Dhaka ১২:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোয়ালন্দে ধর্ষণের শিকার ৫ম শ্রেণির ছাত্রী অন্ত¡সত্ত্বা ॥ হতদরিদ্র শিশুটির ভবিষ্যৎ চিন্তায় উদ্বিগ্ন পরিবার

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৩৪:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ১৪৯২ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ এক রাজ্য কষ্ট আর ঘৃনা নিয়ে ভাঙা ঘরে ফুটফুটে চাঁদের মত মুখ ছেড়া কাঁথার নিচে লুকিয়ে রেখেছিল ১২ বছরের শিশুটি। স্বজনরা ডাকলে কাঁথার ভেতর থেকে মুখ বের করল সে। তখনো চোখ বেয়ে অঝরে ঝরছে অশ্রু। কোন কথা বলার শক্তিই যেন তার নেই। কিছু জিজ্ঞাসা করলে যতটুকু শব্দ করে সে তা কানে পৌছানোই কঠিন। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্তা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া শিশুর অবস্থা এখন এমনই।
সরেজমিন শিশুটিকে দেখতে গেলে সে ফিসফিস করে বলে, ‘স্যার আমি কিছু বলতে পারব না। ওই পশুটা আমারে শ্যাষ কইরা ফ্যালাইছে। আমি ওর ফাঁসি চাই।’ আস্তে আস্তে সে জানায়, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তারের দিকে সন্ধ্যা বাড়িতে আমি একাই ছিলাম। আচমকা পাশের বাড়ির ইয়াসিন এসে আমার মুখ চেপে তাদের ঘরে নিয়ে আমার হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে। এরপর এই কথা কাউকে বললে আমাকে ও আমার ছোট ভাইটাকে খুন করে ফেলার ভয় দেখায়। আমিও ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি।
তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সাইদুল ইসলাম জানান, গত ২৯ জানুয়ারী সমাবেশ চলাকালে হঠাৎ শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। দ্রুত তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অন্তসত্ত্বর বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে ধারনা করে। পরে তাকে ফরিদপুরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন সে সাড়ে চার মাসের অন্তস্বত্ত্বা।
স্থানীয়রা জানান, শিশুটির বাবা হত দরিদ্র রিক্সা চালক। কিছুটা মানুসিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় আয়-রোজগার তেমন একটা করতে পারেন না। শিশুটির মা কাক ডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। দুই সন্তানের মধ্যে কন্যাশিশুটি বড়। ছোট ছেলেটিও মানুষিক প্রতিবন্দি।
স্থানীয় আ. সামাদ শেখ জানান, পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় ইয়াসিন দীর্ঘদিন ওই শিশুটির মা’কে যৌন হয়রানি করত। এ নিয়ে ইয়াসিনকে একাধিক বার সাবধান করা হয়েছিল। এর মধ্যেই তার কু-দৃষ্টি পড়ে মেয়ের দিকে। অবুঝ শিশুটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ইয়াসিন তার লালসার শিকার করে। ইয়াছিন মন্ডল গোয়ালন্দ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের আদর্শ গ্রামের মৃত নবু মন্ডলের ছেলে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি ইয়াসিন বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক।
এদিকে শিশু কন্যাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হতদরিদ্র অসহায় পরিবারটি। অসুস্থ ওই শিশুর জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও অর্থাভাবে তাকে সঠিক চিকিৎসা পর্যন্ত দিতে পারছে না।
আলাপকালে শিশুটির চাচী জানান, ওর বাপ অনেকটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী প্রকৃতির মানুষ। রিক্সা চালিয়ে যা আয়-রোজগার করে তা দিয়ে ওদের ৫ জনের সংসারের খরচ চলে না। এ অবস্থায় মেয়েটির এ অবস্থা। যে কারণে আমি মেয়েটিকে আমার ঘরে এনে রেখেছি। নিজের ঘরে যা জোটে তাই ওকে খেতে দেই। কিন্তু গত সপ্তাহ ধরে কিছুই খেতে পারছে না। কিছু খাওয়ালেও বমি করে ফেলছে। সারাক্ষণ শরীরে জ্বর ও ঠান্ডা লেগে থাকে। আমাদের ৬ জনের সংসারই ঠিক মত চলে না। ওকে কিভাবে একটু ভালমতো খাওয়াবো বা ডাক্তার দেখাবো?
শিশুটির মা জানান, দীর্ঘদিন ধরে লম্পট ইয়াসিন আমাকে কুপ্রস্তাব দিত। বিষয়টি আমি এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের জানিয়েছিলাম। সে আমার বেলায় ব্যার্থ হয়ে আমার অবুঝ শিশুটির এত বড় সর্বনাশ করল। এ অবস্থায় আমাদের কি হবে? হয়ত পশুটার বিচার হবে, কিন্তু আমার মেয়েটার কি হবে?
শিশুটির বৃদ্ধা দাদী জানান, পুলিশ ইয়াসিনরে ধরে জেলে দিছে। কিন্তু আমরা গরীব মানুষ। মামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। ইয়াসিন তো জেল থেকে বাহির হয়ে আসবে। তিনি আশংকা প্রকাশ করে জানান, তার নাতিনকে হয়তো এই অবস্থায় বাঁচাতে পারবে না।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, বিষয়টি ধমাচাপা দেওয়ার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর সহ অন্যান্যরা শালিশ বৈঠকে বসেছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষকসহ শালিশদারদের আটক করা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে শালিশদারদের ছেড়ে দেয়া হয়। ধর্ষনের শিকার শিশুটি মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত ইয়াছিন মন্ডলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এছাড়া সে আদালতে সে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘শিশুটির বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার দরকার। এটা দেয়া না গেলে ওই শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে।’ এ ব্যাপারে তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহবান করেন।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

গোয়ালন্দে ধর্ষণের শিকার ৫ম শ্রেণির ছাত্রী অন্ত¡সত্ত্বা ॥ হতদরিদ্র শিশুটির ভবিষ্যৎ চিন্তায় উদ্বিগ্ন পরিবার

প্রকাশের সময় : ০৮:৩৪:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০

জনতার আদালত অনলাইন ॥ এক রাজ্য কষ্ট আর ঘৃনা নিয়ে ভাঙা ঘরে ফুটফুটে চাঁদের মত মুখ ছেড়া কাঁথার নিচে লুকিয়ে রেখেছিল ১২ বছরের শিশুটি। স্বজনরা ডাকলে কাঁথার ভেতর থেকে মুখ বের করল সে। তখনো চোখ বেয়ে অঝরে ঝরছে অশ্রু। কোন কথা বলার শক্তিই যেন তার নেই। কিছু জিজ্ঞাসা করলে যতটুকু শব্দ করে সে তা কানে পৌছানোই কঠিন। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্তা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া শিশুর অবস্থা এখন এমনই।
সরেজমিন শিশুটিকে দেখতে গেলে সে ফিসফিস করে বলে, ‘স্যার আমি কিছু বলতে পারব না। ওই পশুটা আমারে শ্যাষ কইরা ফ্যালাইছে। আমি ওর ফাঁসি চাই।’ আস্তে আস্তে সে জানায়, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তারের দিকে সন্ধ্যা বাড়িতে আমি একাই ছিলাম। আচমকা পাশের বাড়ির ইয়াসিন এসে আমার মুখ চেপে তাদের ঘরে নিয়ে আমার হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে। এরপর এই কথা কাউকে বললে আমাকে ও আমার ছোট ভাইটাকে খুন করে ফেলার ভয় দেখায়। আমিও ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি।
তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সাইদুল ইসলাম জানান, গত ২৯ জানুয়ারী সমাবেশ চলাকালে হঠাৎ শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। দ্রুত তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অন্তসত্ত্বর বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে ধারনা করে। পরে তাকে ফরিদপুরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন সে সাড়ে চার মাসের অন্তস্বত্ত্বা।
স্থানীয়রা জানান, শিশুটির বাবা হত দরিদ্র রিক্সা চালক। কিছুটা মানুসিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় আয়-রোজগার তেমন একটা করতে পারেন না। শিশুটির মা কাক ডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। দুই সন্তানের মধ্যে কন্যাশিশুটি বড়। ছোট ছেলেটিও মানুষিক প্রতিবন্দি।
স্থানীয় আ. সামাদ শেখ জানান, পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় ইয়াসিন দীর্ঘদিন ওই শিশুটির মা’কে যৌন হয়রানি করত। এ নিয়ে ইয়াসিনকে একাধিক বার সাবধান করা হয়েছিল। এর মধ্যেই তার কু-দৃষ্টি পড়ে মেয়ের দিকে। অবুঝ শিশুটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ইয়াসিন তার লালসার শিকার করে। ইয়াছিন মন্ডল গোয়ালন্দ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের আদর্শ গ্রামের মৃত নবু মন্ডলের ছেলে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি ইয়াসিন বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক।
এদিকে শিশু কন্যাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হতদরিদ্র অসহায় পরিবারটি। অসুস্থ ওই শিশুর জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও অর্থাভাবে তাকে সঠিক চিকিৎসা পর্যন্ত দিতে পারছে না।
আলাপকালে শিশুটির চাচী জানান, ওর বাপ অনেকটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী প্রকৃতির মানুষ। রিক্সা চালিয়ে যা আয়-রোজগার করে তা দিয়ে ওদের ৫ জনের সংসারের খরচ চলে না। এ অবস্থায় মেয়েটির এ অবস্থা। যে কারণে আমি মেয়েটিকে আমার ঘরে এনে রেখেছি। নিজের ঘরে যা জোটে তাই ওকে খেতে দেই। কিন্তু গত সপ্তাহ ধরে কিছুই খেতে পারছে না। কিছু খাওয়ালেও বমি করে ফেলছে। সারাক্ষণ শরীরে জ্বর ও ঠান্ডা লেগে থাকে। আমাদের ৬ জনের সংসারই ঠিক মত চলে না। ওকে কিভাবে একটু ভালমতো খাওয়াবো বা ডাক্তার দেখাবো?
শিশুটির মা জানান, দীর্ঘদিন ধরে লম্পট ইয়াসিন আমাকে কুপ্রস্তাব দিত। বিষয়টি আমি এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের জানিয়েছিলাম। সে আমার বেলায় ব্যার্থ হয়ে আমার অবুঝ শিশুটির এত বড় সর্বনাশ করল। এ অবস্থায় আমাদের কি হবে? হয়ত পশুটার বিচার হবে, কিন্তু আমার মেয়েটার কি হবে?
শিশুটির বৃদ্ধা দাদী জানান, পুলিশ ইয়াসিনরে ধরে জেলে দিছে। কিন্তু আমরা গরীব মানুষ। মামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। ইয়াসিন তো জেল থেকে বাহির হয়ে আসবে। তিনি আশংকা প্রকাশ করে জানান, তার নাতিনকে হয়তো এই অবস্থায় বাঁচাতে পারবে না।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, বিষয়টি ধমাচাপা দেওয়ার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর সহ অন্যান্যরা শালিশ বৈঠকে বসেছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষকসহ শালিশদারদের আটক করা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে শালিশদারদের ছেড়ে দেয়া হয়। ধর্ষনের শিকার শিশুটি মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত ইয়াছিন মন্ডলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এছাড়া সে আদালতে সে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘শিশুটির বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার দরকার। এটা দেয়া না গেলে ওই শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে।’ এ ব্যাপারে তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহবান করেন।