Dhaka 6:56 pm, Sunday, 2 April 2023

চুলা জ্বলেনা কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষের ঘরে ॥ মানবেতর জীবনযাপন

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : 07:26:24 pm, Wednesday, 22 April 2020
  • / 1374 জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন॥ ‘ঘরে চাল নেই, ডাল নেই। দুই দিন ধরে চুলা জ্বলেনা। ছেলেমেয়েরা না খেয়ে আছে। তারা যখন খেতে চায় বুকটা ফেটে যায়। তাদের বুকে করে দিনগুলো কোনোমতে পার করে দিচ্ছি।’ – এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের আন্ধারমানিক গ্রামের ফরিদা বেগম। তার স্বামী আবু বক্কার একজন রিক্সাচালক। জানালেন, কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি তাদের। এখনও পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতাও পাননি।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে এভাবেই সীমাহীন দুঃখে কষ্টে কাটছে দারিদ্র পীড়িত মানুষের জীবন। যাদের ঘরে এখনও পৌছায়নি ত্রাণ সামগ্রী। পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে অনাহারী অর্ধাহারি মানুষের হাহাকার। আন্ধারমানিক গ্রামের বাসিন্দা আরিফ জানান, তাদের ৩ নং ওয়ার্ডে ৯০ জন দিনমজুর আছে। এপর্যন্ত কেউ সাহায্য পায়নি। তাদের ঘরে চুলা জ্বলেনা। তাদের খবরও কেউ নেয়না।
একই ইউনিয়নের গুপ্তমানিক গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানান, স্বামী-সন্তান মিলে নয়জনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম দিনমজুর ছেলে আমির শেখ। গত দুই সপ্তাহ ধরে তার কোন কাজ নেই। ঘরে যে খাবার ছিলো সেটাও শেষ হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছে কিছু চাল আনতে। এভাবে আর কতদিন কাটবেন?
সত্তর বছরের বৃদ্ধ আব্দুল আলি জানান, তারা খুব কষ্টে আছেন। কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি। রিক্সাচালক ওমর আলী জানান, রিক্সা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে যাত্রী পাওয়া যায়না। সারাদিনে ৪০ থেকে ৫০ টাকা আয় হয়। এদিয়ে একবেলার খাবারও জোটেনা।
এদিকে হতদরিদ্ররা যখন খাবারের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে বিপরীতে অনেক অবস্থাসম্পন্ন মানুষ পেয়েছেন ত্রাণ। তেমনই একজন আব্দুল ওহাব। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। ব্যবসা করেন। ছেলে বিদেশ থাকে। তিনি ত্রাণ পেয়েছেন। জানালেন, আমি অতটা স্বচ্ছল নই। ২৬ শতাংশ জমি আছে মাত্র। আর সরকারি ত্রাণ তিনি পাননি। ব্যক্তিগত ত্রাণ পেয়েছেন তিনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, চেয়ারম্যান মেম্বাররা তাদের পছন্দের লোকদের বেছে বেছে ত্রাণ দিচ্ছে। আবার ১০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও পেয়েছে সাত আট কেজি চাল।
এব্যাপারে পাঁচুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আলমগীর হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের জনসংখ্যা ২৫ হাজার। এর মধ্যে দুস্থ মানুষের সংখ্যা সাত থেকে আট হাজার। এপর্যন্ত তিনি সাড়ে তিন মে.টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। যা ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রথমে যে পাঁচশ কেজি চাল পেয়েছিলেন তা চায়ের দোকানীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। পরে একশ মে.টন চাল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির মাঝে এবং দুই টন চাল হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া দুই হাজার হতদরিদ্র পরিবারের তালিকা করে উপজেলা পরিষদে জমা দেয়া আছে।
১০ কেজির জায়গায় সাত কেজি চাল বিতরণের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান খান জানান, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় একশ মে.টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ৬০ মে.টন বিতরণ করা হয়েছে। হতদিরদ্রদের তালিকা করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি বলে জানান।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

চুলা জ্বলেনা কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষের ঘরে ॥ মানবেতর জীবনযাপন

প্রকাশের সময় : 07:26:24 pm, Wednesday, 22 April 2020

জনতার আদালত অনলাইন॥ ‘ঘরে চাল নেই, ডাল নেই। দুই দিন ধরে চুলা জ্বলেনা। ছেলেমেয়েরা না খেয়ে আছে। তারা যখন খেতে চায় বুকটা ফেটে যায়। তাদের বুকে করে দিনগুলো কোনোমতে পার করে দিচ্ছি।’ – এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের আন্ধারমানিক গ্রামের ফরিদা বেগম। তার স্বামী আবু বক্কার একজন রিক্সাচালক। জানালেন, কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি তাদের। এখনও পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতাও পাননি।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে এভাবেই সীমাহীন দুঃখে কষ্টে কাটছে দারিদ্র পীড়িত মানুষের জীবন। যাদের ঘরে এখনও পৌছায়নি ত্রাণ সামগ্রী। পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে অনাহারী অর্ধাহারি মানুষের হাহাকার। আন্ধারমানিক গ্রামের বাসিন্দা আরিফ জানান, তাদের ৩ নং ওয়ার্ডে ৯০ জন দিনমজুর আছে। এপর্যন্ত কেউ সাহায্য পায়নি। তাদের ঘরে চুলা জ্বলেনা। তাদের খবরও কেউ নেয়না।
একই ইউনিয়নের গুপ্তমানিক গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানান, স্বামী-সন্তান মিলে নয়জনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম দিনমজুর ছেলে আমির শেখ। গত দুই সপ্তাহ ধরে তার কোন কাজ নেই। ঘরে যে খাবার ছিলো সেটাও শেষ হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছে কিছু চাল আনতে। এভাবে আর কতদিন কাটবেন?
সত্তর বছরের বৃদ্ধ আব্দুল আলি জানান, তারা খুব কষ্টে আছেন। কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি। রিক্সাচালক ওমর আলী জানান, রিক্সা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে যাত্রী পাওয়া যায়না। সারাদিনে ৪০ থেকে ৫০ টাকা আয় হয়। এদিয়ে একবেলার খাবারও জোটেনা।
এদিকে হতদরিদ্ররা যখন খাবারের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে বিপরীতে অনেক অবস্থাসম্পন্ন মানুষ পেয়েছেন ত্রাণ। তেমনই একজন আব্দুল ওহাব। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। ব্যবসা করেন। ছেলে বিদেশ থাকে। তিনি ত্রাণ পেয়েছেন। জানালেন, আমি অতটা স্বচ্ছল নই। ২৬ শতাংশ জমি আছে মাত্র। আর সরকারি ত্রাণ তিনি পাননি। ব্যক্তিগত ত্রাণ পেয়েছেন তিনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, চেয়ারম্যান মেম্বাররা তাদের পছন্দের লোকদের বেছে বেছে ত্রাণ দিচ্ছে। আবার ১০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও পেয়েছে সাত আট কেজি চাল।
এব্যাপারে পাঁচুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আলমগীর হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের জনসংখ্যা ২৫ হাজার। এর মধ্যে দুস্থ মানুষের সংখ্যা সাত থেকে আট হাজার। এপর্যন্ত তিনি সাড়ে তিন মে.টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। যা ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রথমে যে পাঁচশ কেজি চাল পেয়েছিলেন তা চায়ের দোকানীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। পরে একশ মে.টন চাল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির মাঝে এবং দুই টন চাল হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া দুই হাজার হতদরিদ্র পরিবারের তালিকা করে উপজেলা পরিষদে জমা দেয়া আছে।
১০ কেজির জায়গায় সাত কেজি চাল বিতরণের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান খান জানান, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় একশ মে.টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ৬০ মে.টন বিতরণ করা হয়েছে। হতদিরদ্রদের তালিকা করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি বলে জানান।