Dhaka ০১:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী দেড়শ বছরের পুরনো লাল ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্তে প্রতিবাদের ঝড় ॥ মানববন্ধন

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৩০:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০১৯
  • / ১৬৮৬ জন সংবাদটি পড়েছেন


জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজার নামে জেলা রাজবাড়ীতে ‘রাজবাড়ী’ এখন আর নেই। বহু আগেই ভেঙে ফেলা হয়েছে রাজবাড়ী। মুছে গেছে রাজবাড়ীর স্মৃতিচিহ্ন। অন্যসব পুরাকীর্তিগুলোও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো লাল ভবনটি। এই ভবনটিও ভেঙে নতুন ভবন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবনটি নিলামে বিক্রির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত কিছুতেই মানতে পারছেন না বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং জেলাবাসী। এই ভবনের সাথে অনেকেরই আবেগ অনুভূতি জড়িয়ে আছে বিধায় তারা এটিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। দেশ বিদেশ থেকে তারা আকুতি জানাচ্ছে ভবনটি রক্ষার। সোমবার ভবনটি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন পালিত হয়েছে।
জানা গেছে, ১৮৭১ সালে মাইনর স্কুল দিয়ে যেটির যাত্রা শুরু তা পূর্ণ রূপ পায় ১৮৯২ সালে। ১৮৯২ সালে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার বাণিবহ স্টেটের জমিদার গিরীজা শংকর মজুমদার ও অভয় শংকর মজুমদার রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা মৌজায় দি গোয়ালন্দ ইংলিশ হাই স্কুল নাম দিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে গোয়ালন্দ মডেল হাই স্কুল এবং সর্বশেষ রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। কালের পরিক্রমায় পুরনো ভবনটির পাশে ও সামনে আরও তিনটি ভবন নির্মিত হয়। যেকারণে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ইতিপূর্বেও ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানার পর বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা এটিকে রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করেন। ২০১৩ সালের জুন মাসে তারা রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেন। একই বছর তৎকালীন জেলা প্রশাসকের পত্রের প্রেক্ষিতে ভবনটি পরিদর্শন করে প্রতœতত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিদর্শক আতাউর রহমান জানিয়েছিলেন, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা করাই তাদের কাজ। প্রতœতত্ব বিভাগ এ ধরনের স্থাপনাÑ যেগুলি একশ বছরের পুরনো স্থাপনা আছে তা সংরক্ষণ করে থাকে। যে স্থাপনা ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে থাকেÑ তা সংরক্ষণ করে থাকে। রাজবাড়ীর যে স্কুলটি এটি অসাধারণ একটি স্থাপনা। এর সাথে অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তৎকালীন জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোলও ভবনটি সংরক্ষণে একমত পোষণ করে বলেছিলেন, প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ভবনটি প্রাচীন স্থাপনা যা পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের দাবি রাখে।
কিন্তু ভবনটি সংরক্ষণে এরপর আর কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি। গত ৯ মে তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক ২) মো. আমিনুল ইসলাম টুকু স্বাক্ষরিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর প্রেরিত চিঠিতে ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজবাড়ী এর একাডেমিক ভবন ১ এবং পুরাতন লাল ভবন অকেজো ঘোষণা ও নিলামে বিক্রির অনুমতি প্রদানের জন্য আবেদন করেছেন। এমতাবস্থায় সরকারি বিধি বিধান যথাযথ অনুসরণের শর্তে নির্দেশক্রমে অনুমতি প্রদান করা হলো। পরিত্যক্ত ভবন নিলামে বিক্রয় করে বিক্রয়লদ্ধ অর্থ ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা প্রদান করে জমাদানের কপি অধিদপ্তরে প্রেরণ করতে হবে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি একাডেমিক ভবন এবং একটি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। একাডেমিক ভবনÑ১ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় সেটিতে ক্লাস বন্ধ রয়েছে বেশ কিছুদিন। এই ভবনটির পাশেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী লাল ভবনটি। কর্তৃপক্ষ চাইছে একাডমিক ভবনÑ১ এর সাথে লাল ভবনটির জায়গা জুড়ে বহুতল ভবন স্থাপন করতে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় কেন তারা ঐতিহ্যবাহী লাল ভবনটি ভেঙে ফেলার আবেদন করেছিলেন এব্যাপারে কথা বলেননি কেউ।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রেজাউল করিম বলেন, এই ভবনটিতে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এটি রাজবাড়ী জেলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত আমরা কিছুতেই সমর্থন করিনা। অবশ্যই এটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
রাজবাড়ী সচেতন নাগরিক কমিটির অন্যতম সদস্য কবি খোকন মাহমুদ বলেন, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে ঐতিহ্যে কুঠারাঘাত। এটি রক্ষার্থে রাজবাড়ীবাসীকে আন্দোলনে নামতে হবে।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সাংবাদিক সৌমিত্র শীল বলেন, ১৮৯২ সালে এই প্রাচীন ভবন নির্মাণ হওয়ার পর থেকে এখনও ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে রয়েছে। এটি শুধু রাজবাড়ীর নয় বরং বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। সেকারণে এই ভবনটি রক্ষার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
রাজবাড়ীর বাসিন্দা ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ের ছাত্রী সেজুতি তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, স্কুল এর পাশ দিয়ে গেলে এই বিল্ডিং এর দিকে একবার হলেও চোখ ফেরাই। দারুণ লাগে। রাজবাড়ীর রাজবাড়ীটা অর্থাৎ রাজা সূর্য কুমারের বাড়িটা বিক্রি করে ভেঙে রাজবাড়ীর ইতিহাসকে ধুলোয় মেশানো হয়েছে। এ স্মৃতিচিহ্নটুকু মিলিয়ে যেতে দেয়া যায় না।
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সালেহীন পাপন লিখেছেন ‘আবেগ – ঐতিহ্য- সৌন্দর্য সবই ধারণ করে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবনটি । সংস্কার আর যথাযথ সংরক্ষণই একমাত্র দাবি।
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবা আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, মাউশির অনলাইন থেকে লাল ভবনটি ভেঙে ফেলার একটি চিঠি পেয়েছি। তবে চিঠি প্রসঙ্গে এখনও স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক কারও সাথেই কথা হয়নি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, পুরনো ভবনটি ভেঙে সেখানে নতুন বিল্ডিং হবে। নতুন বিল্ডিং করার জন্য যথেষ্ঠ জায়গা নেই। এজন্য লাল ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী দেড়শ বছরের পুরনো লাল ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্তে প্রতিবাদের ঝড় ॥ মানববন্ধন

প্রকাশের সময় : ০৮:৩০:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০১৯


জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজার নামে জেলা রাজবাড়ীতে ‘রাজবাড়ী’ এখন আর নেই। বহু আগেই ভেঙে ফেলা হয়েছে রাজবাড়ী। মুছে গেছে রাজবাড়ীর স্মৃতিচিহ্ন। অন্যসব পুরাকীর্তিগুলোও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো লাল ভবনটি। এই ভবনটিও ভেঙে নতুন ভবন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবনটি নিলামে বিক্রির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত কিছুতেই মানতে পারছেন না বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং জেলাবাসী। এই ভবনের সাথে অনেকেরই আবেগ অনুভূতি জড়িয়ে আছে বিধায় তারা এটিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। দেশ বিদেশ থেকে তারা আকুতি জানাচ্ছে ভবনটি রক্ষার। সোমবার ভবনটি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন পালিত হয়েছে।
জানা গেছে, ১৮৭১ সালে মাইনর স্কুল দিয়ে যেটির যাত্রা শুরু তা পূর্ণ রূপ পায় ১৮৯২ সালে। ১৮৯২ সালে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার বাণিবহ স্টেটের জমিদার গিরীজা শংকর মজুমদার ও অভয় শংকর মজুমদার রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা মৌজায় দি গোয়ালন্দ ইংলিশ হাই স্কুল নাম দিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে গোয়ালন্দ মডেল হাই স্কুল এবং সর্বশেষ রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। কালের পরিক্রমায় পুরনো ভবনটির পাশে ও সামনে আরও তিনটি ভবন নির্মিত হয়। যেকারণে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ইতিপূর্বেও ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানার পর বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা এটিকে রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করেন। ২০১৩ সালের জুন মাসে তারা রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেন। একই বছর তৎকালীন জেলা প্রশাসকের পত্রের প্রেক্ষিতে ভবনটি পরিদর্শন করে প্রতœতত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিদর্শক আতাউর রহমান জানিয়েছিলেন, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা করাই তাদের কাজ। প্রতœতত্ব বিভাগ এ ধরনের স্থাপনাÑ যেগুলি একশ বছরের পুরনো স্থাপনা আছে তা সংরক্ষণ করে থাকে। যে স্থাপনা ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে থাকেÑ তা সংরক্ষণ করে থাকে। রাজবাড়ীর যে স্কুলটি এটি অসাধারণ একটি স্থাপনা। এর সাথে অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তৎকালীন জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোলও ভবনটি সংরক্ষণে একমত পোষণ করে বলেছিলেন, প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ভবনটি প্রাচীন স্থাপনা যা পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের দাবি রাখে।
কিন্তু ভবনটি সংরক্ষণে এরপর আর কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি। গত ৯ মে তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক ২) মো. আমিনুল ইসলাম টুকু স্বাক্ষরিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর প্রেরিত চিঠিতে ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজবাড়ী এর একাডেমিক ভবন ১ এবং পুরাতন লাল ভবন অকেজো ঘোষণা ও নিলামে বিক্রির অনুমতি প্রদানের জন্য আবেদন করেছেন। এমতাবস্থায় সরকারি বিধি বিধান যথাযথ অনুসরণের শর্তে নির্দেশক্রমে অনুমতি প্রদান করা হলো। পরিত্যক্ত ভবন নিলামে বিক্রয় করে বিক্রয়লদ্ধ অর্থ ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা প্রদান করে জমাদানের কপি অধিদপ্তরে প্রেরণ করতে হবে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি একাডেমিক ভবন এবং একটি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। একাডেমিক ভবনÑ১ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় সেটিতে ক্লাস বন্ধ রয়েছে বেশ কিছুদিন। এই ভবনটির পাশেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী লাল ভবনটি। কর্তৃপক্ষ চাইছে একাডমিক ভবনÑ১ এর সাথে লাল ভবনটির জায়গা জুড়ে বহুতল ভবন স্থাপন করতে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় কেন তারা ঐতিহ্যবাহী লাল ভবনটি ভেঙে ফেলার আবেদন করেছিলেন এব্যাপারে কথা বলেননি কেউ।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রেজাউল করিম বলেন, এই ভবনটিতে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এটি রাজবাড়ী জেলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত আমরা কিছুতেই সমর্থন করিনা। অবশ্যই এটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
রাজবাড়ী সচেতন নাগরিক কমিটির অন্যতম সদস্য কবি খোকন মাহমুদ বলেন, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে ঐতিহ্যে কুঠারাঘাত। এটি রক্ষার্থে রাজবাড়ীবাসীকে আন্দোলনে নামতে হবে।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সাংবাদিক সৌমিত্র শীল বলেন, ১৮৯২ সালে এই প্রাচীন ভবন নির্মাণ হওয়ার পর থেকে এখনও ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে রয়েছে। এটি শুধু রাজবাড়ীর নয় বরং বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। সেকারণে এই ভবনটি রক্ষার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
রাজবাড়ীর বাসিন্দা ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ের ছাত্রী সেজুতি তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, স্কুল এর পাশ দিয়ে গেলে এই বিল্ডিং এর দিকে একবার হলেও চোখ ফেরাই। দারুণ লাগে। রাজবাড়ীর রাজবাড়ীটা অর্থাৎ রাজা সূর্য কুমারের বাড়িটা বিক্রি করে ভেঙে রাজবাড়ীর ইতিহাসকে ধুলোয় মেশানো হয়েছে। এ স্মৃতিচিহ্নটুকু মিলিয়ে যেতে দেয়া যায় না।
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সালেহীন পাপন লিখেছেন ‘আবেগ – ঐতিহ্য- সৌন্দর্য সবই ধারণ করে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবনটি । সংস্কার আর যথাযথ সংরক্ষণই একমাত্র দাবি।
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবা আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, মাউশির অনলাইন থেকে লাল ভবনটি ভেঙে ফেলার একটি চিঠি পেয়েছি। তবে চিঠি প্রসঙ্গে এখনও স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক কারও সাথেই কথা হয়নি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, পুরনো ভবনটি ভেঙে সেখানে নতুন বিল্ডিং হবে। নতুন বিল্ডিং করার জন্য যথেষ্ঠ জায়গা নেই। এজন্য লাল ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে।