Dhaka ১০:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোয়ালন্দে সরকারি খাদ্যগুদাম ঘিরে অসাধু ডিলার-মিলার সক্রিয়

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২০:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০১৯
  • / ১৫৩৭ জন সংবাদটি পড়েছেন


জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর রবিবার থেকে এলাকার তালিকাভুক্ত প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ সুযোগে উপজেলার সরকারি খাদ্য গুদাম ঘিরে একদল অসাধু ডিলার ও মিলার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় থেকে অবৈধ উপায়ে তারা সেখানে নি¤œমানের ধান ও গম সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জানা যায়, গোয়ালন্দ পৌর শহরের প্রধান সড়কের পাশে উপজেলার সরকারি খাদ্য গুদাম অবস্থিত। রবিবার থেকে সেখানে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে ওই দিন সকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে ধান ক্রয়ের শুভ উদ্বোধন করেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি রুবায়েত হায়াত শিপলু। উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিভিন্ন ডিলার, মিলারসহ এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপঁচা গ্রামের মো. লতিফ শেখ। তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের তালিকাভুক্ত একজন প্রকৃত কৃষক। এ বছরের উৎপাদিত বোরো ধান বিক্রি করতে রবিবার সকালে তিনি ওই খাদ্য গুদামে আসেন। পরে ওজন মেপে, সরকার নির্ধারিত প্রতিকেজি ২৬ টাকা মূল্যে তিনি সেখানে ৩ টন ধান বিক্রি করেন। এসময় উপস্থিত উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের নলডুবি গ্রামের অপর এক কৃষক রোকন উদ্দিন শেখ। তিনি জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচের তুলনায় বর্তমান ধানের বাজারমূল্য অনেক কম। তাই কষ্টে উৎপাদিত বোরো ধান নিয়ে এলাকার কৃষকরা এখন মহা বিপাকে পড়েছেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমি কোন দিন সরকারি এই খাদ্য গুদামে ধান-গম বিক্রি করতে পারিনি। কোন কারণে বিক্রি করতে পারিনি তা বলা যাবে না। তবে এবারই আমি দুই টন বোরো ধান বিক্রি করেছি। সরাসরি খাদ্য গুদামে এসে নিজ হাতে ধান বিক্রি করতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছি।’
এদিকে সরকারি ভাবে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় গোয়ালন্দ উপজেলার সরকারি ওই খাদ্য গুদামকে ঘিরে একদল অসাধু ডিলার ও মিলাররা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় থেকে অবৈধ উপায়ে তারা সেখানে নি¤œমানের ধান ও গম সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন। গোয়ালন্দ বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকণ্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধিন বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় এলাকার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-গম সংগ্রহের জন্য সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করে মধ্যসত্ব ভোগীদের কাছ থেকে ধান-গম সংগ্রহ করা হলে এলাকার প্রকৃত কৃষকরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’ গোয়ালন্দ উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এলাকার অধিক সংখ্যক কৃষককে সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে একজন কৃষক সর্বনি¤œ ১৫০ কেজি এবং সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন ধান-গম সরকারি গুদামে বিক্রি করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিজন কৃষক নির্ধারিত পরিমান ধান-গম কিস্তিতেও বিক্রি করতে পারবেন। তবে প্রতি কিস্তিতে ১৫০ কেজির কম হলে তা ক্রয় করা হবে না। গুণগত মান ও পরিমান পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে ধান-গম সংগ্রহের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কৃষককে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট পেইংয়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা হবে।’ গোয়ালন্দ উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-গম ক্রয় করা হবে বলে তিনি জানান।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের তালিকাভুক্ত এলাকার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে এ বছরের উৎপাদিত ধান-গম সরকারি খাদ্য গুদামে ক্রয় করা শুরু হয়েছে। তালিকার বাইরে অন্য কারো কাছ থেকে ধান-গম সংগ্রহ করা যাবে না।’

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

গোয়ালন্দে সরকারি খাদ্যগুদাম ঘিরে অসাধু ডিলার-মিলার সক্রিয়

প্রকাশের সময় : ০৮:২০:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০১৯


জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর রবিবার থেকে এলাকার তালিকাভুক্ত প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ সুযোগে উপজেলার সরকারি খাদ্য গুদাম ঘিরে একদল অসাধু ডিলার ও মিলার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় থেকে অবৈধ উপায়ে তারা সেখানে নি¤œমানের ধান ও গম সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জানা যায়, গোয়ালন্দ পৌর শহরের প্রধান সড়কের পাশে উপজেলার সরকারি খাদ্য গুদাম অবস্থিত। রবিবার থেকে সেখানে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে ওই দিন সকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে ধান ক্রয়ের শুভ উদ্বোধন করেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি রুবায়েত হায়াত শিপলু। উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিভিন্ন ডিলার, মিলারসহ এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপঁচা গ্রামের মো. লতিফ শেখ। তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের তালিকাভুক্ত একজন প্রকৃত কৃষক। এ বছরের উৎপাদিত বোরো ধান বিক্রি করতে রবিবার সকালে তিনি ওই খাদ্য গুদামে আসেন। পরে ওজন মেপে, সরকার নির্ধারিত প্রতিকেজি ২৬ টাকা মূল্যে তিনি সেখানে ৩ টন ধান বিক্রি করেন। এসময় উপস্থিত উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের নলডুবি গ্রামের অপর এক কৃষক রোকন উদ্দিন শেখ। তিনি জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচের তুলনায় বর্তমান ধানের বাজারমূল্য অনেক কম। তাই কষ্টে উৎপাদিত বোরো ধান নিয়ে এলাকার কৃষকরা এখন মহা বিপাকে পড়েছেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমি কোন দিন সরকারি এই খাদ্য গুদামে ধান-গম বিক্রি করতে পারিনি। কোন কারণে বিক্রি করতে পারিনি তা বলা যাবে না। তবে এবারই আমি দুই টন বোরো ধান বিক্রি করেছি। সরাসরি খাদ্য গুদামে এসে নিজ হাতে ধান বিক্রি করতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছি।’
এদিকে সরকারি ভাবে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় গোয়ালন্দ উপজেলার সরকারি ওই খাদ্য গুদামকে ঘিরে একদল অসাধু ডিলার ও মিলাররা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় থেকে অবৈধ উপায়ে তারা সেখানে নি¤œমানের ধান ও গম সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন। গোয়ালন্দ বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকণ্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধিন বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় এলাকার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-গম সংগ্রহের জন্য সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করে মধ্যসত্ব ভোগীদের কাছ থেকে ধান-গম সংগ্রহ করা হলে এলাকার প্রকৃত কৃষকরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’ গোয়ালন্দ উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এলাকার অধিক সংখ্যক কৃষককে সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে একজন কৃষক সর্বনি¤œ ১৫০ কেজি এবং সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন ধান-গম সরকারি গুদামে বিক্রি করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিজন কৃষক নির্ধারিত পরিমান ধান-গম কিস্তিতেও বিক্রি করতে পারবেন। তবে প্রতি কিস্তিতে ১৫০ কেজির কম হলে তা ক্রয় করা হবে না। গুণগত মান ও পরিমান পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে ধান-গম সংগ্রহের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কৃষককে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট পেইংয়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা হবে।’ গোয়ালন্দ উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-গম ক্রয় করা হবে বলে তিনি জানান।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের তালিকাভুক্ত এলাকার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে এ বছরের উৎপাদিত ধান-গম সরকারি খাদ্য গুদামে ক্রয় করা শুরু হয়েছে। তালিকার বাইরে অন্য কারো কাছ থেকে ধান-গম সংগ্রহ করা যাবে না।’