গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙনে চার গ্রাম নিশ্চিহ্ন
- প্রকাশের সময় : ০৭:১২:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০১৯
- / ১৫৩৪ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ভয়াবহ নদীভাঙন চলছে। ভাঙনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে পদ্মা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে উপজেলার পদ্মার পারের চারটি গ্রাম ঢল্লাপাড়া, নহারী মন্ডলপাড়া, ইসাইল শিবরামপুর ও আফসার শেখেরপাড়া। অপর চারটি গ্রাম লালু মন্ডলপাড়া, নতুনপাড়া, বেপারীপাড়া ও হাতেম মন্ডলপাড়া এলাকায় পদ্মার ভাঙনতান্ডব চলছে। পানির প্রবল ¯্রােত ও ঘূর্ণিপাঁকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ১ নম্বর ঘাটপন্টুন সংযোগ সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্য়ন্ত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডাব্লিউটিএ।
গত সোম ও মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের লালু মন্ডলপাড়া, নতুনপাড়া, বেপারীপাড়া ও হাতেম মন্ডলপাড়া গ্রাম এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙন চলছে। পানির প্রবল ¯্রােতের ঘূর্ণিপাঁকে মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পদ্মা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা, ঘরবাড়ি, কবরস্থানসহ অসংখ্য গাছপালা। পদ্মার এমন ভাঙনতান্ড দেখে ওই সব গ্রামের শত শত পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে, গাছপালা কেঁটে পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে ট্রলারে করে বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। ট্রলারে ওঠার আগে ওই সব পরিবারের লোকজন ও গ্রামের প্রতিবেশিরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বুকফাঁটা কান্নায় তারা ভেঙে পড়ছেন। হাতেম মন্ডলপাড়া গ্রামের মিন্টু মন্ডল, বক্কার মোল্লা, জানু প্রমানিক, শাজাহান সরদার জানান, গত তিন দিনে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে তাদের মতো সর্বস্ব হারিয়েছেন ওই গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার। প্রথম ও দ্বিতীয় দফা ভাঙনের পর পাশের ইসাইল শিবরামপুর গ্রামে পাঁচ-ছয়টি পরিবার অবশিষ্ট ছিলো। গত রবিরার সকালে ভাঙনের কবলে পড়ে গোটা ওই গ্রামটি পদ্মাগর্ভে নিশ্চিত হয়ে গেছে। এদিকে বেপারীপাড়া গ্রামের নবু খাঁন, সেলিম বেপারী, ওম্বার আলীসহ অনেকে জানান, এবারের বর্ষা মৌসুমে বেপারীপাড়া গ্রাম এলাকা ভাঙনমুক্ত ছিলো। কিন্তু গত শনিবার থেকে সেখানে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে ৩০টি পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। পাশাপাশি ভাঙন হুমকির মুখোমুখি হয়ে আছে ওই গ্রামে অবস্থিত ‘যদু মাতবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ভাঙন অব্যাহত থাকলে যে কোন সময় তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এদিকে নতুনপাড়া গ্রামের জব্বার মোল্লা, আক্কাছ মন্ডল, লালু সরদার জানান, নতুন করে ভাঙন শুরু হওয়ায় গত চার দিনে ওই গ্রামের ৪০টি পরিবারের বসতভিটা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের বর্ষা মৌসুমের প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ভাঙনের কবলে পড়ে দৌলতদিয়ার ঢল্লাপাড়া, নহারী মন্ডলপাড়া, ইসাইল শিবরামপুর ও আফসার শেখেরপাড়া নামের চারটি গ্রাম সম্পূর্ণ রুপে পদ্মা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তৃতীয় দফায় ব্যাপক হারে ভাঙন চলছে লালু মন্ডলপাড়া, নতুনপাড়া, বেপারীপাড়া ও হাতেম মন্ডলপাড়া গ্রাম এলাকায়। এদিরকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীভাঙনের কারণে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ছে। অথচ ভাঙন রোধে সেখানে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এদিকে বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যাবস্থাপক মো. আবু আব্দুল্লাহ জানান, দৌলতদিয়া ১ নম্বর ফেরিঘাটের পাঁচ শ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত নতুনপাড়া গ্রাম। ভাঙনের হাত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১ নম্বর ফেরি ঘাটটি আগলে রেখেছিলো ওই নতুনপাড়া গ্রাম। কিন্তু গত সোমবার রাতে নদীভাঙনের কবলে পড়ে নতুনপাড়া গ্রামের এক শ মিটার অংশ ভেঙে যায়। এতে প্রবল ¯্রােত পাঁকে পড়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ১ নম্বর ঘাটপন্টুনটি সংযোগ সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে সেখানে লাল পতাকা উড়িয়ে ওই ঘাটটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি প্রবল ¯্রােতের কারণে পাশের ২ নম্বর ঘাটপন্টুনে কোন ফেরি ভিরতে পারছে না। তাই ২ নন্বর ঘাটটি এখন অনেকটা পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। এদিকে বিআইডাব্লিউটিএ’র আরিচা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মানদীতে প্রবল ¯্রােত ও ঘুর্ণিপক সৃষ্টি হয়েছে। এতে লঞ্চ চলাচল অনেটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজবাড়ীর উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. আরিফ সরকার বলেন, ‘পদ্মার প্রচন্ড ¯্রােত ও ঘুর্ণিপকের কারণে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ১ নম্বর ঘাটটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ওই ঘাটটি রক্ষায় মঙ্গলবার দুপুর থেকে সেখানে বালু ভরা জিও ব্যাগ ফেলার দ্রুত কাজ চালানো হচ্ছে।’