Dhaka ১২:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টমেটোর ভালো ফলনে কৃষকের হাসির রেশ শেষ অব্দি থাকবে তো

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৫৬:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২২
  • / ১৩৪৫ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন পদ্মা বিধৌত রাজবাড়ী জেলায় সব ধরনের কৃষি পণ্যই আবাদ হয়ে  থাকে। চলতি শীত মৌসুমে রাজবাড়ীতে ভালো হয়েছে টমেটোর চাষ। বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় খুশী তারা। কিন্তু মাঝখানে অসময়ের বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও টমেটোতে দেখা দিয়েছে পচন রোগ। বাজারের দাম পড়ে যাওয়া এবং পচন রোগের কারণে কৃষকের মুখের হাসি শেষ পর্যন্ত থাকবে কীনা তা নিয়েই রয়েছে সংশয়।  পচনরোগ ঠেকাতে এখনও ক্ষেতে দিতে হচ্ছে কীটনাশক।  কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পচন রোগ  ঠেকাতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদীর চরে বেশি ফলন হয় টমেটোর। সাধারণত চার জাতের টমেটো চাষ করেন চরের চাষীরা। সেগুলো হলো বিউটিফুল, বিপুল প্লাস, বিগল ও মিন্টু সুপার। চরের টমেটো চাষে খুব বেশি পরিশ্রম করতে  হয়না কৃষকদের। বর্ষার পলি মাটি পড়ে জমি  উর্বর হয়ে যায়। একারণে টমেটোর চারা রোপণ করার পর আবহাওয়া অনুকূল থাকলেই বাম্পার ফলন হয় টমেটোর। এবছরও তাই হয়েছিল। মাঝখানে অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকের মনে খানিক দুশ্চিন্তা ভর করেছে। যারা আগাম চাষ করেছিলো তারা  লাভবান হয়েছে।

সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা, গোপালবাড়ি  গ্রামে  পদ্মার  চরে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চাষ হয়েছে টমেটো। কোথাও  ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন কৃষক কৃষাণীরা। আবার কোথাও চলছে পরিচর্যা। কিছু টমেটো পেকে গেছে। আবার কিছু এখনও কাঁচাই রয়ে গেছে। ক্ষেত থেকে তোলা টমেটো কৃষকরা মাথায়  করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। সেগুলোই ভ্যানে করে নিয়ে যাবেন বাজারে বিক্রি করতে।

কৃষকরা জানান, নিজের জমিতে টমেটো চাষে বিঘা প্রতি চারা রোপণ, কীটনাশক প্রয়োগ, শ্রমিক মজুরিসহ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। জমি বর্গা নিয়ে চাষ করলে খরচ বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ। ভালো ফলন হলে এক বিঘা জমিতে দেড় থেকে দুশ মণ টমেটো পাওয়া যায়। বাজারে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হয় পাঁচ থেকে সাতশ টাকা।

উড়াকান্দা গ্রামের কৃষাণী আসমা বেগম জানান, এখন বাজারে যে দাম আছে তা যদি শেষ পর্যন্ত থাকে তাহলে তারা কিছুটা লাভবান হবেন। আর দাম কমে গেলে তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন।

কৃষক ইউনুস আলী জানান, মাঝখানের বৃষ্টিতে তার  ক্ষেতের টমেটোতে পচন ধরেছে। তিনি যে লাভের আশা করেছিলেন তা ভেস্তে গেছে। এখন জমিতে যে কয়টি টমেটো আছে তা ভালো দামে বিক্রি হলে স্বস্তি পাবেন।

গোপালবাড়ি গ্রামের কৃষক করম আলী, হাবিবুর রহমানসহ অনেকেই জানান, টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে দামও ভালো পেয়েছেন। বাজার দর না কমলে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা তাদের।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার ৭২২ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায়  ২৪৬ হেক্টর গোয়ালন্দে ৩৫৭ হেক্টর,  পাংশায়  ৭৫ হেক্টর, কালুখালীতে ৩৫ হেক্টর এবং বালিয়াকান্দিতে ১০ হেক্টর জমিতে হয়েছে টমেটোর চাষ।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন সেক জানান, রাজবাড়ী জেলার পদ্মা তীর সংলগ্ন উড়াকান্দা, গোপালবাড়ি টমেটোর জোন ধরা হয়। এসব এলাকায় এবার টমেটার ভালো ফলন হয়েছে। টমেটো উৎপাদনের জন্য আমরা সর্বদাই কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবছর জাওয়াদের কারণে অসময়ে  বৃষ্টিপাতে কিছু জায়গায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সেসব জায়গায় পাম্প করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। টমেটোর পচনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা তার।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

টমেটোর ভালো ফলনে কৃষকের হাসির রেশ শেষ অব্দি থাকবে তো

প্রকাশের সময় : ০৬:৫৬:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২২

জনতার আদালত অনলাইন পদ্মা বিধৌত রাজবাড়ী জেলায় সব ধরনের কৃষি পণ্যই আবাদ হয়ে  থাকে। চলতি শীত মৌসুমে রাজবাড়ীতে ভালো হয়েছে টমেটোর চাষ। বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় খুশী তারা। কিন্তু মাঝখানে অসময়ের বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও টমেটোতে দেখা দিয়েছে পচন রোগ। বাজারের দাম পড়ে যাওয়া এবং পচন রোগের কারণে কৃষকের মুখের হাসি শেষ পর্যন্ত থাকবে কীনা তা নিয়েই রয়েছে সংশয়।  পচনরোগ ঠেকাতে এখনও ক্ষেতে দিতে হচ্ছে কীটনাশক।  কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পচন রোগ  ঠেকাতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদীর চরে বেশি ফলন হয় টমেটোর। সাধারণত চার জাতের টমেটো চাষ করেন চরের চাষীরা। সেগুলো হলো বিউটিফুল, বিপুল প্লাস, বিগল ও মিন্টু সুপার। চরের টমেটো চাষে খুব বেশি পরিশ্রম করতে  হয়না কৃষকদের। বর্ষার পলি মাটি পড়ে জমি  উর্বর হয়ে যায়। একারণে টমেটোর চারা রোপণ করার পর আবহাওয়া অনুকূল থাকলেই বাম্পার ফলন হয় টমেটোর। এবছরও তাই হয়েছিল। মাঝখানে অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকের মনে খানিক দুশ্চিন্তা ভর করেছে। যারা আগাম চাষ করেছিলো তারা  লাভবান হয়েছে।

সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা, গোপালবাড়ি  গ্রামে  পদ্মার  চরে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চাষ হয়েছে টমেটো। কোথাও  ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন কৃষক কৃষাণীরা। আবার কোথাও চলছে পরিচর্যা। কিছু টমেটো পেকে গেছে। আবার কিছু এখনও কাঁচাই রয়ে গেছে। ক্ষেত থেকে তোলা টমেটো কৃষকরা মাথায়  করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। সেগুলোই ভ্যানে করে নিয়ে যাবেন বাজারে বিক্রি করতে।

কৃষকরা জানান, নিজের জমিতে টমেটো চাষে বিঘা প্রতি চারা রোপণ, কীটনাশক প্রয়োগ, শ্রমিক মজুরিসহ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। জমি বর্গা নিয়ে চাষ করলে খরচ বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ। ভালো ফলন হলে এক বিঘা জমিতে দেড় থেকে দুশ মণ টমেটো পাওয়া যায়। বাজারে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হয় পাঁচ থেকে সাতশ টাকা।

উড়াকান্দা গ্রামের কৃষাণী আসমা বেগম জানান, এখন বাজারে যে দাম আছে তা যদি শেষ পর্যন্ত থাকে তাহলে তারা কিছুটা লাভবান হবেন। আর দাম কমে গেলে তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন।

কৃষক ইউনুস আলী জানান, মাঝখানের বৃষ্টিতে তার  ক্ষেতের টমেটোতে পচন ধরেছে। তিনি যে লাভের আশা করেছিলেন তা ভেস্তে গেছে। এখন জমিতে যে কয়টি টমেটো আছে তা ভালো দামে বিক্রি হলে স্বস্তি পাবেন।

গোপালবাড়ি গ্রামের কৃষক করম আলী, হাবিবুর রহমানসহ অনেকেই জানান, টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে দামও ভালো পেয়েছেন। বাজার দর না কমলে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা তাদের।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার ৭২২ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায়  ২৪৬ হেক্টর গোয়ালন্দে ৩৫৭ হেক্টর,  পাংশায়  ৭৫ হেক্টর, কালুখালীতে ৩৫ হেক্টর এবং বালিয়াকান্দিতে ১০ হেক্টর জমিতে হয়েছে টমেটোর চাষ।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন সেক জানান, রাজবাড়ী জেলার পদ্মা তীর সংলগ্ন উড়াকান্দা, গোপালবাড়ি টমেটোর জোন ধরা হয়। এসব এলাকায় এবার টমেটার ভালো ফলন হয়েছে। টমেটো উৎপাদনের জন্য আমরা সর্বদাই কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবছর জাওয়াদের কারণে অসময়ে  বৃষ্টিপাতে কিছু জায়গায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সেসব জায়গায় পাম্প করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। টমেটোর পচনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা তার।