Dhaka ০১:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীর কালুখালীতে ব্যবসায়ীর লাশ বিল থেকে উদ্ধার॥ পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ ধরে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়ার পর তাকে হত্যা করা হয় ॥ অস্বীকার পুলিশের

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৪১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০
  • / ২০৬৫ জন সংবাদটি পড়েছেন

 

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর কাললুুখালী উপজেলার মাজবাড়ি ইউনিয়নের বেতবাড়িযা গ্রামে  রবিউল বিশ্বাস নামের মারামারি মামলার এক আসামিকে ধরে সন্ত্রাসীদের হাতে  তুলে দিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিউল একই গ্রামের মৃত আছিরউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। পেশায় সে একজন বেকারী ব্যবসায়ী ছিলেন।  ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ সুপার।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) লাবিব আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নিহতের বোন মাজবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য আমেনা বেগম জানান, তুচ্ছ একটি ঘটনায় তার ভাই রবিউলসহ চারজনের বিরুদ্ধে কালুখালী থানায় একটি মারামারি মামলা হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে কালুখালী থানার এসআই ফজলুসহ তিন জন পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজা  জানালা ভাংচুর করে। তার ভাইয়ের স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর তার দুই ভাই রবিউল ও আকতারকে ধরে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়। তার এক ভাই পালিয়ে বাঁচলেও অন্য ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। পরদিন সকালে বাড়ির অনতিদূরে একটি খাল থেকে তার ভাইয়ের লাশ খুঁজে পান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে  তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের তিনটি শিশু সন্তান  এতিম হয়ে গেল। ওদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার।

নিহতের স্ত্রী জানান, রাত দুইটার দিকে এলাকার তিন দুর্বৃত্ত তাদের বাড়িতে যায়। এসময় পুলিশও তাদের সাথে ছিল। তার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। সকালে তার লাশ পান। তিনি এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রফিক, ইলিয়াস ও রাকিব মাদক  ব্যবসার সাথে জড়িত। ওরাই হত্যা করেছে রবিউলকে। শনিবার সকালে কালুখালী থানার এসআই ফজলুসহ তিন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। ওই সময় এলাকাবাসী এসআই ফজলু ও  ইউসুফ মেম্বারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিচার দাবি করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালুখালী থানার ওসি কামরুল ইসলাম একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। ব্যর্থ হয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মেসেজ পাঠালে বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জনতার উপর লাঠিচার্জ করে তিন পুলিশ সদস্যকে মুক্ত করেন। এলাকাবাসী আরও জানায়, সাম্প্রতিককালে মাজবাড়ি ইউনিয়ন এলাকায় মাদক ব্যবসা জমজমাট। মাঝে মধ্যে চলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এসবেরই নেতৃত্ব দেয় ইউসুফ। নিহত রবিউলসহ কয়েকজন মাদক ব্যবসায় বাধা দিয়েছিল। একারণে তাকে অকালে প্রাণ হারাতে হলো। এলাকায় এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

অভিযুক্ত কালুখালী থানার এসআই ফজলুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, শুক্রবার ইলিয়াস নামে এক ব্যক্তি কালুখালী থানায় একটি মারামারি মামলা করেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বেতবাড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ওই মামলার আসামি বাবুল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় রেখে ঘুমাতে যান। আমি রবিউলদের বাড়িতে যাইনি। আর কোনো আসামি পাইনি। ফজরের নামাজের পর ওসি সাহেব ফোন করে বেতবাড়িয়া গ্রামে ঝামেলা হয়েছে এজন্য সেখানে জরুরী ভিত্তিতে যেতে বলেন। আমরা সেখানে গেলে নিহতের ভাই তাকে বলে, রবিউল পানিতে পড়ে গেছে। পরে লোকজন তার লাশ খুঁজে পায়। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর লোকজন উত্তেজিত হয়ে যায়।

ভুক্তভোগীরা আপনার নাম ধরেই কেন অভিযোগ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, উত্তেজিত জনতার কারণে ডাইভারশন হয়ে আমার নাম বলেছে।

কালুখালী থানার ওসি কামরুল হাসানের কর্পোরেট নাম্বারে কল দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ না করে বিচ্ছিন্ন করে দেন। একারণে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএম বলেন, একটি মামলার আসামি হিসেবে রাতে কালুখালী থানার পুলিশ রবিউল ও তার ভাই আকতারকে  গ্রেপ্তার করতে যায়। গ্রেপ্তারের  ভয়ে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে ডোবায় থাকা নৌকায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। ওই সময় অপর একটি নৌকায়  প্রতিপক্ষ ইলিয়াসসহ কয়েকজন ধর ধর বলে চিৎকার করে। তাদের ভয়ে আকতার  নৌকা থেকে নেমে একটি গাছের নিচে পালায়। আর রবিউল পানিতে ঝাঁপ দেয়। আমরা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে  আকতারের বক্তব্য নিয়েছি। নিহতের লাশ সুরতহাল করা হয়েছে। এব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ  করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এসব কারও শিখিয়ে দেয়া কথা।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীর কালুখালীতে ব্যবসায়ীর লাশ বিল থেকে উদ্ধার॥ পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ ধরে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়ার পর তাকে হত্যা করা হয় ॥ অস্বীকার পুলিশের

প্রকাশের সময় : ০৭:৪১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০

 

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর কাললুুখালী উপজেলার মাজবাড়ি ইউনিয়নের বেতবাড়িযা গ্রামে  রবিউল বিশ্বাস নামের মারামারি মামলার এক আসামিকে ধরে সন্ত্রাসীদের হাতে  তুলে দিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিউল একই গ্রামের মৃত আছিরউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। পেশায় সে একজন বেকারী ব্যবসায়ী ছিলেন।  ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ সুপার।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) লাবিব আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নিহতের বোন মাজবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য আমেনা বেগম জানান, তুচ্ছ একটি ঘটনায় তার ভাই রবিউলসহ চারজনের বিরুদ্ধে কালুখালী থানায় একটি মারামারি মামলা হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে কালুখালী থানার এসআই ফজলুসহ তিন জন পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজা  জানালা ভাংচুর করে। তার ভাইয়ের স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর তার দুই ভাই রবিউল ও আকতারকে ধরে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়। তার এক ভাই পালিয়ে বাঁচলেও অন্য ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। পরদিন সকালে বাড়ির অনতিদূরে একটি খাল থেকে তার ভাইয়ের লাশ খুঁজে পান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে  তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের তিনটি শিশু সন্তান  এতিম হয়ে গেল। ওদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার।

নিহতের স্ত্রী জানান, রাত দুইটার দিকে এলাকার তিন দুর্বৃত্ত তাদের বাড়িতে যায়। এসময় পুলিশও তাদের সাথে ছিল। তার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। সকালে তার লাশ পান। তিনি এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রফিক, ইলিয়াস ও রাকিব মাদক  ব্যবসার সাথে জড়িত। ওরাই হত্যা করেছে রবিউলকে। শনিবার সকালে কালুখালী থানার এসআই ফজলুসহ তিন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। ওই সময় এলাকাবাসী এসআই ফজলু ও  ইউসুফ মেম্বারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিচার দাবি করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালুখালী থানার ওসি কামরুল ইসলাম একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। ব্যর্থ হয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মেসেজ পাঠালে বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জনতার উপর লাঠিচার্জ করে তিন পুলিশ সদস্যকে মুক্ত করেন। এলাকাবাসী আরও জানায়, সাম্প্রতিককালে মাজবাড়ি ইউনিয়ন এলাকায় মাদক ব্যবসা জমজমাট। মাঝে মধ্যে চলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এসবেরই নেতৃত্ব দেয় ইউসুফ। নিহত রবিউলসহ কয়েকজন মাদক ব্যবসায় বাধা দিয়েছিল। একারণে তাকে অকালে প্রাণ হারাতে হলো। এলাকায় এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

অভিযুক্ত কালুখালী থানার এসআই ফজলুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, শুক্রবার ইলিয়াস নামে এক ব্যক্তি কালুখালী থানায় একটি মারামারি মামলা করেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বেতবাড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ওই মামলার আসামি বাবুল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় রেখে ঘুমাতে যান। আমি রবিউলদের বাড়িতে যাইনি। আর কোনো আসামি পাইনি। ফজরের নামাজের পর ওসি সাহেব ফোন করে বেতবাড়িয়া গ্রামে ঝামেলা হয়েছে এজন্য সেখানে জরুরী ভিত্তিতে যেতে বলেন। আমরা সেখানে গেলে নিহতের ভাই তাকে বলে, রবিউল পানিতে পড়ে গেছে। পরে লোকজন তার লাশ খুঁজে পায়। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর লোকজন উত্তেজিত হয়ে যায়।

ভুক্তভোগীরা আপনার নাম ধরেই কেন অভিযোগ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, উত্তেজিত জনতার কারণে ডাইভারশন হয়ে আমার নাম বলেছে।

কালুখালী থানার ওসি কামরুল হাসানের কর্পোরেট নাম্বারে কল দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ না করে বিচ্ছিন্ন করে দেন। একারণে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএম বলেন, একটি মামলার আসামি হিসেবে রাতে কালুখালী থানার পুলিশ রবিউল ও তার ভাই আকতারকে  গ্রেপ্তার করতে যায়। গ্রেপ্তারের  ভয়ে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে ডোবায় থাকা নৌকায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। ওই সময় অপর একটি নৌকায়  প্রতিপক্ষ ইলিয়াসসহ কয়েকজন ধর ধর বলে চিৎকার করে। তাদের ভয়ে আকতার  নৌকা থেকে নেমে একটি গাছের নিচে পালায়। আর রবিউল পানিতে ঝাঁপ দেয়। আমরা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে  আকতারের বক্তব্য নিয়েছি। নিহতের লাশ সুরতহাল করা হয়েছে। এব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ  করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এসব কারও শিখিয়ে দেয়া কথা।