Dhaka ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ ॥ বিপাকে ক্রেতা বিক্রেতারা

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৭:২৬:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯
  • / ১৬৫২ জন সংবাদটি পড়েছেন


জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলা সাব রেজিস্টার না থাকায় রাজবাড়ীতে দীর্ঘ এক মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন জমি ক্রেতা বিক্রেতারা। রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আয় রোজগার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের। গত ৯ সেপ্টেম্বর তারিখ থেকে বন্ধ রয়েছে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা সাব রেজিস্টার কার্যালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিন ধরেই স্থায়ী সাব রেজিস্টার নেই। চলতি বছরের মার্চে বালিয়াকান্দি উপজেলার সাব রেজিস্টার লুৎফুননাহারকে অতিরিক্ত দায়িত্বে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় পাঠানো হয়। কোরবানীর ঈদের পরপর তিনি চলে যাওয়ার পর মাগুড়ার শ্রীপুর উপজেলার সাব রেজিস্টার স্বপন কুমার দেকেও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পদায়ন করা হয়। তিনি যোগ দেন ২৫ আগস্ট তারিখে। মাত্র ১৪ দিন পরেই অজানা কারণে তিনি চলে যান।
দীর্ঘ এক মাস জমি রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা বিক্রেতারা। তেমনই একজন রাজবাড়ী শহরের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বারেক মোল্লা। তিনি জানান, পোল্ট্রি খামার করে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। জমি বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে একটা ব্যবসা দাঁড় করানোর কথা ভাবছিলেন। কয়েক মাস আগে আবু বকর নামে এক ব্যক্তির কাছে জমি বিক্রি করেছেন। কিন্তু রেজিস্ট্রি না করতে পারায় খুব সমস্যায় আছেন। প্রতিদিনই রেজিস্ট্রি অফিসে আসছেন। রেজিস্ট্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, তিনি বিভিন্ন স্থানে ঋণগ্রস্ত হয়ে আছেন। ঋণ শোধ করার জন্য জমি বিক্রি করতে চান। এক মাস আগে লুৎফর রহমান নামে একজনের কাছে বিক্রির জন্য বায়নানামাও করেছেন। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি করতে না পারায় পাওনাদারদের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
রাজবাড়ী দলিল লেখক সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিন্টু জানান, এখানে ৭৯ জন দলিল লেখক ও ৩০ জনের মতো স্ট্যাম্প ভেন্ডার আছেন। যাদের আয়ের একমাত্র পথ দলিল লেখা। জমি রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় তারা প্রায় বেকার হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে তাদের আয় রোজগার। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগানো, সংসার চালানো চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মানবেতর জীবন যাপন করছেন দলিল লেখকরা।
তিনি আরও জানান, প্রতি সপ্তাহে দুই দিন রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চলতো। এতে দুই থেকে তিনশটি জমি রেজিস্ট্রি হতো। রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দলিল লেখকরা আসছেন ঠিকই কিন্তু নেই কোনো কাজ। বসে আছেন। তিনি দ্রুত এর সমাধান দাবি করেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব রেজিস্ট্রার স্বপন কুমার দে এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি রাজবাড়ীতে আর দায়িত্ব পালন করবনা, এই মর্মে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবে কী কারণে দায়িত্ব পালন করবেন না তা তিনি বলতে চাননি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীতে জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ ॥ বিপাকে ক্রেতা বিক্রেতারা

প্রকাশের সময় : ০৭:২৬:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯


জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলা সাব রেজিস্টার না থাকায় রাজবাড়ীতে দীর্ঘ এক মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন জমি ক্রেতা বিক্রেতারা। রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আয় রোজগার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের। গত ৯ সেপ্টেম্বর তারিখ থেকে বন্ধ রয়েছে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা সাব রেজিস্টার কার্যালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিন ধরেই স্থায়ী সাব রেজিস্টার নেই। চলতি বছরের মার্চে বালিয়াকান্দি উপজেলার সাব রেজিস্টার লুৎফুননাহারকে অতিরিক্ত দায়িত্বে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় পাঠানো হয়। কোরবানীর ঈদের পরপর তিনি চলে যাওয়ার পর মাগুড়ার শ্রীপুর উপজেলার সাব রেজিস্টার স্বপন কুমার দেকেও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পদায়ন করা হয়। তিনি যোগ দেন ২৫ আগস্ট তারিখে। মাত্র ১৪ দিন পরেই অজানা কারণে তিনি চলে যান।
দীর্ঘ এক মাস জমি রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা বিক্রেতারা। তেমনই একজন রাজবাড়ী শহরের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বারেক মোল্লা। তিনি জানান, পোল্ট্রি খামার করে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। জমি বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে একটা ব্যবসা দাঁড় করানোর কথা ভাবছিলেন। কয়েক মাস আগে আবু বকর নামে এক ব্যক্তির কাছে জমি বিক্রি করেছেন। কিন্তু রেজিস্ট্রি না করতে পারায় খুব সমস্যায় আছেন। প্রতিদিনই রেজিস্ট্রি অফিসে আসছেন। রেজিস্ট্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, তিনি বিভিন্ন স্থানে ঋণগ্রস্ত হয়ে আছেন। ঋণ শোধ করার জন্য জমি বিক্রি করতে চান। এক মাস আগে লুৎফর রহমান নামে একজনের কাছে বিক্রির জন্য বায়নানামাও করেছেন। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি করতে না পারায় পাওনাদারদের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
রাজবাড়ী দলিল লেখক সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিন্টু জানান, এখানে ৭৯ জন দলিল লেখক ও ৩০ জনের মতো স্ট্যাম্প ভেন্ডার আছেন। যাদের আয়ের একমাত্র পথ দলিল লেখা। জমি রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় তারা প্রায় বেকার হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে তাদের আয় রোজগার। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগানো, সংসার চালানো চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মানবেতর জীবন যাপন করছেন দলিল লেখকরা।
তিনি আরও জানান, প্রতি সপ্তাহে দুই দিন রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চলতো। এতে দুই থেকে তিনশটি জমি রেজিস্ট্রি হতো। রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দলিল লেখকরা আসছেন ঠিকই কিন্তু নেই কোনো কাজ। বসে আছেন। তিনি দ্রুত এর সমাধান দাবি করেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব রেজিস্ট্রার স্বপন কুমার দে এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি রাজবাড়ীতে আর দায়িত্ব পালন করবনা, এই মর্মে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবে কী কারণে দায়িত্ব পালন করবেন না তা তিনি বলতে চাননি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।