Dhaka ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার চলছেই । ১৫ দিনে ৩০২ জেলে আটক, ৭০ মণ মাছ ও ১৬ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৭:০১:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯
  • / ১৪৭৫ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ পদ্মা বিধৌত রাজবাড়ী জেলায় থামছে না ইলিশ শিকার। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই জেলেরা নামছে ইলিশ শিকারে। গত ১৫ দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে ৩০২ জন জেলে। এদের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। অভিযানে জব্দ করা হয়েছে ৭১ মণ ইলিশ ও প্রায় ১৬ লাখ মিটার কারেন্ট জাল। অভিযোগ রয়েছে, অভিযানে বের হলেই অসাধু কিছু কর্মকর্তা জেলেদের আগে থেকে জানিয়ে দেন। সময়মতো তারা সটকে পড়ে।
রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটিই পদ্মা নদীর তীরে। পাংশা, কালুখালী, রাজবাড়ী সদর হয়ে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয় পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার বিস্তৃত পদ্মা নদী। নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের পেশা মাছ ধরা।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, রাজবাড়ীতে তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ৯ হাজার ১১৯ জন। এদের মধ্যে ইলিশ প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চার হাজার ৬৬০ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। গত ১৫ দিনের অভিযানে ৩০২ জন জেলে আটক কয়েছে। এর মধ্যে ২৮১ জনকে কারাদন্ড এবং ২১ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। ইলিশ মাছ জব্দ হয়েছে ২৮০০ কেজি (৭০ মণ) এবং কারেন্ট জাল জব্দ হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ মিটার।
এতো জেল জরিমানার পরও জেলেরা ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যায়। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগিতায় পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযানে যাবার আগেই জেলেরা সংবাদ পেয়ে যায় এবং তাৎক্ষণিক জাল গুটিয়ে নৌকা নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেরা জানান, নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে বেশি মাছ পাওয়া যায়। তাই ঝুঁকি নিয়েই মাছ ধরতে নামেন। এসব ইলিশ কিছুটা কম দামে বিক্রি করেন। আবার অনেক ক্রেতা বেশি বেশি ইলিশ কিনে ফ্রিজে মজুদ করেন। জেলেরা জানান, তাদের পেশা মাছ ধরা। এটাই তাদের জীবন জীবীকা। মাছ না ধরলে পরিবারের সবাইকে অভুক্ত থাকতে হয়। তাই ঝুঁকি নিয়েই মাছ ধরতে যান। অভিযানের শুরুতে ২০ কেজি করে চাল দিয়েছে। এই চাল দিয়ে কয়দিন চলে?
এদিকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার কালীতলা, নয়নসুখ, অন্তারমোড়, দেবগ্রাম, কাওয়ালজানিসহ বিভিন্নস্থান জেলে ও ক্রেতাদের অভয়াশ্রম। এসব স্থানে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রায়ই ভিড় জমায়।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মজিনুর রহমান জানান, প্রজনন মৌসুমে জেলেদের ইলিশ শিকার থেকে বিরত রাখতে তারা প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইলিশ শিকারের সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেক জেলেকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। তবুও জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছে। জেলেদের অভিযানের বিষয়ে জানিয়ে দেয়া সম্পর্কে বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। আমার অফিসের স্টাফদের কড়া ভাষায় নিষেধ করেছি। আবার এমনটি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মৎস্য অফিস সংলগ্ন কিছু মানুষ আছে যারা অভিযানের গাড়ি বের হলেই বুঝে যায় এবং জেলেদের খবর দেয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে গত বারের তুলনায় এবার জেলেদের বিচরণ কম। আর এটি বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। কারণ, জেলেরা মনে করে নিষিদ্ধ সময়েই নদীতে বেশি মাছ পাওয়া যায়। তাদেরকে সচেতন করতে হবে। জব্দকৃত মাছ বিভিন্ন এতিমখানা মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটা সবাইকে বোঝাতে হবে। নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ শিকার না করলে ওই ইলিশ বড় হবে। জেলেরাই ধরবে। এটা তাদের অধিকার। আর্থিকভাবে তারাই লাভবান হবে। এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। যার যার জায়গা থেকে জেলেদের সচেতন করা গেলে সরকারের যে উদ্দেশ্য লক্ষ সেটা শতভাগ সফল হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার চলছেই । ১৫ দিনে ৩০২ জেলে আটক, ৭০ মণ মাছ ও ১৬ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ

প্রকাশের সময় : ০৭:০১:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

জনতার আদালত অনলাইন ॥ পদ্মা বিধৌত রাজবাড়ী জেলায় থামছে না ইলিশ শিকার। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই জেলেরা নামছে ইলিশ শিকারে। গত ১৫ দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে ৩০২ জন জেলে। এদের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। অভিযানে জব্দ করা হয়েছে ৭১ মণ ইলিশ ও প্রায় ১৬ লাখ মিটার কারেন্ট জাল। অভিযোগ রয়েছে, অভিযানে বের হলেই অসাধু কিছু কর্মকর্তা জেলেদের আগে থেকে জানিয়ে দেন। সময়মতো তারা সটকে পড়ে।
রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটিই পদ্মা নদীর তীরে। পাংশা, কালুখালী, রাজবাড়ী সদর হয়ে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয় পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার বিস্তৃত পদ্মা নদী। নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের পেশা মাছ ধরা।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, রাজবাড়ীতে তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ৯ হাজার ১১৯ জন। এদের মধ্যে ইলিশ প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চার হাজার ৬৬০ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। গত ১৫ দিনের অভিযানে ৩০২ জন জেলে আটক কয়েছে। এর মধ্যে ২৮১ জনকে কারাদন্ড এবং ২১ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। ইলিশ মাছ জব্দ হয়েছে ২৮০০ কেজি (৭০ মণ) এবং কারেন্ট জাল জব্দ হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ মিটার।
এতো জেল জরিমানার পরও জেলেরা ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যায়। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগিতায় পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযানে যাবার আগেই জেলেরা সংবাদ পেয়ে যায় এবং তাৎক্ষণিক জাল গুটিয়ে নৌকা নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেরা জানান, নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে বেশি মাছ পাওয়া যায়। তাই ঝুঁকি নিয়েই মাছ ধরতে নামেন। এসব ইলিশ কিছুটা কম দামে বিক্রি করেন। আবার অনেক ক্রেতা বেশি বেশি ইলিশ কিনে ফ্রিজে মজুদ করেন। জেলেরা জানান, তাদের পেশা মাছ ধরা। এটাই তাদের জীবন জীবীকা। মাছ না ধরলে পরিবারের সবাইকে অভুক্ত থাকতে হয়। তাই ঝুঁকি নিয়েই মাছ ধরতে যান। অভিযানের শুরুতে ২০ কেজি করে চাল দিয়েছে। এই চাল দিয়ে কয়দিন চলে?
এদিকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার কালীতলা, নয়নসুখ, অন্তারমোড়, দেবগ্রাম, কাওয়ালজানিসহ বিভিন্নস্থান জেলে ও ক্রেতাদের অভয়াশ্রম। এসব স্থানে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রায়ই ভিড় জমায়।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মজিনুর রহমান জানান, প্রজনন মৌসুমে জেলেদের ইলিশ শিকার থেকে বিরত রাখতে তারা প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইলিশ শিকারের সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেক জেলেকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। তবুও জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছে। জেলেদের অভিযানের বিষয়ে জানিয়ে দেয়া সম্পর্কে বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। আমার অফিসের স্টাফদের কড়া ভাষায় নিষেধ করেছি। আবার এমনটি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মৎস্য অফিস সংলগ্ন কিছু মানুষ আছে যারা অভিযানের গাড়ি বের হলেই বুঝে যায় এবং জেলেদের খবর দেয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে গত বারের তুলনায় এবার জেলেদের বিচরণ কম। আর এটি বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। কারণ, জেলেরা মনে করে নিষিদ্ধ সময়েই নদীতে বেশি মাছ পাওয়া যায়। তাদেরকে সচেতন করতে হবে। জব্দকৃত মাছ বিভিন্ন এতিমখানা মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটা সবাইকে বোঝাতে হবে। নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ শিকার না করলে ওই ইলিশ বড় হবে। জেলেরাই ধরবে। এটা তাদের অধিকার। আর্থিকভাবে তারাই লাভবান হবে। এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। যার যার জায়গা থেকে জেলেদের সচেতন করা গেলে সরকারের যে উদ্দেশ্য লক্ষ সেটা শতভাগ সফল হবে।