Dhaka ১১:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীর উচ্চ শিক্ষিত যুবক পলাশ দেশি মুরগীর খামার করে স্বাবলম্বী

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৪৬:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ২০৮০ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ পড়াশোনা শেষ করে সবাই চাকরী খোঁজে। নিজে কিছু করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে এমন আছে হাতেগোনা কয়েকজন। রাজবাড়ী শহরের বেড়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম পলাশ তেমনই একজন। ইচ্ছে আর উদ্যম থাকলে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব তা যেন তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। ব্যতিক্রমী দেশি মুরগীর খামার গড়ে তুলেছেন। সাথে করছেন মাছ চাষও। সমন্বিত প্রকল্পের মাধ্যমে মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা।
রাজবাড়ী জেলায় পাঁচটি পোল্ট্রি হ্যাচারিজ ও এক হাজারের মত রয়েছে মুরগীর ফার্ম। তবে দেশি মুরগীর ফার্ম একটিই। রাজবাড়ী প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
২০০৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স পাশ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকরী করেছেন পলাশ। বেতনও ভালো ছিল। কিন্তু তার চোখে ছিল নিজে কিছু করার স্বপ্ন। স্বেচ্ছায় চাকরী ছেড়ে দিয়ে সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গি গ্রামে পৈতৃক পুকুরের উপর ঘর তুলে শুরু করেন দেশি মুরগী পালন। চলছে মাছ চাষও।
তৌহিদুল ইসলাম পলাশ জানান, ছোটবেলা থেকেই তার কৃষিকাজের দিকে ঝোঁক ছিল। স্বপ্ন ছিল স্বাবলম্বী হওয়ার। চাকরী ছেড়ে বাড়িতে এসে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে তাদের পুকুরের উপর গড়ে তোলেন দেশি মুরগীর খামার। জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে মুরগী ও মুরগীর বাচ্চা সংগ্রহ করতে থাকেন। এটি ছিল ভীষণ কষ্টসাধ্য। এরপর ডিম সংগ্রহ করে সেগুলি বাছাই করতে হয়েছে। ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা লালন পালন ছিল আরও কঠিন। কারণ, ব্রয়লার বা সোনালী মুরগী পালন করা যতটা সহজ। দেশি মুরগী পালন করা ততটা সহজ নয়। অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে শেষ পর্যন্ত তার খামার এখন প্রতিষ্ঠিত। শুরুর দিকে তার খামারের মুরগী কেউ নিতে চাইতো না। সন্দেহ করতো এটি সোনালী বা লেয়ার হবে। এখন তার খামারের মুরগীর চাহিদা প্রচুর। মানুষ এসে তার খামার থেকে মুরগী কিনে নিয়ে যায়। ধীরে ধীরে খামারের প্রচার হচ্ছে। তার খামারে মুরগীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার। তিনশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন মুরগী। মাসে এক লাখ টাকার মত বিক্রি হয়।
মুরগীর ফার্মের পাশাপাশি দুটি পুকুরে মাছ চাষও করেন। সেখানেও রয়েছে দেশি মাছের প্রাধান্য। হারিয়ে যেতে বসা পুটি, বেলে, ট্যাংরা, শোল, টাকি ইত্যাদি মাছ চাষ করছেন। এসব মাছের পোনা সংগ্রহেও তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কারণ, গ্রাম বাংলায় পুকুর সব ভরাট হয়ে গোেছ। অনেক ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন এসব মাছের পোনা। এসব মাছের চাহিদাও ব্যাপক। এছাড়া নৌসি, কাতল, মৃগেল, অ্যমেরিকান রুই, গ্রাস কার্পও রয়েছে তার পুকুরে। প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর তিনি বিক্রি করেন মাছ।
তৌহিদুল ইসলাম পলাশ বলেন, পড়াশোনা করে যে চাকরী করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সদিচ্ছা থাকলে যে কোনো কিছু করা সম্ভব। আমি করেছি। আমি চাই অন্যরাও এগিয়ে আসুক।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল হক সরদার জানান, রাজবাড়ী জেলায় এক হাজারের মত মুরগীর ফার্ম রয়েছে। তবে দেশি মুরগীর ফার্মের তথ্য তার কাছে নেই। যদি এ ধরনের উদ্যোগ কেউ নিয়ে থাকে তবে প্রাণিসম্পদ অফিস তাকে অবশ্যই সহযোগিতা করবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীর উচ্চ শিক্ষিত যুবক পলাশ দেশি মুরগীর খামার করে স্বাবলম্বী

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৬:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

জনতার আদালত অনলাইন ॥ পড়াশোনা শেষ করে সবাই চাকরী খোঁজে। নিজে কিছু করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে এমন আছে হাতেগোনা কয়েকজন। রাজবাড়ী শহরের বেড়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম পলাশ তেমনই একজন। ইচ্ছে আর উদ্যম থাকলে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব তা যেন তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। ব্যতিক্রমী দেশি মুরগীর খামার গড়ে তুলেছেন। সাথে করছেন মাছ চাষও। সমন্বিত প্রকল্পের মাধ্যমে মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা।
রাজবাড়ী জেলায় পাঁচটি পোল্ট্রি হ্যাচারিজ ও এক হাজারের মত রয়েছে মুরগীর ফার্ম। তবে দেশি মুরগীর ফার্ম একটিই। রাজবাড়ী প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
২০০৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স পাশ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকরী করেছেন পলাশ। বেতনও ভালো ছিল। কিন্তু তার চোখে ছিল নিজে কিছু করার স্বপ্ন। স্বেচ্ছায় চাকরী ছেড়ে দিয়ে সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গি গ্রামে পৈতৃক পুকুরের উপর ঘর তুলে শুরু করেন দেশি মুরগী পালন। চলছে মাছ চাষও।
তৌহিদুল ইসলাম পলাশ জানান, ছোটবেলা থেকেই তার কৃষিকাজের দিকে ঝোঁক ছিল। স্বপ্ন ছিল স্বাবলম্বী হওয়ার। চাকরী ছেড়ে বাড়িতে এসে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে তাদের পুকুরের উপর গড়ে তোলেন দেশি মুরগীর খামার। জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে মুরগী ও মুরগীর বাচ্চা সংগ্রহ করতে থাকেন। এটি ছিল ভীষণ কষ্টসাধ্য। এরপর ডিম সংগ্রহ করে সেগুলি বাছাই করতে হয়েছে। ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা লালন পালন ছিল আরও কঠিন। কারণ, ব্রয়লার বা সোনালী মুরগী পালন করা যতটা সহজ। দেশি মুরগী পালন করা ততটা সহজ নয়। অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে শেষ পর্যন্ত তার খামার এখন প্রতিষ্ঠিত। শুরুর দিকে তার খামারের মুরগী কেউ নিতে চাইতো না। সন্দেহ করতো এটি সোনালী বা লেয়ার হবে। এখন তার খামারের মুরগীর চাহিদা প্রচুর। মানুষ এসে তার খামার থেকে মুরগী কিনে নিয়ে যায়। ধীরে ধীরে খামারের প্রচার হচ্ছে। তার খামারে মুরগীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার। তিনশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন মুরগী। মাসে এক লাখ টাকার মত বিক্রি হয়।
মুরগীর ফার্মের পাশাপাশি দুটি পুকুরে মাছ চাষও করেন। সেখানেও রয়েছে দেশি মাছের প্রাধান্য। হারিয়ে যেতে বসা পুটি, বেলে, ট্যাংরা, শোল, টাকি ইত্যাদি মাছ চাষ করছেন। এসব মাছের পোনা সংগ্রহেও তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কারণ, গ্রাম বাংলায় পুকুর সব ভরাট হয়ে গোেছ। অনেক ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন এসব মাছের পোনা। এসব মাছের চাহিদাও ব্যাপক। এছাড়া নৌসি, কাতল, মৃগেল, অ্যমেরিকান রুই, গ্রাস কার্পও রয়েছে তার পুকুরে। প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর তিনি বিক্রি করেন মাছ।
তৌহিদুল ইসলাম পলাশ বলেন, পড়াশোনা করে যে চাকরী করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সদিচ্ছা থাকলে যে কোনো কিছু করা সম্ভব। আমি করেছি। আমি চাই অন্যরাও এগিয়ে আসুক।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল হক সরদার জানান, রাজবাড়ী জেলায় এক হাজারের মত মুরগীর ফার্ম রয়েছে। তবে দেশি মুরগীর ফার্মের তথ্য তার কাছে নেই। যদি এ ধরনের উদ্যোগ কেউ নিয়ে থাকে তবে প্রাণিসম্পদ অফিস তাকে অবশ্যই সহযোগিতা করবে।