Dhaka ০৬:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাংশায় এমপি’র ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের সমর্থককে ককটেল দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ ॥ ন্যায় বিচারের আশ^াস পুলিশ সুপারের

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৫৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জুলাই ২০১৭
  • / ৩০০০ জন সংবাদটি পড়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজবাড়ীর পাংশায় সবুজ নামের এক যুবককে ষড়ন্ত্রমূলকভাবে ককটেল দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ অভিযোগ রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের ছেলে মিতুল হাকিমের বিরুদ্ধে। রোববার রাতে এমপি জিল্লুল হাকিমের বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। সবুজ পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের বাগদুলি গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে। তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানা টিপুর সমর্থক। ঢাকার তীতুমীর কলেজে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। সবুজের বাবা সোহরাব হোসেন মৌরাট ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। সবুজের পরিবার ও সঙ্গীদের অভিযোগ টিপুর সমর্থক হওয়ার কারণে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এদিকে বিষয়টি এমপির বাড়ির ঘটনা হলেও এমপি জিল্লুল হাকিম এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে ন্যায় বিচারের আশ^াস দিয়েছেন।
এদিকে রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সবুজের ফেসবুক আইডি থেকে কে বা কারা কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হকের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অনাকাক্সিক্ষতভাবে দুটি মেসেজ পাঠানো হয়। নুরে আলম সি;্দকিী হক বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে ফাঁসানোর জন্য ওইসব মেসেজ পাঠানো হয়েছে।
সবুজের বন্ধু জিয়া জানান, হাবাসপুরে তাদের বন্ধু মিজানের মা মারা যাওয়ার খবর শুনে সবুজসহ চারজন দুটি মোটরসাইকেলে করে ওই বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় মিতুল হাকিমের গাড়ির বহর থেকে তিন চারটি মোটরসাইকেল সবুজের মোটরসাইকেলের বেরিকেড দেয়। ওই মোটরসাইকেলে থাকা যুবকরা নাম জানতে চাইলে সবুজ তার নাম বলে। ওই যুবকরা তখন সবুজকে বলে ‘মিতুল ভাই’ ডাকছে। সবুজ পাল্টা জবাব দেয়- আমি যাবো কেন? কিছুক্ষণ পরেই কালো রংয়ের একটি মাইক্রোবাস এসে সবুজকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সবুজের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাতে কোথায় আছে তাও তারা জানতেন না।
সবুজের বাবা সোহরাব হোসেন জানান, তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তার ছেলে সবুজ ঢাকার তীতুমীর কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে বাড়িতে আছে এক বছর হলো। ঢাকায় থাকতেই সে সোহেল রানা টিপুর সাথে চলাফেরা করতো। টিপুকে বড় ভাই হিসেবেই জানতো সবুজ। তিনি বলেন, আমরা এমপি জিল্লুল হাকিমের অনুসারী। আমার ছেলে টিপুর সমর্থক হওয়ায় এর আগেও মিতুল হাকিমের লোকজন আমাকে বেইজ্জতী করেছিল। রোববার আমার ছেলেকে ছাত্রলীগের ছেলেরা মারধর করে এমপির বাড়িতে আটকে রেখেছে শুনে রাত ১০টার দিকে এমপির বাড়িতে যাই। এমপি আমাকে বলেছিলেন; দেখি কী করা যায়। এর কিছুক্ষণ পরে ওসিকে ডেকে আমার ছেলেকে ধরিয়ে দেন। আমার সামনে দিয়ে ছেলেকে পুলিশ বিনা কারণে ধরে নিয়ে গেল। পরে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে সবুজকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে সেখানে দেখতে গিয়েছিলাম।
রোববার রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের কাছে মোবাইল ফোনে এব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, আমি এব্যাপারে এখনও কিছু জানিনা। এরকম ঘটনা তো ঘটার কথা না। উল্টো কে অভিযোগ করেছে তা জানতে চান।
এব্যাপারে জানতে চাইলে পাংশা সার্কেলে সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল আজিম জানান, এমপির ছেলে মিতুল হাকিমের গাড়ি বহরে ককটেল নিয়ে ঢোকার কারণে সবুজকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, রোববার রাত পৌনে আটটার দিকে হাবাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে মিতুল হাকিম সমবেদনা জানাতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে সবুজকে সন্দেহ করে তাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। সবুজ মোটরসাইকেল নিয়ে এমপির বাড়ির কাছে পুকুর পাড়ে পড়ে যায়। এরপর এমপি’র বাড়ির ভেতর ঢুকে মিতুল হাকিমকে বলে ‘আমাকে বাঁচান’। এরপর সবুজের দেহ তল্লাশী করে একটি ককটেল পাওয়া যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ এমপি জিল্লুল হাকিমের বাড়িতে গিয়ে সবুজকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পাংশা থানার ওসি মোফাজ্জেল হোসেন জানান, রাত সোয়া ১১ টার দিকে সবুজকে এমপির বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তার কাছে একটি ককটেল পাওয়া গেছে। এব্যাপারে একটি মামলা হয়েছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম এব্যাপারে বলেন, রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাটি শুনেছি। আমি এখন রাজবাড়ীর বাইরে আছি। একজনের বিরুদ্ধে মামলা হলেই সে দোষী হয়ে যায়না। এ বিষয়ে উচ্চ তদন্ত হবে। যদি নির্দোষ হয় তবে অবশ্যই সে মুক্তি পাবে। কারও প্রতি অবিচার হোক এটা আমি কিছুতেই চাইনা। এ ঘটনায় সে ন্যায় বিচার পাবে।
এব্যাপারে এমপি জিল্লুল হাকিমের ছেলে মিতুল হাকিম বলেন, বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে প্রকৃত ঘটনা কী।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

পাংশায় এমপি’র ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের সমর্থককে ককটেল দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ ॥ ন্যায় বিচারের আশ^াস পুলিশ সুপারের

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জুলাই ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজবাড়ীর পাংশায় সবুজ নামের এক যুবককে ষড়ন্ত্রমূলকভাবে ককটেল দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ অভিযোগ রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের ছেলে মিতুল হাকিমের বিরুদ্ধে। রোববার রাতে এমপি জিল্লুল হাকিমের বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। সবুজ পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের বাগদুলি গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে। তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানা টিপুর সমর্থক। ঢাকার তীতুমীর কলেজে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। সবুজের বাবা সোহরাব হোসেন মৌরাট ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। সবুজের পরিবার ও সঙ্গীদের অভিযোগ টিপুর সমর্থক হওয়ার কারণে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এদিকে বিষয়টি এমপির বাড়ির ঘটনা হলেও এমপি জিল্লুল হাকিম এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে ন্যায় বিচারের আশ^াস দিয়েছেন।
এদিকে রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সবুজের ফেসবুক আইডি থেকে কে বা কারা কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হকের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অনাকাক্সিক্ষতভাবে দুটি মেসেজ পাঠানো হয়। নুরে আলম সি;্দকিী হক বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে ফাঁসানোর জন্য ওইসব মেসেজ পাঠানো হয়েছে।
সবুজের বন্ধু জিয়া জানান, হাবাসপুরে তাদের বন্ধু মিজানের মা মারা যাওয়ার খবর শুনে সবুজসহ চারজন দুটি মোটরসাইকেলে করে ওই বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় মিতুল হাকিমের গাড়ির বহর থেকে তিন চারটি মোটরসাইকেল সবুজের মোটরসাইকেলের বেরিকেড দেয়। ওই মোটরসাইকেলে থাকা যুবকরা নাম জানতে চাইলে সবুজ তার নাম বলে। ওই যুবকরা তখন সবুজকে বলে ‘মিতুল ভাই’ ডাকছে। সবুজ পাল্টা জবাব দেয়- আমি যাবো কেন? কিছুক্ষণ পরেই কালো রংয়ের একটি মাইক্রোবাস এসে সবুজকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সবুজের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাতে কোথায় আছে তাও তারা জানতেন না।
সবুজের বাবা সোহরাব হোসেন জানান, তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তার ছেলে সবুজ ঢাকার তীতুমীর কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে বাড়িতে আছে এক বছর হলো। ঢাকায় থাকতেই সে সোহেল রানা টিপুর সাথে চলাফেরা করতো। টিপুকে বড় ভাই হিসেবেই জানতো সবুজ। তিনি বলেন, আমরা এমপি জিল্লুল হাকিমের অনুসারী। আমার ছেলে টিপুর সমর্থক হওয়ায় এর আগেও মিতুল হাকিমের লোকজন আমাকে বেইজ্জতী করেছিল। রোববার আমার ছেলেকে ছাত্রলীগের ছেলেরা মারধর করে এমপির বাড়িতে আটকে রেখেছে শুনে রাত ১০টার দিকে এমপির বাড়িতে যাই। এমপি আমাকে বলেছিলেন; দেখি কী করা যায়। এর কিছুক্ষণ পরে ওসিকে ডেকে আমার ছেলেকে ধরিয়ে দেন। আমার সামনে দিয়ে ছেলেকে পুলিশ বিনা কারণে ধরে নিয়ে গেল। পরে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে সবুজকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে সেখানে দেখতে গিয়েছিলাম।
রোববার রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের কাছে মোবাইল ফোনে এব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, আমি এব্যাপারে এখনও কিছু জানিনা। এরকম ঘটনা তো ঘটার কথা না। উল্টো কে অভিযোগ করেছে তা জানতে চান।
এব্যাপারে জানতে চাইলে পাংশা সার্কেলে সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল আজিম জানান, এমপির ছেলে মিতুল হাকিমের গাড়ি বহরে ককটেল নিয়ে ঢোকার কারণে সবুজকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, রোববার রাত পৌনে আটটার দিকে হাবাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে মিতুল হাকিম সমবেদনা জানাতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে সবুজকে সন্দেহ করে তাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। সবুজ মোটরসাইকেল নিয়ে এমপির বাড়ির কাছে পুকুর পাড়ে পড়ে যায়। এরপর এমপি’র বাড়ির ভেতর ঢুকে মিতুল হাকিমকে বলে ‘আমাকে বাঁচান’। এরপর সবুজের দেহ তল্লাশী করে একটি ককটেল পাওয়া যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ এমপি জিল্লুল হাকিমের বাড়িতে গিয়ে সবুজকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পাংশা থানার ওসি মোফাজ্জেল হোসেন জানান, রাত সোয়া ১১ টার দিকে সবুজকে এমপির বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তার কাছে একটি ককটেল পাওয়া গেছে। এব্যাপারে একটি মামলা হয়েছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম এব্যাপারে বলেন, রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাটি শুনেছি। আমি এখন রাজবাড়ীর বাইরে আছি। একজনের বিরুদ্ধে মামলা হলেই সে দোষী হয়ে যায়না। এ বিষয়ে উচ্চ তদন্ত হবে। যদি নির্দোষ হয় তবে অবশ্যই সে মুক্তি পাবে। কারও প্রতি অবিচার হোক এটা আমি কিছুতেই চাইনা। এ ঘটনায় সে ন্যায় বিচার পাবে।
এব্যাপারে এমপি জিল্লুল হাকিমের ছেলে মিতুল হাকিম বলেন, বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে প্রকৃত ঘটনা কী।