Dhaka ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে বন্যায় ১৫৩৭ হেক্টর ফসলের ক্ষতি ॥ মাছের ক্ষতি ৩ কোটি টাকার

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৭:২৫:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০
  • / ১৪৩০ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ চলতি বন্যায় রাজবাড়ীতে এক হাজার ৫৩৭ হেক্টর জমির ৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতি পোষাতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হাতে নিয়েছে পাঁচ প্রকল্প। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মাছেরও । কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বাড়তে থাকায় আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  চরম দুশ্চিন্তায় পাড়েছেন কৃষকরা।

রাজবাড়ী জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে চারটিই পদ্মা নদী বেষ্টিত। এগুলো হলো রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, কালুখালী ও পাংশা। এ চার উপজেলাতেই  এবার বন্যা  হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলের। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ, বোনা আউশ, রোপা আউশ, রোপা আমন বীজতলা, রোপা আমন, বোনা আমন, কলা, মরিচ, পটল, ঝিঙেসহ বিভিন্ন ধরণের শাক সব্জি ও কলা। পুকুর ও মাছের ঘের বন্যার পানিতে  নিমজ্জিত  হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে মাছেরও।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বন্যায় জেলায় এক হাজার  ৫৩৭  হেক্টর জমির  ফসল ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষতি নয় কোটি ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ছয় হাজার ২৫৮ জন। বন্যায় ফসলের ক্ষতি  পুষিয়ে নিতে কৃষি  অফিস চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য নেয়া হয়েছে পাঁচটি প্রকল্প। প্রথম প্রকল্পে জেলায়  পাঁচ একর রোপা আমনের বীজতলা করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হবে। প্রতিজন কৃষক দেড় শতক জায়গার জন্য চারা পাবে। দ্বিতীয় প্রকল্পে ছয়শ কৃষককে বিনামূল্যে মাশকলাই বীজ, ১০ কেজি করে ডিইপি সার ও পাঁচ কেজি করে পটাশ সার দেয়া হবে। মাশকলাই দুই মাসের মধ্যে কৃষক ঘরে তুলে নিয়ে আবার রবি ফসল রোপণ করতে পারবে। তৃতীয়  প্রকল্পে রয়েছে  ১৬ বিঘা জািমতে মেশিন দিয়ে চারা রোপণ করা হবে। মোট ৪১৬ জন কৃষকের জমিতে গিয়ে রোপণ করা হবে এসব চারা। চতুর্থ প্রকল্পে দুই হাজার কৃষককে সবজি  বীজ দেয়া হবে। একটি স্বল্পকালীন  আর একটি মধ্য মেয়াদি। পঞ্চম প্রকল্পে এক হাজার ৩৪৪ টি কৃষি পরিবারকে পুষ্টি বাগান করে দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি ইউনিয়নের ৩২টি পরিবারকে দেয়া হবে এ  সুযোগ। যেহেতু বাড়িতে করা হবে এজন্য কৃষাণীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তাদেরকে সব রকমের  সহযোগিতা করবে কৃষি বিভাগ।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক গোপাল কৃষ্ণ দাস জানান, কৃষকদের ক্ষতি  পুষিয়ে নিতে আমরা সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বীজতলায় চারা ফেলা হয়েছে। অন্য প্রকল্পগুলোও প্রক্রিয়াধীন। সকল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে এ প্রনোদনার আওতায় আনা হবে।

এদিকে রাজবাড়ী জেলায় চারশ ঘের ও পুকুর বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে মোট দুই কোটি ৭২ লাখ টাকার মাছ ও মাছের পোনার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। জেলা অফিস সূত্র জানিয়েছে, জেলার চার উপজেলায় চারশ মাছের ঘের  ও পুকুর নিমজ্জিত হয়েছে। ভেসে গেছে ১৬৬.২৫ মে.টন বড়  মাছ ও ২৪ লাখ পোনা। তিন থেকে পাঁচ  ইঞ্চি আকারের পোনার মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প ইত্যাদি। এছাড়া অবকাঠামোগত  ক্ষতি হয়েছে ১৯ লাখ  ২৫ হাজার টাকা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের তালিকা চূড়ান্ত করে মৎস্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীতে বন্যায় ১৫৩৭ হেক্টর ফসলের ক্ষতি ॥ মাছের ক্ষতি ৩ কোটি টাকার

প্রকাশের সময় : ০৭:২৫:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০

জনতার আদালত অনলাইন ॥ চলতি বন্যায় রাজবাড়ীতে এক হাজার ৫৩৭ হেক্টর জমির ৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতি পোষাতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হাতে নিয়েছে পাঁচ প্রকল্প। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মাছেরও । কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বাড়তে থাকায় আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  চরম দুশ্চিন্তায় পাড়েছেন কৃষকরা।

রাজবাড়ী জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে চারটিই পদ্মা নদী বেষ্টিত। এগুলো হলো রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, কালুখালী ও পাংশা। এ চার উপজেলাতেই  এবার বন্যা  হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলের। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ, বোনা আউশ, রোপা আউশ, রোপা আমন বীজতলা, রোপা আমন, বোনা আমন, কলা, মরিচ, পটল, ঝিঙেসহ বিভিন্ন ধরণের শাক সব্জি ও কলা। পুকুর ও মাছের ঘের বন্যার পানিতে  নিমজ্জিত  হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে মাছেরও।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বন্যায় জেলায় এক হাজার  ৫৩৭  হেক্টর জমির  ফসল ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষতি নয় কোটি ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ছয় হাজার ২৫৮ জন। বন্যায় ফসলের ক্ষতি  পুষিয়ে নিতে কৃষি  অফিস চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য নেয়া হয়েছে পাঁচটি প্রকল্প। প্রথম প্রকল্পে জেলায়  পাঁচ একর রোপা আমনের বীজতলা করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হবে। প্রতিজন কৃষক দেড় শতক জায়গার জন্য চারা পাবে। দ্বিতীয় প্রকল্পে ছয়শ কৃষককে বিনামূল্যে মাশকলাই বীজ, ১০ কেজি করে ডিইপি সার ও পাঁচ কেজি করে পটাশ সার দেয়া হবে। মাশকলাই দুই মাসের মধ্যে কৃষক ঘরে তুলে নিয়ে আবার রবি ফসল রোপণ করতে পারবে। তৃতীয়  প্রকল্পে রয়েছে  ১৬ বিঘা জািমতে মেশিন দিয়ে চারা রোপণ করা হবে। মোট ৪১৬ জন কৃষকের জমিতে গিয়ে রোপণ করা হবে এসব চারা। চতুর্থ প্রকল্পে দুই হাজার কৃষককে সবজি  বীজ দেয়া হবে। একটি স্বল্পকালীন  আর একটি মধ্য মেয়াদি। পঞ্চম প্রকল্পে এক হাজার ৩৪৪ টি কৃষি পরিবারকে পুষ্টি বাগান করে দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি ইউনিয়নের ৩২টি পরিবারকে দেয়া হবে এ  সুযোগ। যেহেতু বাড়িতে করা হবে এজন্য কৃষাণীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তাদেরকে সব রকমের  সহযোগিতা করবে কৃষি বিভাগ।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক গোপাল কৃষ্ণ দাস জানান, কৃষকদের ক্ষতি  পুষিয়ে নিতে আমরা সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বীজতলায় চারা ফেলা হয়েছে। অন্য প্রকল্পগুলোও প্রক্রিয়াধীন। সকল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে এ প্রনোদনার আওতায় আনা হবে।

এদিকে রাজবাড়ী জেলায় চারশ ঘের ও পুকুর বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে মোট দুই কোটি ৭২ লাখ টাকার মাছ ও মাছের পোনার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। জেলা অফিস সূত্র জানিয়েছে, জেলার চার উপজেলায় চারশ মাছের ঘের  ও পুকুর নিমজ্জিত হয়েছে। ভেসে গেছে ১৬৬.২৫ মে.টন বড়  মাছ ও ২৪ লাখ পোনা। তিন থেকে পাঁচ  ইঞ্চি আকারের পোনার মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প ইত্যাদি। এছাড়া অবকাঠামোগত  ক্ষতি হয়েছে ১৯ লাখ  ২৫ হাজার টাকা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের তালিকা চূড়ান্ত করে মৎস্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।