Dhaka ০৯:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কালুখালীতে গড়াই নদীর ভাঙনে বেরি বাঁধের ৫০ মিটার এলাকা বিলীন ॥ রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৭:১০:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১
  • / 431

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের ঘাটোরা এলাকায় গড়াই নদীর ভাঙনে বেরি বাঁধের ৫০ মিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। অন্ততঃ ১০ গ্রামের মানুষ পড়েছে চরম দুর্দশায়। ১২ ফুট চওড়া রাস্তাটির অবশিষ্ট পাঁচ ফুট অংশ দিয়ে মানুষ শুধু হেঁটে চলাচল করতে পারছে। ভাঙনের তীব্রতা থাকায় বাকী অংশটুকুও যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তা হলে পায়ে হেঁটে চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন ঠেকানোর জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় তারা কাজ করতে পারছেনা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে একটু একটু করে ভাঙছে গড়াই নদী। ভাঙনে ছোট হয়ে যাচ্ছে সাওরাইল ইউনিয়নের মানচিত্র। গত ২০ দিন ধরে ইউনিয়নের বিকয়া, ঘাটোরা, পাতুরিয়া, আলমডাঙ্গী, বিলবারুয়া, হাটবাড়িয়া গ্রামে বেরি বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে বাঁধের ৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাঁধ সংলগ্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান ঘাটটির প্রায় অর্ধেক অংশ নদীতে চলে গেছে। এ অবস্থায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মরদেহ সৎকার করতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ভাঙনে মৃগী বাজার-বিকয়া সড়কের ঘাটোরা এলাকায় ১২ ফুট চওড়া রাস্তাটির সাত ফুটের মত ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট পাঁচ ফুট দিয়ে মানুষ হেঁটে চলাচল করছে। বিপদ সংকেত বুঝাতে টাঙানো হয়েছে লাল নিশান। এই রাস্তাটি দিয়ে ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ কালুখালী, পাংশা, রাজবাড়ী শহরে যাতায়াত করে থাকে। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় তারা চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। কৃষি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আকামত আলী জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গড়াই নদী ভাঙছে। ভাঙতে ভাঙতে ঘাটোরা মৌজার প্রায় সব টুকু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে এ এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির প্রায় ২০ ফুট নদীতে চলে গেছে। ১২ ফুট চওড়া রাস্তা সাত ফুট ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পাতুরিয়া, ভিটি, চরভিটি গ্রামের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন প্রায়। এই রাস্তার সাথে কয়েকটি বাড়ি ছিল। তারা ভাঙন দেখে বসতঘর আগেই নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে।

সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম আলী জানান, গড়াই নদীর ভাঙন শুরু হওয়ার পর তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। তারা এসে পরিদর্শন করে গেছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নদী তীরবর্তী কিছু বাড়িঘর এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে আছে। তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, গড়াই নদীর ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন তো অনেক দিন ধরেই চলছে। ভাঙনরোধের কাজ করতে আমরা একটি স্টিমেট করে বোর্ডে পাঠিয়েছি। বোর্ড থেকে অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু হবে। করোনার কারণে বাজেট সঙ্কুচিত হওয়ায় একটু সময় লাগতে পারে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জুন, জুলাই আগস্টে ইমার্জেন্সি সিচুৃয়েশনে বালির ব্যাগ ফেলার সুযোগ থাকে। কিন্তু এখন শুষ্ক মৌসুমে এ সুযোগ নেই। তারপরও আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে কিছু করা যায় কীনা সে চেষ্টা করবো। এছাড়া ভাঙন কবলিত এলাকার আশে পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি রয়েছে। এতে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হতে পারে। নিজের জমি কেউ ছাড়তে চায়না।

কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যেদিন বাঁধে ফাটল ধরে বিষয়টি সেদিনই আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। আমরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শনও করেছি। ভাঙন ঠেকানোর জন্য স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার মত সক্ষমতা আমাদের নেই। যা করার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে। যত দ্রুত ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া যায় ততই সবার জন্য মঙ্গল হবে। এছাড়া প্রশাসনিকভাবে যা যা করা দরকার তার সবই করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

কালুখালীতে গড়াই নদীর ভাঙনে বেরি বাঁধের ৫০ মিটার এলাকা বিলীন ॥ রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

প্রকাশের সময় : ০৭:১০:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের ঘাটোরা এলাকায় গড়াই নদীর ভাঙনে বেরি বাঁধের ৫০ মিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। অন্ততঃ ১০ গ্রামের মানুষ পড়েছে চরম দুর্দশায়। ১২ ফুট চওড়া রাস্তাটির অবশিষ্ট পাঁচ ফুট অংশ দিয়ে মানুষ শুধু হেঁটে চলাচল করতে পারছে। ভাঙনের তীব্রতা থাকায় বাকী অংশটুকুও যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তা হলে পায়ে হেঁটে চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন ঠেকানোর জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় তারা কাজ করতে পারছেনা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে একটু একটু করে ভাঙছে গড়াই নদী। ভাঙনে ছোট হয়ে যাচ্ছে সাওরাইল ইউনিয়নের মানচিত্র। গত ২০ দিন ধরে ইউনিয়নের বিকয়া, ঘাটোরা, পাতুরিয়া, আলমডাঙ্গী, বিলবারুয়া, হাটবাড়িয়া গ্রামে বেরি বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে বাঁধের ৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাঁধ সংলগ্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান ঘাটটির প্রায় অর্ধেক অংশ নদীতে চলে গেছে। এ অবস্থায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মরদেহ সৎকার করতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ভাঙনে মৃগী বাজার-বিকয়া সড়কের ঘাটোরা এলাকায় ১২ ফুট চওড়া রাস্তাটির সাত ফুটের মত ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট পাঁচ ফুট দিয়ে মানুষ হেঁটে চলাচল করছে। বিপদ সংকেত বুঝাতে টাঙানো হয়েছে লাল নিশান। এই রাস্তাটি দিয়ে ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ কালুখালী, পাংশা, রাজবাড়ী শহরে যাতায়াত করে থাকে। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় তারা চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। কৃষি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আকামত আলী জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গড়াই নদী ভাঙছে। ভাঙতে ভাঙতে ঘাটোরা মৌজার প্রায় সব টুকু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে এ এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির প্রায় ২০ ফুট নদীতে চলে গেছে। ১২ ফুট চওড়া রাস্তা সাত ফুট ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পাতুরিয়া, ভিটি, চরভিটি গ্রামের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন প্রায়। এই রাস্তার সাথে কয়েকটি বাড়ি ছিল। তারা ভাঙন দেখে বসতঘর আগেই নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে।

সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম আলী জানান, গড়াই নদীর ভাঙন শুরু হওয়ার পর তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। তারা এসে পরিদর্শন করে গেছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নদী তীরবর্তী কিছু বাড়িঘর এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে আছে। তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, গড়াই নদীর ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন তো অনেক দিন ধরেই চলছে। ভাঙনরোধের কাজ করতে আমরা একটি স্টিমেট করে বোর্ডে পাঠিয়েছি। বোর্ড থেকে অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু হবে। করোনার কারণে বাজেট সঙ্কুচিত হওয়ায় একটু সময় লাগতে পারে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জুন, জুলাই আগস্টে ইমার্জেন্সি সিচুৃয়েশনে বালির ব্যাগ ফেলার সুযোগ থাকে। কিন্তু এখন শুষ্ক মৌসুমে এ সুযোগ নেই। তারপরও আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে কিছু করা যায় কীনা সে চেষ্টা করবো। এছাড়া ভাঙন কবলিত এলাকার আশে পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি রয়েছে। এতে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হতে পারে। নিজের জমি কেউ ছাড়তে চায়না।

কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যেদিন বাঁধে ফাটল ধরে বিষয়টি সেদিনই আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। আমরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শনও করেছি। ভাঙন ঠেকানোর জন্য স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার মত সক্ষমতা আমাদের নেই। যা করার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে। যত দ্রুত ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া যায় ততই সবার জন্য মঙ্গল হবে। এছাড়া প্রশাসনিকভাবে যা যা করা দরকার তার সবই করা হয়েছে বলে জানান তিনি।