভাগের নাম। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি নিয়ে বিভাগটির নাম দেওয়া হয় হড়াই, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি গড়াই, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম কুমার এবং নবম থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী চন্দনা বিভাগ।।

প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিল খালি ঘর পূরণ, বানান সংশোধন, ছড়া লিখন, বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, উপসর্গ ও অনুসর্গের ব্যবহার, বাগধারা দিয়ে বাক্য তৈরি, বিপরীত শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি, এক কথায় প্রকাশ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, বঙ্গানুবাদ, কারক ও বিভক্তি, সমাস, অভিধান থেকে শব্দ বের করা, শ্রæতি লিখন, কুইজ, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, দেয়াল পত্রিকা ইত্যাদি।

শনিবার রাত ১০টায় আমন্ত্রিত অতিথিদের আবৃত্তি ও গান পরিবেশনের মাধ্যমে পর্দা নামে এ উৎসবের। আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিকার ও অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী, সঙ্গীত শিল্পী জাকির হাসান তপন, আবৃত্তি শিল্পী পলি পারভীন এবং মেসবাহুল মোকার রাবিন । তাদের পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের।

এদিন সকাল ১০টা থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দৃষ্টিনন্দন মঞ্চে একদিকে চলেছে আলোচনা, গান, কবিতা। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা শেষে বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী। এ পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ পিপিএম, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল করিম। রাজবাড়ী একাডেমির সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকবাল হোসেন। আলোচনা শেষে বিজয়ী দেড়শ ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়া উৎসবে আমন্ত্রিত সকল অতিথিকে দেওয়া হয় সম্মাননা ক্রেস্ট। সংবর্ধিত করা হয় উত্তরীয় পরিয়ে।

রাজবাড়ী একাডেমির সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশের অনন্য এক সুযোগ এই বাংলা উৎসব। ছাত্র-ছাত্রীরা এ উৎসবে ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাদের আনন্দমুখর অংশগ্রহণ এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের অবতারণা করে।  বাংলা উৎসব এলে তারা  উদ্দীপ্ত হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সকলের সহযোগিতায় বাংলা উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে- এটাই আমাদের প্রাপ্তি।

সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। এ উৎসবের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বাংলা ভাষার প্রতি আরও বেশি যতœশীল হয়েছে বলেই মনে করি। আমরা ভবিষ্যতেও এমন উৎসব আয়োজন করতে চাই।

বাংলা উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল মুখর

ব্যতিক্রমধর্মী নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল মুখর। রাজবাড়ী একাডেমির উদ্যোগে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দ্বিতীয় দিন সকালে আবৃত্তি ও উচ্চারণ ভাবনা শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন কবি শাহেদ কায়েস ও আবৃত্তিকার মাহমুদুল হাসান তানভীর। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ সভাপতি কমল কান্তি সরকার। এ পর্বে পুঁথি পাঠ করেন পুঁথিশিল্পী এথেন্স শাওন।

দ্বিতীয় পর্বে নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের ‘সফলতার গল্প’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে নিজেদের সফলতার কথা তুলে ধরেন রাজবাড়ী একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইকবার হোসেন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদপুর এর রাইসা সরকার, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আবু সায়েম চৌধুরী, নগর পরিকল্পনাবিদ সাজেদা চৌধুরী তুলি ও চার্টার্ড অ্যকাউন্টেন্ট রাশেদুল ইসলাম। তাদের বেড়ে ওঠা, কীভাবে তারা ছাত্রজীবন থেকে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, কীভাবে তারা সফল হয়েছেন এমন নানা প্রশ্নের জবাবও দেন তারা।

বিকাল ৪টায় ছয়জন নির্বাচিত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ কুইজ প্রতিযোগিতা।

সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা, সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণী। এ পর্বে বিশেষ সম্মানিত অতিথি ছিলেন ডা. একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তি শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও রূপা চক্রবর্তী। সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার আজিজা খানম। অনুষ্ঠানে সমাজসেবায় প্রকৌশলী আল মামুন রনি, শিক্ষা ক্ষেত্রে রাবেয়া-কাদের স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম, সংস্কৃতিতে আব্দুস সাত্তার কালু এবং শিল্পকলায় বিশেষ অবদান রাখায় রাজকুমার পালকে সংবর্ধনা জানানো হয়। পরে কুইজ ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ১ম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চারটি হড়াই, গড়াই, কুমার ও চন্দনা নামে চারটি বিভাগে ভাগ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।

১ম দিন :

প্রাণের ঊচ্ছ¡াসে শুরু ৩দিনের বাংলা উৎসব শুরু

ভাষার যে নান্দনিক দিকগুলো আছে সাহিত্যিক দিকগুলো আছে এগুলো চর্চা করার জন্য আমাদের বই পড়তে হবে- ড. আতিউর রহমান

চারিদিকে শিশু-কিশোরদের কোলাহল। বাঁশ, বেত, পাট জাতীয় দ্রব্যে বর্ণিল সাজে সেজে উৎসব ময়দান। তিন দিনব্যাপী শিশু কিশোররা মেতে থাকবে বাংলা উৎসবে। জেলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রাজবাড়ী একাডেমির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার চারটায় বর্ণ মিছিলের মাধ্যমে সূচনা হয় উৎসবের। বিকেল সাড়ে চারটায় রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্ণর ড. আতিউর রহমান।

তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে রাজবাড়ী জেলার সহ¯্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করছে। যেখানে তারা খালি ঘর পূরণ, বানান সংশোধন, ছড়া লিখন, বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, উপসর্গ ও অনুসর্গের ব্যবহার, বাগধারা দিয়ে বাক্য তৈরি, বিপরীত শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি, এক কথায় প্রকাশ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, বঙ্গানুবাদ, কারক ও বিভক্তি, সমাস, অভিধান থেকে শব্দ বের করা, শ্রæতি লিখন, কুইজ, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলা এমন ্একটি ভাষা যাকে ঘিরে একটি রাষ্ট্র নির্মাণ হয়েছে। এমন উদাহরণ পৃথিবীতে আর খুব বেশি নেই। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের তরুণরা রক্ত ঢেলেছেন। পরবর্তীকালে সেই রক্তবীজ থেকে মুক্তির বীজ সৃষ্টি হয়েছে। মাতৃভাষা এবং মাতৃভ‚মির জয়গান কে না গাইতে চায়? আমরা দেশকে ভালোবাসতে চাইলে বাংলা ভাষায় কথা বলতেই হবে। দেশকে জানতে হয়। দেশকে ভালোবাসতে হয়। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্যই এই স্বদেশ অর্জন করেছি। আমাদের জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন  দেখিয়েছেন। তিনি সোনার মানুষ গগড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু এই সোনার মানুষ এমনি এমনি হবে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে প্রসারিত করতে হবে। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যেভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে আমাদের সোশাল মিডিয়া গ্রাস করে ফেলছে তাতে বাংলা ভাষা বাধার মুখে পড়বে। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম যেভাবে এগিয়ে এসেছে তাতে বাংলা ভাষার চর্চা আরও বেড়ে গেছে। এখন সবাই বাংলা ভাষায় কথা ও তথ্য আদান প্রদান করে। বাংলা ভাষার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে আরও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, দিনে দিনে সবই হয়তো ডিজিটাল হবে। কিন্তু তার মানে এ নয় যে, বাংলা ভাষা হারিয়ে যাবে। বাংলা ভাষার চর্চা ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র। আমরা আশা করি ভাষার যে নান্দনিক দিকগুলো আছে সাহিত্যিক দিকগুলো আছে এগুলো চর্চা করার জন্য আমাদের বই চর্চা করতে হবে। লেখালেখি বাড়ছে। এর মধ্যে যেগুলো নান্দনিক সেগুলোর সাথেআমাদের সন্তানদের পরিচিত করাতে হবে। সেই বইগুলো তাদের কাছে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য স্কুলে স্কুলে এমনকি ঘরে ঘরে লাইব্রেরি গড়ে তুলতে হবে। বাংলা ্উৎসবের মত আরও উৎসব হলে বাংলা ভাষা আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আমরা যেন শক্তিশালী হই। তাহলেই আমরা সমৃদ্ধ হব।

রাজবাড়ী একাডেমির সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল মোর্শেদ আরুজ, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার, শিল্পপতি নাসিম শফি, রাজবাড়ী একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ইকবাল হোসেন, সহ সভাপতি মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ। বাংলা উৎসব উপলক্ষে বর্ণমালা নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে। যেটি সম্পাদনা করেছেন সৌমিত্র শীল চন্দন।

রাজবাড়ী একাডেমির সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলা ভাষার শুদ্ধ ও যথাযথ চর্চার লক্ষ্যে রাজবাড়ী একাডেমি প্রতিবছর বাংলা উৎসবের আয়োজন করে। বাংলা উৎসব আমাদের প্রাণের উৎসব। শত শত ছাত্র-ছাত্রীর অংশগ্রহণে প্রতিবছর উৎসবমুখর পরিবেশে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ উৎসব ধীরে ধীরে সর্বজনীন রূপ ধারণ করছে। রাজবাড়ীর ছেলেমেয়েরা প্রতিবছর এ উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে। উৎসব উপলক্ষে অনেক প্রতিযোগিতা হয়। অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটে। একটি শিক্ষামূলক আয়োজন হলেও আনন্দ বিনোদনের কোন কমতি থাকে না।