Dhaka ০৯:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাংশায় প্রভাবশালীদের রোষাণলের শিকার সাংবাদিক আজাদ সাড়ে ৩ বছরেও দলিল লেখক পেশায় ফিরতে পারেননি ॥ পরিবার নিয়ে আর্থিক কষ্টে কাটছে দিন

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২০:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
  • / ১৯১৫ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ পেশায় তিনি দলিল লেখক। পাশাপাশি করতেন সাংবাদিকতাও। স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে নিউজ করে রোষাণলে পড়েন। প্রথমে দলিল লেখক সমিতি থেকে বহিষ্কার। পরে হামলা চালিয়ে পিটিয়ে চার হাত পা ভেঙে দেয়া হয়। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরেও তাকে ফিরতে দেয়া হয়নি নিজের পেশায়। চরম অর্থকষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন আবুল কালাম আজাদ। রাজবাড়ীর পাংশা পৌর এলাকার মাগুড়াডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্বদেশ খবর, কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত আন্দোলনের বাজার এবং ফরিদপুর থেকে প্রকাশিত বাঙ্গালীর খবর পত্রিকার পাংশা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

আবুল কালাম আজাদ জানান, বিভিন্ন  অনিয়ম তুলে ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে নিউজ করার কারণে প্রভাবশালীদের ইন্ধনে সাড়ে তিন বছর আগে তাকে দলিল লেখক সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর দুই দফা পুলিশ দিয়ে হয়রানী করা হয়। ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাত আটটার দিকে পাংশা টেম্পু স্ট্যান্ড এলাকায় দুর্বৃত্তরা তার উপর হামলা চালিয়ে লোহার রড, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে চার হাত পা ভেঙে দেয়। দীর্ঘ ৭১ দিন তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই ঘটনায় প্রাণভয়ে থানায় একটি জিডি পর্যন্ত করতে পারিনি। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হইনি। ফিরে এসে জীবন জীবীকার জন্য দলিল লেখক কাজে ফিরতে চাইলে সমিতির নেতারা আমাকে ফিরতে দিচ্ছেন না। আমাকে বলেছে এমপির কাছে যাও। আমি দুইবার এমপির কাছে গিয়েছি। শেষবার এমপি জিল্লুল হাকিম আমাকে বলেছেন, মিলেমিশে চলো। তারপরও আমি আমার কাজে ফিরতে পারছিনা। বিষয়টি রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারও জানেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার পরিবারে মা-বাবা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলেটির বয়স ১১ বছর পার হচ্ছে টাকার অভাবে তার সুন্নতে খাৎনা করাতে পারছিনা। সামনে ঈদ। আমার আড়াই বছরের মেয়ে আমাকে বলে বাবা, ঈদে আমাদের কিছু লাগবেনা। তুমি সাবধানে থেকো। আমার তিন ভাইয়ের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে কোনোমতে চলছি আমি। এখনও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কখন যেন আবার হামলা হয আমার উপর।

পাংশা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সুব্রত দাস সাগর জানান, আবুল কালাম আজাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। এখানে দেড় দুশ লোক কাজ করে। বিনা কারণে আমাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে। এসব নানাবিধ কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি  হয়েছে। আজাদকে এমপির(জিল্লুল হাকিম) সাথে দেখা করে কথা বলতে বলেছি। তার বাবা ভাই এসেছিলেন। তাদেরকেও একই কথা বলেছি। আমি সবার সাথে কথা বলে সবাই যদি মত দেয় তাহলেই সে কাজে ফিরতে পারবে।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। পলিটিক্যাল কোনো স্বার্থে ব্যাঘাত হয়তো ঘটেছে। দলিল লেখক সমিতি তাকে বহিষ্কার  করেছে। আমি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলাম। তারা জানিয়েছেন, আবুল কালাম আজাদ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেখে। তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে তাকে বহিষ্কার করেছে। সাব রেজিস্টারের সাথে কথা বলার পর তিনি বলেছেন, তার সদস্যপদ তিনি রিনিউ করে দেবেন।

পুলিশ সুপার বলেন, আবুল কালাম আজাদ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তাহলে থানায় জিডি করতে পারেন। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

পাংশায় প্রভাবশালীদের রোষাণলের শিকার সাংবাদিক আজাদ সাড়ে ৩ বছরেও দলিল লেখক পেশায় ফিরতে পারেননি ॥ পরিবার নিয়ে আর্থিক কষ্টে কাটছে দিন

প্রকাশের সময় : ০৮:২০:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০

জনতার আদালত অনলাইন ॥ পেশায় তিনি দলিল লেখক। পাশাপাশি করতেন সাংবাদিকতাও। স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে নিউজ করে রোষাণলে পড়েন। প্রথমে দলিল লেখক সমিতি থেকে বহিষ্কার। পরে হামলা চালিয়ে পিটিয়ে চার হাত পা ভেঙে দেয়া হয়। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরেও তাকে ফিরতে দেয়া হয়নি নিজের পেশায়। চরম অর্থকষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন আবুল কালাম আজাদ। রাজবাড়ীর পাংশা পৌর এলাকার মাগুড়াডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্বদেশ খবর, কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত আন্দোলনের বাজার এবং ফরিদপুর থেকে প্রকাশিত বাঙ্গালীর খবর পত্রিকার পাংশা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

আবুল কালাম আজাদ জানান, বিভিন্ন  অনিয়ম তুলে ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে নিউজ করার কারণে প্রভাবশালীদের ইন্ধনে সাড়ে তিন বছর আগে তাকে দলিল লেখক সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর দুই দফা পুলিশ দিয়ে হয়রানী করা হয়। ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাত আটটার দিকে পাংশা টেম্পু স্ট্যান্ড এলাকায় দুর্বৃত্তরা তার উপর হামলা চালিয়ে লোহার রড, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে চার হাত পা ভেঙে দেয়। দীর্ঘ ৭১ দিন তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই ঘটনায় প্রাণভয়ে থানায় একটি জিডি পর্যন্ত করতে পারিনি। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হইনি। ফিরে এসে জীবন জীবীকার জন্য দলিল লেখক কাজে ফিরতে চাইলে সমিতির নেতারা আমাকে ফিরতে দিচ্ছেন না। আমাকে বলেছে এমপির কাছে যাও। আমি দুইবার এমপির কাছে গিয়েছি। শেষবার এমপি জিল্লুল হাকিম আমাকে বলেছেন, মিলেমিশে চলো। তারপরও আমি আমার কাজে ফিরতে পারছিনা। বিষয়টি রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারও জানেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার পরিবারে মা-বাবা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলেটির বয়স ১১ বছর পার হচ্ছে টাকার অভাবে তার সুন্নতে খাৎনা করাতে পারছিনা। সামনে ঈদ। আমার আড়াই বছরের মেয়ে আমাকে বলে বাবা, ঈদে আমাদের কিছু লাগবেনা। তুমি সাবধানে থেকো। আমার তিন ভাইয়ের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে কোনোমতে চলছি আমি। এখনও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কখন যেন আবার হামলা হয আমার উপর।

পাংশা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সুব্রত দাস সাগর জানান, আবুল কালাম আজাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। এখানে দেড় দুশ লোক কাজ করে। বিনা কারণে আমাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে। এসব নানাবিধ কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি  হয়েছে। আজাদকে এমপির(জিল্লুল হাকিম) সাথে দেখা করে কথা বলতে বলেছি। তার বাবা ভাই এসেছিলেন। তাদেরকেও একই কথা বলেছি। আমি সবার সাথে কথা বলে সবাই যদি মত দেয় তাহলেই সে কাজে ফিরতে পারবে।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। পলিটিক্যাল কোনো স্বার্থে ব্যাঘাত হয়তো ঘটেছে। দলিল লেখক সমিতি তাকে বহিষ্কার  করেছে। আমি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলাম। তারা জানিয়েছেন, আবুল কালাম আজাদ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেখে। তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে তাকে বহিষ্কার করেছে। সাব রেজিস্টারের সাথে কথা বলার পর তিনি বলেছেন, তার সদস্যপদ তিনি রিনিউ করে দেবেন।

পুলিশ সুপার বলেন, আবুল কালাম আজাদ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তাহলে থানায় জিডি করতে পারেন। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারি।