জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি খড়া নদী ভাঙন বজ্রপাত সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে ॥ রাজবাড়ীতে সনাকের মানববন্ধনে বক্তারা
- প্রকাশের সময় : ০৬:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৯
- / ২৬৭০ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি খড়া নদী ভাঙন বজ্রপাত সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। পরিবর্তনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে উপকূলীয় অঞ্চলসহ অন্যান্য জেলাগুলো সাগরের লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হবে। পৃথিবীতে কার্বণ নিঃসরণ বেড়ে যাবে। যা খুবই শঙ্কার কারণ।
সচেতন নাগরিক কমিটি রাজবাড়ী জেলা শাখার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজবাড়ী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্ত্বরে মানববন্ধন চলাকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উঠে আসে এসব কথা।
স্পেনের মাদ্রিদে আসন্ন কপ ২৫ সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিশ্র“ত জলবায়ু অর্থায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবিতে সনাক সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মো. নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন অ্যড. নাজমা সুলতানা, মোছা. লুৎফুন্নেছা, ডা. তসলিম উদ্দিন আহমেদ, লুৎফর রহমান লাবু, জাহাঙ্গীর হোসেন, রিফাত মোল্লা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সৌমিত্র শীল চন্দন।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু অর্থায়ন সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে যে স্বচ্ছতা কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে তাও আইনী বাধ্যতামূলক না হওয়ায় বাস্তবে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জন আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। অনুদান ভিত্তিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জলবায়ু অর্থায়ন এবং তার ব্যবহারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে টিআইবি ২০১১ সাল হতে ধারাবাহিকভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অংশীজনের সাথে গবেষণা-ভিত্তিক সুপারিশ বাস্তবায়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাকরছে। এর ফলে জলবায়ু অর্থাযনে সুশাসন নিশ্চিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি ইতিমধ্যে টিআইবি প্রণীত জলবায়ু প্রকল্প তদারকি কৌশল এবং সামাজিক নিরীক্ষা টুল কেনিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল,রুয়ান্ডা ও মেক্সিকোতে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এ প্রেক্ষিতে বিশ^ব্যাপী ঝুঁকিতে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের কোটি কোটি মানুষের স্বার্থে টিআইবি আসন্ন কপ-২৫ সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নে জলবায়ু অর্থায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে স্বচ্ছতা কাঠামো সম্বলিত রূপরেখা (রুল বুক) অনুযায়ী প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নও ‘ক্ষয়-ক্ষতি’ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সহ প্যারিস চুক্তির সাক্ষরকারী দেশসমূহের সংশ্লিষ্ট অংশীজনের বিবেচনার জন্য পেশ করছে-
দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদান নীতি বিবেচনা করে ঋণ নয়, শুধু সরকারি অনুদান, যা উন্নয়ন সহায়তার ‘অতিরিক্ত’ এবং ‘নতুন’ প্রতিশ্রুতিরবিপরীতে প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে;
ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশসমূহের পরিকল্পিত অভিযোজনের জন্য জিসিএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক তহবিল হতে প্রয়োজনীয় তহবিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথাসময়ে, সহজে সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ সহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সমন্বিতভাবে (ক্লাইমেট ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে) দাবি উপস্থাপন করা এবং তা আাদায়ে দর কষাকষিতে দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে;
উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে চাহিদা মাফিক জলবায়ু অনুদান ভিত্তিক তহবিল প্রদানে একটি সময়াবদ্ধ রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে;
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থ নিশ্চিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলো হতে প্রয়োজনীয় সম্পদ (জলবায়ু তহবিল, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং কারিগরি সহায়তা) সরবরাহের জোর দাবি উত্থাপন করতে হবে;
জিসিএফ এর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে সুশীল সমাজ সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে সমতা-ভিত্তিক প্রতিনিধিত্বমূলক এবং কার্যকর ট্রাস্টি বোর্ড গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের অভিযোজন কার্যক্রমে অনুদানকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে;
স্বল্পোন্নত দেশে অভিযোজন বাবদ অর্থায়নের অতিরিক্ত হিসেবে ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় বিশেষ তহবিল গঠন এবং তার জন্য দ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সোচ্চার হতে হবে;
‘ক্ষয়-ক্ষতি’ মোকাবেলায় জলবায়ু ঝুঁকি বিনিময় করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে বীমা করার পরিবর্তেউন্নত দেশসমূহ কর্তৃক ক্ষতিপূরণ আদায় করেঝুঁকি বিনিময়খরচ একটি আইনি কাঠামোর মাধ্যমে কার্যকর করতে হবে;এবং
জলবায়ু-তাড়িত বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন, কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিতে জিসিএফ এবং অভিযোজন তহবিল থেকে বিশেষ তহবিল বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের করণীয় সম্পর্কে দাবি করা হয়েছে ঃ
২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের স্বার্থে অনতিবিলম্বে রামপাল, তালতলি ও কলাপাড়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে ইউনেস্কো’র সুপারিশ অনুযায়ী অন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব-মুক্ত কৌশলগত পরিবেশের প্রভাব নিরুপণ সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে;
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকে লক্ষ্য করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করে, সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে;এবং
প্রত্যন্ত এলাকার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী, বিশেষকরে দরিদ্র জন্গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে জেলা-উপজেলাভিত্তিক জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে এবং ‘ক্ষয়-ক্ষতি’ মোকাবেলায় একটি জাতীয় কাঠামো প্রণয়নসহবিপন্ন মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে।