পুত্রবধূর পরকীয়া দেখে ফেলায় প্রেমিক সোহেল গলা কেটে হত্যা করে শাশুড়িকে রাজবাড়ীর আদালতে পুত্রবধূ স্বপ্নার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী
- প্রকাশের সময় : ০২:৩১:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ১৬৩৮ জন সংবাদটি পড়েছেন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামে হাজেরা বেগম নামের এক নারীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনার দীর্ঘ এক মাস পর রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। পুত্রবধূ স্বপ্না আক্তারের পরকীয়া দেখে ফেলার কারণেই প্রেমিক সোহেল তাকে গলা কেটে হত্যা করে। গত শনিবার রাজবাড়ীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসান খায়রুল্লার আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারা জবানবন্দীতে এ কথা জানিয়েছে স্বপ্না আক্তার। ঘটনার সাথে জড়িত প্রেমিক সোহেল ও কবীরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোহেল একই ইউনিয়নের কোমরপাড়া গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে। কবীরের বাড়ি একই ইউনিয়নের আহ্লাদিপুর গ্রামে। নিহত হাজেরা বেগম বারবাকপুর গ্রামের তমিজউদ্দিনের স্ত্রী। গত ১৬ আগস্ট রাতে নিজ শোবার ঘরে খুন হন তিনি। ঘটনার পরদিন তমিজউদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তভার অর্পণ করা হয় রাজবাড়ী গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রাজবাড়ীর ডিবি ওসি বিএম কামাল হোসেন জানান, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কয়েকটি কারণ সামনে আনা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নিহতের পুত্রবধূ স্বপ্না আক্তারের পরকীয়া। পার্শ্ববর্তী গ্রামের সোহেলের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল স্বপ্না আক্তারের। তারা সোহেলকে আটক করতে গেলেই সটকে যেত। তখন তাদের মধ্যে সন্দেহ আরও দানা বাঁধে। অবশেষে বহু চেষ্টার পর গত ৭ সেপ্টেম্বর মাদারীপুর থেকে সোহেলকে আটক করা হয়। তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে থাকাবস্থায় সোহেল হাজেরা বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করে। এরপর তার দেখানো মতে হাজেরা বেগমের বাড়ির পাশে একটি ডোবা থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ১৭ ইঞ্চি লম্বা একটি ছোড়া উদ্ধার করা হয়। এরপর স্বপ্না আক্তারকে তার বাড়ি থেকে আটক করে আনা হয়। স্বপ্না প্রথমে ঘটনার সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করলেও পুলিশি জেরার এক পর্যায়ে তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
আদালতে স্বপ্না আক্তার ১৬৪ ধারা জবানবন্দীতে বলেছে, আনুমানিক পাঁচ ছয় মাস আগে আমার চার বছরের ছেলের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আলীপুর ্ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সোহেলের সাথে পরিচয় হয়। ওই সময় চেয়ারম্যান না থাকায় সোহেল আমাকে বলে, জন্ম নিবন্ধন কমপ্লিট করে সে পৌছে দেবে। সেদিনই সন্ধ্যায় সোহেল জন্ম নিবন্ধন বাড়ি পৌছে দেয়। এরপর থেকে সোহেল ইমোতে ভিডিও ও অডিও কল দিত। এক পর্যায়ে প্রেমের প্রস্তাব দিলে রাজী হই। ঘটনার দিন রাতের খাওয়া শেষ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমার ছেলে ও শাশুড়ি ঘুমিয়ে পড়েন। দরজা ছিল চেয়ার দিয়ে চাপানো। লাইট জ্বালানেই ছিল। পাশের ঘরটি ফাঁকা থাকে। অন্য ঘরে থাকেন শ্বশুর। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোহেল দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে লাইট নিভিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় ফেলে দেয়। একপর্যায়ে আমার শাশুড়ি জেগে ওঠে। তার কাছে থাকা চার্জার লাইট জ্বালিয়ে সোহেলকে দেখে চিনে ফেলে এবং বলেন ‘তুই এত রাতে এখানে কেন’। ঠিক ওই সময় কবির ভেতরে ঢোকে। তখন সোহেল কবীরকে বলে, ওর শাশুড়ি দেখে ফেলেছে। সকালে কীনা কী হয়। শেষ করে দেই। সোহেল কবীরের কাছ থেকে ছোড়া নিয়ে শাশুড়িকে কোপ মারে। সেটি শাশুড়ির বাম হাতে লাগে। তারপর সোহেল শাশুড়ির বুকের উপর চেপে বসে। কবিরকে পা এবং আমাকে হাত ধরতে বলে। প্রথমে আমি রাজী হইনি। আমাকে ভয় দেখালে রাজী হই। এরপর সোহেল শাশুড়িকে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এরপর সোহেল আমাকে বলে; তোমাকে যাতে কেউ সন্দেহ না করে সে ব্যবস্থা করছি। সে আমার দুই হাত ও কাঁধে ছুরি দিয়ে পোচ দেয়। ছুরিতে লেগে থাকা রক্ত আমার ছেলের প্যান্ট ও আমার ওড়না দিয়ে মুছে যাবার সময় নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমি চিৎকার করে উঠি। আমি কিছু দেখিনি বলে সবাইকে জানাই।
এদিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের আটদাপুনিয়া গ্রামে গৃহবধূ লিমা আক্তার হত্যাকান্ডের রহস্যও উন্মোচিত হয়েছে। গত ৭ আগস্ট রাতে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। তাকেও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল। সীমানা পিলার নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি সাংবাদিকদের জানান, লিমার স্বামী মিজানুর রহমান সীমানা পিলার জমা রেখে কাজে চলে গিয়েছিলো। আর তাদের গ্রুপের লোকজন মিজানের অবর্তমানে লিমার কাছ থেকে সীমানা পিলার হাতিয়ে নিতেই এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার পর লিমাকে জবাই করা ছুরিও উদ্ধার করা হয়েছে।