গোয়ালন্দে লাঠিপেটায় বৃদ্ধের মৃত্যু ॥ অভিযুক্ত ভাতিজা ও নাতী গ্রেপ্তার
![](https://jonotaradalot.com/wp-content/themes/template-pro/assets/images/reporter.jpg)
- প্রকাশের সময় : ০৭:২৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০১৯
- / ১৬৪৫ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ বসতবাড়ির সীমানাপ্রাচীর নির্মানকে কেন্দ্র করে ইব্রাহীম মীরমালত নামের এক বৃদ্ধাকে পিটিয়েছে তাঁরই ভাতিজা আমজাদ হোসেন ও নাতী রাসেল। এতে গুরুতর আহত ওই বৃদ্ধকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টানা ৪৩ ঘন্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর গতকাল শনিবার ভোরে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ভাতিজা ও নাতীকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের ভাগলপুর গ্রামে।
পুলিশ, মৃতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের ভাগলপুর গ্রাম। ওই গ্রামের বাসিন্দা সত্তুর বছরের বৃদ্ধ ইব্রাহীম মীরমালত। তিনি রাজবাড়ী সদর থানার খানখানাপুর বাজারের একজন সবজী ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর প্রতিবেশী আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে অটোরিক্সাচালক আমজাদ হোসেন মীরমালত (৪৫)। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১০টার দিকে আমজাদ ও তার ছেলে রাসেল মিলে বাঁশ দিয়ে বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মান করছিলেন। তখন জায়গা না মেপে প্রাচীর নির্মান কাজে বাঁধা দেন ইব্রাহীম। এ নিয়ে সেখানে চাচা-ভাতিজার মধ্যে প্রচন্ড বাকবিতন্ডা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আমজাদ হোসেন ও তার ছেলে রাসেল মিলে বৃদ্ধ ইব্রাহীম মীরমালতকে বেদম লাঠিপেটা করে। এ সময় ভাতিজা ও নাতীর লাঠিপেটায় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই বৃদ্ধ। পরে বিষয়টি জেনে আশপাশের অপর প্রতিবেশীরা দ্রুত এগিয়ে এসে গুরুতর আহত ইব্রাহীম মীরমালতকে উদ্ধার করে প্রথমে তাঁকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে টানা ৪৩ ঘন্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর গতকাল শনিবার ভোর সাড়ে ৪টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃদ্ধ ইব্রাহীম মৃত্যু বরণ করেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আমজাদ হোসেন মীরমালত ও তার ছেলে রাসেল মীরমালতকে গতকাল শনিবার দুপুরে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার দুপুরে গোয়ালন্দের ভাগলপুর গ্রামে মৃতের বাড়ি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়ির আঙ্গিনায় খাটের উপরে চাদড়ে ঢাকা বৃদ্ধ ইব্রাহীম মীরমালতের লাশ। ভাতিজা ও নাতীর লাঠিপেটায় নিহত ইব্রাহীমকে হারিয়ে পরিবার, প্রতিবেশী ও স্বজনদের মাঝে কান্নার রোল পড়েছে। সেখানে বৃদ্ধ স্বামীর লাশের পাশে বসে মাতম করছেন স্বামীহারা বৃদ্ধা তারাবানু বেগম। কিছুক্ষণ পর পর তিনি নিজ হাতে বুক চাপড়িয়ে চিৎকার করে বলছেন, ‘হে আল্লা, যারা আমার বুড়া সুয়ামীরে মারছে, তাগো তুমি বিচার কইরো।’ ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বসতবাড়ির সীমানাপ্রাচীর নির্মানকে কেন্দ্র করে এ ঘটনাটি ঘটেছে।’ তবে, ভাতিজা ও নাতীর লাঠিপেটায় বৃদ্ধ ইব্রাহীম মীরমালতের মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। এতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীর মনে চাঞ্চল্যতার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এজাজ শফী বলেন, ‘বৃদ্ধ ইব্রাহীম মীরমালত নিহত ঘটনায় অভিযুক্ত ভাতিজা আমজাদ হোসেন মীরমালত ও নাতী রাসেল মীরমালতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ নিহতের পারিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।