Dhaka ০৯:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোয়ালন্দে মরাপদ্মা নদীর জলমহাল নিয়ে চরম উত্তেজনা

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৩৩:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০
  • / ১২১৯ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মাত্র ২০ একর জলমহালের লিজ নিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকার বিশাল জলাশয়কে অপদখল করে রেখেছে প্রভাবশালী একটি চক্র। জলাশয়ে

নিজেদের রেকর্ডভুক্ত জমিতে মাছ ধরতে গিয়ে চক্রের হাতে এলাকার দরিদ্র জেলে ও জমির মালিকরা মার খাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মরা পদ্মা নদীর ওই বদ্ধকোলটি উন্মুক্ত রাখার দাবীতে এলাকাবাসী বহুদিন ধরেদাবী জানিয়ে আসলেও প্রশাসন এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেননি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। উপরন্তু জেলা প্রশাসন যে ২০ একর জায়গা লিজ দিয়েছে সেটাও চিহ্নিত করে দেয়নি। এর সুযোগ নিচ্ছে লিজধারী প্রভাবশালী চক্রটি। জলমহালটির নাম উজানচর ইউনিয়নের উজানচর (বদ্ধ) জলমহাল হলেও এর তফসিলভূক্ত জমি দেখানো হয়েছে উত্তর উজানচর, পূর্ব উজানচর এবং পাশ্ববর্তী দৌলতদিয়া ইউনিয়নের উত্তর দৌলতদিয়া ও দক্ষিণ দৌলতদিয়ার বিশাল অঞ্চল জুড়ে। যেখানে

কয়েক হাজার একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কোলটি দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ৩ বছরের জন্য লিজ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কথিত মাছ চাষের নামে কোলে রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। আগামী বৈশাখ পর্যন্ত তাদের

লিজের মেয়াদ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইজারাদের লোকজন জলমহালের দৌলতদিয়ার প্রায় ৫কিমি. অংশে জেলেদের মাছ ধরতে নিষেধ করে দিয়েছে। উজানচরের প্রায় ১০ কিমি. অংশে মাছ

ধরার অনুমতি দিলেও বিক্রিত মাছের ৪০ শতাংশ টাকা নিয়ে নিচ্ছে ইজারাদার। এর ব্যত্যয় ঘটলে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

দৌলতদিয়া হোসেন মন্ডল পাড়া ও সৈদাল পাড়ার জেলে সাহেদ শেখ (৪৫), আমির সিকদার (৬৫), লোকমান সরদার (৫৫), নান্নু মৃধা (৫২), আলামিন শেখসহ অনেকেই বলেন, আমরা জলাশয়ে জাল দিয়ে মাছ ধরতে গেলে কয়েকদিন আগে ইজারাদারের লোকজন আমাদেরকে মারধর করে জাল কেড়ে নিয়ে যায়। সেই সাথে আমাদের কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মূখে প্রাণে মারার ভয় দেখায় এবং মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ইজারাদের ভাড়াটে লোকজন অস্ত্র নিয়ে নদীতে টহল দেয় তারা অভিযোগ করেন। গত শনিবার তারা ট্রলার নিয়ে টহল দিতে আসলে এলাকার কয়েকশ লোক ধাওয়া দিয়ে ট্রলারটি আটক করে।

দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পপাদক মোঃ নজরুল ইসলাম দাবী করেন, তিনি বৈধভাবে লিজ নেয়া জলাশয়ের ভোগ দখলে রয়েছেন। জলাশয়ের পাহারাদারদের সাথে এলাকার মানুষের মধ্যে একটু সমস্যা হলেও থানা পুলিশের সহযোগীতায় সেটা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল জানান, দরিদ্র জেলেদের স্বার্থে জলাশয়ে ‘জাল যার, জলা তার’ নীতি বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। তাছাড়া সরকারিভাবে কতোটুকু এলাকা লিজ দেয়া হয়েছে এটারও নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত থাকা দরকার। অন্যথায় সমস্যা থেকেই যাবে। বড় ধরণের হানাহানিরও আশংকা রয়েছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, জলমহাল নিয়ে কিছু উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। তবে জনস্বার্থ বিরোধী যে কোন তৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছেন। অনেক কিছুই তার জানা নেই। তবে ফাইলপত্র দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এ ক্ষেত্রে জলাশয়ের মধ্যে থাকা ভূমি মালিকদের তিনি প্রশাসন বরাবর গণপিটিশন দাখিল করতে পরামর্শ দেন।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

গোয়ালন্দে মরাপদ্মা নদীর জলমহাল নিয়ে চরম উত্তেজনা

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৩:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মাত্র ২০ একর জলমহালের লিজ নিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকার বিশাল জলাশয়কে অপদখল করে রেখেছে প্রভাবশালী একটি চক্র। জলাশয়ে

নিজেদের রেকর্ডভুক্ত জমিতে মাছ ধরতে গিয়ে চক্রের হাতে এলাকার দরিদ্র জেলে ও জমির মালিকরা মার খাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মরা পদ্মা নদীর ওই বদ্ধকোলটি উন্মুক্ত রাখার দাবীতে এলাকাবাসী বহুদিন ধরেদাবী জানিয়ে আসলেও প্রশাসন এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেননি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। উপরন্তু জেলা প্রশাসন যে ২০ একর জায়গা লিজ দিয়েছে সেটাও চিহ্নিত করে দেয়নি। এর সুযোগ নিচ্ছে লিজধারী প্রভাবশালী চক্রটি। জলমহালটির নাম উজানচর ইউনিয়নের উজানচর (বদ্ধ) জলমহাল হলেও এর তফসিলভূক্ত জমি দেখানো হয়েছে উত্তর উজানচর, পূর্ব উজানচর এবং পাশ্ববর্তী দৌলতদিয়া ইউনিয়নের উত্তর দৌলতদিয়া ও দক্ষিণ দৌলতদিয়ার বিশাল অঞ্চল জুড়ে। যেখানে

কয়েক হাজার একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কোলটি দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ৩ বছরের জন্য লিজ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কথিত মাছ চাষের নামে কোলে রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। আগামী বৈশাখ পর্যন্ত তাদের

লিজের মেয়াদ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইজারাদের লোকজন জলমহালের দৌলতদিয়ার প্রায় ৫কিমি. অংশে জেলেদের মাছ ধরতে নিষেধ করে দিয়েছে। উজানচরের প্রায় ১০ কিমি. অংশে মাছ

ধরার অনুমতি দিলেও বিক্রিত মাছের ৪০ শতাংশ টাকা নিয়ে নিচ্ছে ইজারাদার। এর ব্যত্যয় ঘটলে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

দৌলতদিয়া হোসেন মন্ডল পাড়া ও সৈদাল পাড়ার জেলে সাহেদ শেখ (৪৫), আমির সিকদার (৬৫), লোকমান সরদার (৫৫), নান্নু মৃধা (৫২), আলামিন শেখসহ অনেকেই বলেন, আমরা জলাশয়ে জাল দিয়ে মাছ ধরতে গেলে কয়েকদিন আগে ইজারাদারের লোকজন আমাদেরকে মারধর করে জাল কেড়ে নিয়ে যায়। সেই সাথে আমাদের কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মূখে প্রাণে মারার ভয় দেখায় এবং মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ইজারাদের ভাড়াটে লোকজন অস্ত্র নিয়ে নদীতে টহল দেয় তারা অভিযোগ করেন। গত শনিবার তারা ট্রলার নিয়ে টহল দিতে আসলে এলাকার কয়েকশ লোক ধাওয়া দিয়ে ট্রলারটি আটক করে।

দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পপাদক মোঃ নজরুল ইসলাম দাবী করেন, তিনি বৈধভাবে লিজ নেয়া জলাশয়ের ভোগ দখলে রয়েছেন। জলাশয়ের পাহারাদারদের সাথে এলাকার মানুষের মধ্যে একটু সমস্যা হলেও থানা পুলিশের সহযোগীতায় সেটা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল জানান, দরিদ্র জেলেদের স্বার্থে জলাশয়ে ‘জাল যার, জলা তার’ নীতি বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। তাছাড়া সরকারিভাবে কতোটুকু এলাকা লিজ দেয়া হয়েছে এটারও নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত থাকা দরকার। অন্যথায় সমস্যা থেকেই যাবে। বড় ধরণের হানাহানিরও আশংকা রয়েছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, জলমহাল নিয়ে কিছু উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। তবে জনস্বার্থ বিরোধী যে কোন তৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছেন। অনেক কিছুই তার জানা নেই। তবে ফাইলপত্র দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এ ক্ষেত্রে জলাশয়ের মধ্যে থাকা ভূমি মালিকদের তিনি প্রশাসন বরাবর গণপিটিশন দাখিল করতে পরামর্শ দেন।