Dhaka ১০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাংশায় চাঁদা না পেয়ে স্কুলছাত্রকে গুলি ॥ এজাহারে নাম নেই ছাত্রলীগ নেতা সিসিলের!

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৫৪:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ১৫১৩ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের তত্বিপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সুলতান মোড় এলাকায় চাঁদা না পেয়ে স্কুলছাত্র আজিমুদ্দিনকে গুলি করার ঘটনায় সোমবার রাতে পাংশা থানায় মামলা হয়েছে। আহত আজিমুদ্দিনের বাবা আজু মন্ডল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। তবে এজাহারে পাংশা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজবীর হাসান সিসিলের নাম নেই। এজাহারে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে থাকা রিঙ্কুকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। শুরু থেকেই তুক্তভোগীরা ঘটনার মূল হোতা সিসিলের নাম বলে আসলেও এজাহারে তার নাম না থাকায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সিসিল পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও মাছপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়োর ছেলে। গ্রেপ্তার রিঙ্কু তত্বিপুর গ্রামের সেকেন আলীর ছেলে।
গত শনিবার রাতে ঘটনা ঘটার পর আজু মন্ডল ও প্রত্যক্ষদর্শী তার ভাতিজা তপু মন্ডল সাংবাদিকদের কাছে যে বর্ণনা দেন তাতে সিসিলই ঘটনার মূল হোতা বলে প্রতীয়মান হয়। বরাবরই তারা বলে আসছিলেন চাঁদা না পেয়ে তাদেরকে মারধর করা হয়। পরে সিসিলের নির্দেশেই রিঙ্কু গুলি করে। তাদের সাথে আরও একজন ছিলো। অথচ সোমবার থানায় দায়ের করা এজাহারে কোথাও সিসিলের নাম নেই। এবিষয়ে জানতে মঙ্গলবার বিকেলে মামলার বাদী আজু মন্ডলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পাংশা থানার ওসি মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ জানান, স্কুলছাত্রকে গুলি করার ঘটনায় আহত ছাত্রের বাবা আজু মন্ডল বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় রিঙ্কুকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত কোনো আসামিও নেই। যেভাবে এজাহার দেয়া হয়েছে সেভাবেই গ্রহণ করা হয়েছে।
গত শনিবার রাত সাতটার দিকে একদল সন্ত্রাসী মাছপাড়া ইউনিয়নের তত্বিপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে সুলতান মোড়ে ব্যবসায়ী আজু মন্ডলের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেয়ে তারা স্কুলছাত্র আজিমুদ্দিন মন্ডলকে গুলি করে। বর্তমানে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত আজিম মাছপাড়া বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহত আজিমুদ্দিনের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ তপু মন্ডল গত রোববার জানিয়েছিলেন, তার চাচা আজু মন্ডল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। মাছপাড়া ইউনিয়নের তত্বিপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছেই তার ভুষিমালের দোকান। তার চাচাতো ভাই আজিমুদ্দিন জামাকাপড় কেনার উদ্দেশ্যে দোকানে এসে বসেছিল। শনিবার রাত সাতটার দিকে সিসিল, রিঙ্কু ও লিমন তার চাচার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাইতে আসে। চাঁদা না দেয়ায় তাদেরকে মারধর করে। একপর্যায়ে সিসিলের নির্দেশে রিঙ্কু পিস্তল দিয়ে গুলি করলে গুলিটি আজিমুদ্দিনের বুকে লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তারা চলে যায়। রিঙ্কু সিসিলের বডিগার্ড হিসেবে থাকে বলে জানান তিনি। আহতাবস্থায় আজিমুদ্দিনকে প্রথমে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার চাচা আজু মন্ডল আহত ছেলের শয্যাপাশে রয়েছেন।
একই ভাবে আজু মন্ডলও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঘটনার মূল হোতা সিসিল। তার নেতৃত্বে তিনজন চাঁদাবাজি করতে এসেছিল। চাঁদা না দেয়ায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
সোমবারও কথা হয়েছিল আজু মন্ডলের সাথে। তখন তিনি কান্নজাড়িত কণ্ঠে জানিয়েছিলেন, তার ছেলের অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। গুলিটি বুকের বামপাশে হৃদপিন্ডের কাছে আটকে আছে। গুলি বের না করা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। ডাক্তাররা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অবস্থা একটু ভালো হলে অপারেশন করা হবে। তারা থানায় অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে গত রবি ও সোমবার ছাত্রলীগ নেতা সিসিলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

পাংশায় চাঁদা না পেয়ে স্কুলছাত্রকে গুলি ॥ এজাহারে নাম নেই ছাত্রলীগ নেতা সিসিলের!

প্রকাশের সময় : ০৮:৫৪:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের তত্বিপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সুলতান মোড় এলাকায় চাঁদা না পেয়ে স্কুলছাত্র আজিমুদ্দিনকে গুলি করার ঘটনায় সোমবার রাতে পাংশা থানায় মামলা হয়েছে। আহত আজিমুদ্দিনের বাবা আজু মন্ডল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। তবে এজাহারে পাংশা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজবীর হাসান সিসিলের নাম নেই। এজাহারে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে থাকা রিঙ্কুকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। শুরু থেকেই তুক্তভোগীরা ঘটনার মূল হোতা সিসিলের নাম বলে আসলেও এজাহারে তার নাম না থাকায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সিসিল পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও মাছপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়োর ছেলে। গ্রেপ্তার রিঙ্কু তত্বিপুর গ্রামের সেকেন আলীর ছেলে।
গত শনিবার রাতে ঘটনা ঘটার পর আজু মন্ডল ও প্রত্যক্ষদর্শী তার ভাতিজা তপু মন্ডল সাংবাদিকদের কাছে যে বর্ণনা দেন তাতে সিসিলই ঘটনার মূল হোতা বলে প্রতীয়মান হয়। বরাবরই তারা বলে আসছিলেন চাঁদা না পেয়ে তাদেরকে মারধর করা হয়। পরে সিসিলের নির্দেশেই রিঙ্কু গুলি করে। তাদের সাথে আরও একজন ছিলো। অথচ সোমবার থানায় দায়ের করা এজাহারে কোথাও সিসিলের নাম নেই। এবিষয়ে জানতে মঙ্গলবার বিকেলে মামলার বাদী আজু মন্ডলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পাংশা থানার ওসি মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ জানান, স্কুলছাত্রকে গুলি করার ঘটনায় আহত ছাত্রের বাবা আজু মন্ডল বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় রিঙ্কুকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত কোনো আসামিও নেই। যেভাবে এজাহার দেয়া হয়েছে সেভাবেই গ্রহণ করা হয়েছে।
গত শনিবার রাত সাতটার দিকে একদল সন্ত্রাসী মাছপাড়া ইউনিয়নের তত্বিপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে সুলতান মোড়ে ব্যবসায়ী আজু মন্ডলের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেয়ে তারা স্কুলছাত্র আজিমুদ্দিন মন্ডলকে গুলি করে। বর্তমানে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত আজিম মাছপাড়া বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহত আজিমুদ্দিনের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ তপু মন্ডল গত রোববার জানিয়েছিলেন, তার চাচা আজু মন্ডল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। মাছপাড়া ইউনিয়নের তত্বিপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছেই তার ভুষিমালের দোকান। তার চাচাতো ভাই আজিমুদ্দিন জামাকাপড় কেনার উদ্দেশ্যে দোকানে এসে বসেছিল। শনিবার রাত সাতটার দিকে সিসিল, রিঙ্কু ও লিমন তার চাচার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাইতে আসে। চাঁদা না দেয়ায় তাদেরকে মারধর করে। একপর্যায়ে সিসিলের নির্দেশে রিঙ্কু পিস্তল দিয়ে গুলি করলে গুলিটি আজিমুদ্দিনের বুকে লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তারা চলে যায়। রিঙ্কু সিসিলের বডিগার্ড হিসেবে থাকে বলে জানান তিনি। আহতাবস্থায় আজিমুদ্দিনকে প্রথমে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার চাচা আজু মন্ডল আহত ছেলের শয্যাপাশে রয়েছেন।
একই ভাবে আজু মন্ডলও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঘটনার মূল হোতা সিসিল। তার নেতৃত্বে তিনজন চাঁদাবাজি করতে এসেছিল। চাঁদা না দেয়ায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
সোমবারও কথা হয়েছিল আজু মন্ডলের সাথে। তখন তিনি কান্নজাড়িত কণ্ঠে জানিয়েছিলেন, তার ছেলের অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। গুলিটি বুকের বামপাশে হৃদপিন্ডের কাছে আটকে আছে। গুলি বের না করা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। ডাক্তাররা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অবস্থা একটু ভালো হলে অপারেশন করা হবে। তারা থানায় অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে গত রবি ও সোমবার ছাত্রলীগ নেতা সিসিলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।