Dhaka ০২:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ী রেলস্টেশনের বেহাল দশা ॥ সংষ্কার নেই দীর্ঘদিন ॥ বৃষ্টি হলেই যাত্রীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৩৭:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৭
  • / ১৬০১ জন সংবাদটি পড়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন সংষ্কার না করায় বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে রাজবাড়ী রেলস্টেশন ও স্টেশনে স্থাপিত ১০টি অফিসের। ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। বহুদিনের পুরনো বিল্ডিং হওয়াতে রয়েছে দুর্ঘটনা আশঙ্কাও। প্লাট ফর্মের টিনের চাল কয়েক জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় বৃষ্টিতে যাত্রীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। প্লাটফর্ম নীচু হওয়ায় ট্রেন থেকে ওঠানামায়ও যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে  চললেও  রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শুধু সংষ্কারের আশ্বাসই দিয়ে গেছে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে ১৮৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজবাড়ী রেলস্টেশন। প্রতিদিন রাজবাড়ী থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, ফরিদপুর, ভাটিয়াপাড়া, খুলনা, পোড়াদহ ও রাজশাহী অভিমুখে ১০ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। অপেক্ষাকৃত সুলভ ও যোগাযোগের জন্য নিরাপদ হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী চলাচল করে এসব রুটে। বর্তমানে রাজবাড়ী স্টেশনটিতে স্টেশন মাস্টার অফিস, সহকারী স্টেশন মাস্টার অফিস, বুকিং অফিস, ক্যাশ অফিস, ট্রেন্স অফিস, পিসি অফিস, টিটিই অফিসসহ রেল সংশ্লিষ্ট মোট ১০টি অফিস ছাড়াও যাত্রীদের বিশ্রামাগার রয়েছে। এসব অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রক্ষিত থাকে সম সময়। এ স্টেশনে রয়েছে তিনটি প্লাটফর্ম। এর মধ্যে ১ নং প্লাটফর্মে ট্রেনগুলি বেশির ভাগ সময় দাঁড়ায়। অথচ এই প্লাটফর্মটি খুবই নীচু। যেকারণে যাত্রীদের ওঠানামায় সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের একটু বেশিই কষ্ট হয়। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই স্টেশনটির সর্বশেষ সংষ্কার হয়েছে সাত বছর আগে। কিছুদিন আগে যাত্রীদের বিশ্রামাগারের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে এক যাত্রী আহত হয়েছিল।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১ নং প্লাটফর্মে টিনের চালের চার/পাঁচ স্থানে বড় বড় ছিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে সেখান দিয়ে পানি ঝর্ণা ধারার মতো গড়িয়ে পড়ছে। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা পোহাচ্ছে ভোগান্তি। কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করে জানান, ট্রেন যখন প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ায় তখন হুড়োহুড়ি করে ট্রেনে উঠতে গিয়ে যাত্রীরা ভিজে যায় বৃষ্টির পানিতে।
রাজবাড়ী রেলস্টেশনের বুকিং সহকারী নাজমুল হাসান জানান, মুষলধারে বৃষ্টি হলে বুকিং অফিসে পানি জমে যায়। এ অফিসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রয়েছে। সেগুলি ভিজে যায়। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা  করতে কাগজপত্রগুলি এখন পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
এদিকে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের তিনটির মধ্যে ১  নং প্লাটফর্মটি দেড় ফুট, ২ ও ৩ নং প্লাটফর্মটি তিন ফুট উঁচু।  বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া ট্রেনগুলি ১ নং প্লাটফর্মেই দাঁড়ায়। অথচ ্এই প্লাটফর্মটিই নীচু।  ট্রেনে নিয়মিত যতায়াতকারী রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা বিলকিস জানান, প্লাটফর্মটি নীচু হওয়াতে তাদের প্রায়শই সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় যাত্রীরা ট্রেন থেকে পড়েও যায়। প্লাটফর্মটি উঁচু করা খুবই জরুরী।
রাজবাড়ী রেলস্টেশন মাস্টার কামরুজ্জামান জানান, রাজবাড়ী রেলস্টেশনের যে অবস্থা তাতে যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তার নিজের অফিস দিয়েও পানি চুইয়ে পড়ে। তিনি সার্বিক দুরাবস্থার কথা জানিয়ে গত ছয় মাস ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্রমাগত লিখে চলেছেন। সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ  তাকে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে; স্টেশনটি পুনঃ সংষ্কার করা হবে।
রাজবাড়ী রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) মোহাম্মদ সুলতান আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১ নং প্লাটফর্ম উঁচু, স্টেশনের বিল্ডিংয়ের অর্ধেকাংশ পুনঃ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজের নকশা পাশ হয়েছে। বিষয়টি এখন টেন্ডারের প্রক্রিয়াধীন।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ী রেলস্টেশনের বেহাল দশা ॥ সংষ্কার নেই দীর্ঘদিন ॥ বৃষ্টি হলেই যাত্রীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি

প্রকাশের সময় : ০৭:৩৭:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন সংষ্কার না করায় বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে রাজবাড়ী রেলস্টেশন ও স্টেশনে স্থাপিত ১০টি অফিসের। ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। বহুদিনের পুরনো বিল্ডিং হওয়াতে রয়েছে দুর্ঘটনা আশঙ্কাও। প্লাট ফর্মের টিনের চাল কয়েক জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় বৃষ্টিতে যাত্রীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। প্লাটফর্ম নীচু হওয়ায় ট্রেন থেকে ওঠানামায়ও যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে  চললেও  রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শুধু সংষ্কারের আশ্বাসই দিয়ে গেছে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে ১৮৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজবাড়ী রেলস্টেশন। প্রতিদিন রাজবাড়ী থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, ফরিদপুর, ভাটিয়াপাড়া, খুলনা, পোড়াদহ ও রাজশাহী অভিমুখে ১০ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। অপেক্ষাকৃত সুলভ ও যোগাযোগের জন্য নিরাপদ হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী চলাচল করে এসব রুটে। বর্তমানে রাজবাড়ী স্টেশনটিতে স্টেশন মাস্টার অফিস, সহকারী স্টেশন মাস্টার অফিস, বুকিং অফিস, ক্যাশ অফিস, ট্রেন্স অফিস, পিসি অফিস, টিটিই অফিসসহ রেল সংশ্লিষ্ট মোট ১০টি অফিস ছাড়াও যাত্রীদের বিশ্রামাগার রয়েছে। এসব অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রক্ষিত থাকে সম সময়। এ স্টেশনে রয়েছে তিনটি প্লাটফর্ম। এর মধ্যে ১ নং প্লাটফর্মে ট্রেনগুলি বেশির ভাগ সময় দাঁড়ায়। অথচ এই প্লাটফর্মটি খুবই নীচু। যেকারণে যাত্রীদের ওঠানামায় সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের একটু বেশিই কষ্ট হয়। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই স্টেশনটির সর্বশেষ সংষ্কার হয়েছে সাত বছর আগে। কিছুদিন আগে যাত্রীদের বিশ্রামাগারের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে এক যাত্রী আহত হয়েছিল।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১ নং প্লাটফর্মে টিনের চালের চার/পাঁচ স্থানে বড় বড় ছিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে সেখান দিয়ে পানি ঝর্ণা ধারার মতো গড়িয়ে পড়ছে। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা পোহাচ্ছে ভোগান্তি। কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করে জানান, ট্রেন যখন প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ায় তখন হুড়োহুড়ি করে ট্রেনে উঠতে গিয়ে যাত্রীরা ভিজে যায় বৃষ্টির পানিতে।
রাজবাড়ী রেলস্টেশনের বুকিং সহকারী নাজমুল হাসান জানান, মুষলধারে বৃষ্টি হলে বুকিং অফিসে পানি জমে যায়। এ অফিসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রয়েছে। সেগুলি ভিজে যায়। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা  করতে কাগজপত্রগুলি এখন পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
এদিকে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের তিনটির মধ্যে ১  নং প্লাটফর্মটি দেড় ফুট, ২ ও ৩ নং প্লাটফর্মটি তিন ফুট উঁচু।  বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া ট্রেনগুলি ১ নং প্লাটফর্মেই দাঁড়ায়। অথচ ্এই প্লাটফর্মটিই নীচু।  ট্রেনে নিয়মিত যতায়াতকারী রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা বিলকিস জানান, প্লাটফর্মটি নীচু হওয়াতে তাদের প্রায়শই সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় যাত্রীরা ট্রেন থেকে পড়েও যায়। প্লাটফর্মটি উঁচু করা খুবই জরুরী।
রাজবাড়ী রেলস্টেশন মাস্টার কামরুজ্জামান জানান, রাজবাড়ী রেলস্টেশনের যে অবস্থা তাতে যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তার নিজের অফিস দিয়েও পানি চুইয়ে পড়ে। তিনি সার্বিক দুরাবস্থার কথা জানিয়ে গত ছয় মাস ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্রমাগত লিখে চলেছেন। সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ  তাকে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে; স্টেশনটি পুনঃ সংষ্কার করা হবে।
রাজবাড়ী রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) মোহাম্মদ সুলতান আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১ নং প্লাটফর্ম উঁচু, স্টেশনের বিল্ডিংয়ের অর্ধেকাংশ পুনঃ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজের নকশা পাশ হয়েছে। বিষয়টি এখন টেন্ডারের প্রক্রিয়াধীন।