Dhaka ০২:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বালিয়াকান্দির মনিমুকুর কিন্ডার গার্টেন : হোম টেস্টের নামে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের অভিযোগ

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৯:০৬:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুন ২০২০
  • / ১৭১৮ জন সংবাদটি পড়েছেন

 

জনতার আদালত অনলাইন ॥ করোনাকালে সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা থাকলেও হোম টেস্টের নামে বাড়িতে প্রশ্ন খাতা পৌছে দিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের অভিযোগ  উঠেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার মনিমুকুর কিন্ডার গার্টেন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনও বিব্রত ও অসন্তুষ্ট। তবে কিন্ডার গার্টেন কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে অসুবিধার কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তারা সবকিছু করছেন।

বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত মনিমুকুর কিন্ডার গার্টেন। প্রতিষ্ঠান ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যা প্রায় আড়াইশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হোম টেস্টের নামে অভিভাবকদের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাসের বকেয়া বেতন ও পরীক্ষার ফি ধার্য করা হয়েছে। গত শনিবার থেকে বাড়িতে বাড়িতে প্রশ্ন খাতা পৌছে দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ফেসবুকেও চালানো হচ্ছে প্রচ্রা প্রচারণা। বাড়িতে কীভাবে পরীক্ষা হয়। সেখানে ছাত্র ছাত্রীরা যদি দেখে লিখে পরীক্ষা দেয় তাহলে তার কার্যকারিতা কতটুকু এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরাই।

আব্দুল বারেক নামে একজন অভিভাবক জানান, তার ছেলে মনি মুকুর কিন্ডার গার্টেনের প্লে শ্রেণিতে পড়ে। তিন মাসের বেতন বাকী ছিল। সাথে পরীক্ষার ফি মিলিয়ে আড়াই হাজার টাকা দিয়েছেন। বাসায় প্রশ্ন ও খাতা পৌছে দিয়েছে। বাসাতেই পরীক্ষা হচ্ছে। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এ পরীক্ষা।

তবে, এ ধরণের পরীক্ষা পদ্ধতির সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন দিদারুল হক নামে আরেক অভিভাবক। তিনি জানান, তার মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়ে। কিন্ডার গার্টেন থেকে বলেছে, প্রশ্ন খাতা বাসায় পাঠিয়ে দেবে। বাড়িতে পরীক্ষা হবে। কিন্তু বাড়িতে পরীক্ষা হবে কীভাবে। তিন মাস পড়াশোনা হয়নি, ক্লাস হয়নি। কীভাবে মূল্যায়ন হবে। আশেপাশের কোনো স্কুলেই পরীক্ষা হচ্ছে না। বেতনও নিচ্ছে না। এজন্য আমি পরীক্ষা দেয়াতে রাজী হইনি। আর এভাবে পরীক্ষা হয় নাকি? বাড়িতে পরীক্ষা হলে বইয়ের সাপোর্ট নিতে পারে গার্ডিয়ানদের সাপোর্টও নিতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন অভিভাবক কিন্ডার গার্টেনের এমন উদ্যোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

মনিমুকুর কিন্ডার গার্টেনের অধ্যক্ষ রফিকউদৌলা বাবলুর কাছে এ বিষয়ে জানতে  চাইলে বলেন, ছাত্র ছাত্রীদের বাসায় প্রশ্ন খাতা পৌছে দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। বাড়িতেই পরীক্ষা হবে। এ ধরণের পরীক্ষা আয়োজন করাটা ঠিক হচ্ছে কীনা? এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঠিক হচ্ছে। কারণ শিক্ষার্থীরা সব ভুলে যাচ্ছে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করছিনা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া প্রসঙ্গে বলেন, এটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। তাই অনুমতির কোনো প্রয়োজন নেই। পরীক্ষার ফি প্রসঙ্গে বলেন, আমরা অভিভাবকদের বলেছি। যা পারেন দিয়েন।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। করোনায় পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে আছি। এরপরও জেলার শিক্ষা সংক্রান্ত অনলাইনে মিটিংয়ে আমি এটি উত্থাপন করেছি। উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ধরণের পরিস্থিতিতে পরীক্ষা আয়োজনের কোনো অনুমতি কাউকে দেয়া হয়নি। এটা ঠিকও হচ্ছে না। যেখানে ক্লাসই হয়নি। সেখানে পরীক্ষার কোনো মানেই হয়না। বালিয়াকান্দি ইউএনও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

বালিয়াকান্দির মনিমুকুর কিন্ডার গার্টেন : হোম টেস্টের নামে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ০৯:০৬:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুন ২০২০

 

জনতার আদালত অনলাইন ॥ করোনাকালে সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা থাকলেও হোম টেস্টের নামে বাড়িতে প্রশ্ন খাতা পৌছে দিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের অভিযোগ  উঠেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার মনিমুকুর কিন্ডার গার্টেন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনও বিব্রত ও অসন্তুষ্ট। তবে কিন্ডার গার্টেন কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে অসুবিধার কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তারা সবকিছু করছেন।

বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত মনিমুকুর কিন্ডার গার্টেন। প্রতিষ্ঠান ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যা প্রায় আড়াইশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হোম টেস্টের নামে অভিভাবকদের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাসের বকেয়া বেতন ও পরীক্ষার ফি ধার্য করা হয়েছে। গত শনিবার থেকে বাড়িতে বাড়িতে প্রশ্ন খাতা পৌছে দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ফেসবুকেও চালানো হচ্ছে প্রচ্রা প্রচারণা। বাড়িতে কীভাবে পরীক্ষা হয়। সেখানে ছাত্র ছাত্রীরা যদি দেখে লিখে পরীক্ষা দেয় তাহলে তার কার্যকারিতা কতটুকু এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরাই।

আব্দুল বারেক নামে একজন অভিভাবক জানান, তার ছেলে মনি মুকুর কিন্ডার গার্টেনের প্লে শ্রেণিতে পড়ে। তিন মাসের বেতন বাকী ছিল। সাথে পরীক্ষার ফি মিলিয়ে আড়াই হাজার টাকা দিয়েছেন। বাসায় প্রশ্ন ও খাতা পৌছে দিয়েছে। বাসাতেই পরীক্ষা হচ্ছে। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এ পরীক্ষা।

তবে, এ ধরণের পরীক্ষা পদ্ধতির সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন দিদারুল হক নামে আরেক অভিভাবক। তিনি জানান, তার মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়ে। কিন্ডার গার্টেন থেকে বলেছে, প্রশ্ন খাতা বাসায় পাঠিয়ে দেবে। বাড়িতে পরীক্ষা হবে। কিন্তু বাড়িতে পরীক্ষা হবে কীভাবে। তিন মাস পড়াশোনা হয়নি, ক্লাস হয়নি। কীভাবে মূল্যায়ন হবে। আশেপাশের কোনো স্কুলেই পরীক্ষা হচ্ছে না। বেতনও নিচ্ছে না। এজন্য আমি পরীক্ষা দেয়াতে রাজী হইনি। আর এভাবে পরীক্ষা হয় নাকি? বাড়িতে পরীক্ষা হলে বইয়ের সাপোর্ট নিতে পারে গার্ডিয়ানদের সাপোর্টও নিতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন অভিভাবক কিন্ডার গার্টেনের এমন উদ্যোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

মনিমুকুর কিন্ডার গার্টেনের অধ্যক্ষ রফিকউদৌলা বাবলুর কাছে এ বিষয়ে জানতে  চাইলে বলেন, ছাত্র ছাত্রীদের বাসায় প্রশ্ন খাতা পৌছে দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। বাড়িতেই পরীক্ষা হবে। এ ধরণের পরীক্ষা আয়োজন করাটা ঠিক হচ্ছে কীনা? এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঠিক হচ্ছে। কারণ শিক্ষার্থীরা সব ভুলে যাচ্ছে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করছিনা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া প্রসঙ্গে বলেন, এটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। তাই অনুমতির কোনো প্রয়োজন নেই। পরীক্ষার ফি প্রসঙ্গে বলেন, আমরা অভিভাবকদের বলেছি। যা পারেন দিয়েন।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। করোনায় পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে আছি। এরপরও জেলার শিক্ষা সংক্রান্ত অনলাইনে মিটিংয়ে আমি এটি উত্থাপন করেছি। উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ধরণের পরিস্থিতিতে পরীক্ষা আয়োজনের কোনো অনুমতি কাউকে দেয়া হয়নি। এটা ঠিকও হচ্ছে না। যেখানে ক্লাসই হয়নি। সেখানে পরীক্ষার কোনো মানেই হয়না। বালিয়াকান্দি ইউএনও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে।